তৈরি পোশাকশিল্পে অস্থিরতার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা


১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার : দেশবাসী যখন সংস্কারের অপেক্ষায়, তখন একদল ষড়যন্ত্রকারী নানা ছুঁতায় রাস্তায় নেমে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যই হচ্ছে পোশাকশিল্প ধ্বংস করা। পরিস্থিতি কারা উত্তপ্ত করছে, তা মালিক-বিনিয়োগকারীরা জানেন-বোঝেন। সরকারেরও না বোঝার কারণ নেই। দেশের রফতানি আয়ের বেশিরভাগই আসে পোশাক খাত থেকে। আর সেই পথ রুদ্ধ করতেই নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে গণআন্দোলনে বিতাড়িতরা। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হচ্ছে না। সরকার এক দারুণ উদ্যোগ নিয়েছে। যারা প্রকৃত অর্থে পাওনা টাকার জন্য আন্দোলন করছে তাদের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি অশান্ত করতে বসে নেই নেপথ্যের অপশক্তি, তারা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র সফলে তৎপর হতে পারে। এজন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক টানা ৬০ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর ১১ নভেম্বর রাতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। ফলে ওই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং সার্বিক পরিস্থিতিও একেবারে শান্ত। জানা গেছে, সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়ে গত ১১ নভেম্বর বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী রোববার টিএনজেড কারখানার শ্রমিকদের ৬ কোটি টাকা প্রথম কিস্তিতে বেতন পরিশোধ করা হবে। পরে ১০ কোটি টাকা দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি দিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অবশিষ্ট বকেয়া পরিশোধ হবে। পরে মালিকপক্ষ এ টাকা সরকারকে পরিশোধ করবে। এ সিদ্ধান্ত মেনে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা। এরপর ১১ নভেম্বর সোমবার রাত সোয়া ১০টার পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল থেকেও মহাসড়ক সচল আছে। অন্যদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যেসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেসব কারখানাও ১২ নভেম্বর সকাল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ায় হঠাৎ করে শুরু হওয়া এ শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জং এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের অনুসারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তারাও আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর ছাত্র হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় একের পর এক মামলায় তাদের আসামি করা হয়। তবে সাইফুল ও মুরাদ জং আত্মগোপনে থাকলেও তাদের অনুসারীরা বিভিন্ন পরিচয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও পোশাকশিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন কারখানায় মুরাদ জং-এর অনুসারী ইব্রাহিম, স্থানীয় আব্দুল হাই, শহিদুলসহ তাদের আরও কয়েকজন ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে। মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে কারখানার সামনে আতঙ্ক সৃষ্টি শ্রমিক উসকানি দিচ্ছেÑ এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্থানীয় নেতা যারা ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত এবং শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজি করত, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার পতনের পর নতুন চাঁদাবাজরা। শিল্প এলাকায় ঝুট ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেও শ্রমিকদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকদের উসকে দিয়ে, যে আন্দোলন হচ্ছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকরাও কিছু দাবি আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করছে।
গত কিছুদিন থেকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কম থাকলেও ডলার সংকটের সময় এ খাতই বৈদেশিক মুদ্রা মজুদে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। পরিস্থিতি অশান্ত করতে সম্প্রতিক সময়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল ও ডিওএইচএস পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে কয়েকশ’ পোশাক শ্রমিক। বিক্ষোভের সময় তারা যৌথবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরও করে। এসব কারণে একদিকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে অনেকের কর্মসংস্থানও হুমকিতে রয়েছে। হতাশার মধ্যে রয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।