ফ্যাসিবাদ রুখতে রাজপথে সক্রিয় ছাত্র-জনতা
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০
স্টাফ রিপোর্টার : ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ রাজপথে নেতাকর্মীদের জড়ো করতে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর তিন মাস পর শহীদ নূর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে ঢাকায় একটি কর্মসূচির ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। দলটি নিজেদের ফেসবুক পোস্টে নেতাকর্মীরদের এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু ছাত্র-জনতা সজাগ থাকায় তাতে কোনো লাভ হয়নি। মাঠে নামার সাহস দেখাতে পারেনি পতিত স্বৈরাচারের অনুসারীরা।
১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। দলীয় ফেসবুক পেজে এ উপলক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে নামার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু মাঠে কাউকেই দেখা যায়নি। ১০ নভেম্বর রাজপথে নামার আগে ৯ নভেম্বর রাতে সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর জিরো পয়েন্ট দখলে নিয়ে নিয়েছে ছাত্র-জনতা। দিনভর সেখানে ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী নানা অপকর্ম তুলে ধরে বক্তৃতা দেন। ‘হুঁশিয়ারি দেন ফ্যাসিবাদের আস্তানা, এই বাংলায় থাকবে না’ ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে সেখানে যান বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ও রাজনীতি সম্পর্কে গত ৯ নভেম্বর এক সভায় অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আজ ফ্যাসিস্টদের প্রতি অনেকে দরদ ও মায়া দেখাচ্ছে। অনেকে বলছে, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনীতি করার অধিকার ও ভোটাধিকার দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক দল হয়, তবে গত ১৬ বছর কেন এ দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার দেয়নি? তারা রাজনৈতিক দল হয়ে থাকলে কেন আমাদের দুই হাজারের বেশি ভাই-বোনকে হত্যা করেছে? কেন গত ১৬ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে? সন্ত্রাসী এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারলে আমরা বুঝে নেব আপনারাও রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়েন না। সন্ত্রাসীরা আজীবনের জন্য সন্ত্রাসী। কোনো সন্ত্রাসী ভবিষ্যতে এ দেশের মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রী হতে পারবে না। সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক দল কখনো এক হতে পারে না।’
দলীয় কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসের পরপরই নিজেদের ফেসবুক পেজে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, এ ফ্যাসিবাদী দলের বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গের কোনো চেষ্টাকে তারা বরদাশত করা হবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দুপুর ১টার দিকে ওই জিরো পয়েন্টেই ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ গণজমায়েত করে বিক্ষাভ মিছিল করেন তারা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩ দফা দাবিতে একই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে হেনস্তার প্রতিবাদ ও ১৫ বছরে বিভিন্ন হামলায় জড়িতদের বিচারসহ ৩ দফা দাবিতে গত ১০ নভেম্বর রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে শেষ হয়।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রাজধানীর গুলিস্তানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। ১০ নভেম্বর রোববার দুপুর ১২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে প্রধান সড়কের সামনে স্থাপিত গণপ্রতিরোধ মঞ্চে তাদের গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু হয়।
গণজমায়েত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচির শুরুতেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগকে উৎখাত করার জন্য সবার মাঠে নামার প্রয়োজন নেই। শুধু ঢাকা কলেজের ছাত্ররাই যথেষ্ট।
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান ১০ নভেম্বর রোববার শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি এ পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগের নিরীহ ও সাধারণ নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়েছে বলেছেন, আপনারা আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে দুধ দিয়ে গোসল করে নিন। শেখ হাসিনা আপনাদের কথা ভাবেননি। সে তার পরিবার ছাড়া কাউকে আপন মনে করে না।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে প্রতিবাদ জানানোর সময় ১০ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন। সেই থেকে দিবসটিকে ‘গণতন্ত্রমুক্ত করার দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ বছরও ১০ নভেম্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।