জনগণের আস্থার প্রতীক জামায়াতে ইসলামী : থামবে না এ কাফেলা
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০
॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
দুর্বলচিত্তের বাঙালির প্রবাদ, ‘অতি বড় হইও না ঝড়ে ভাঙবে মাথা, অতি ছোট হইও না ছাগলে খাবে পাতা।’ অন্যদিকে বিশ্বকে যারা শাসন করছে, তারা বিশ্বাস করেন, When your ambition is greater than your fear, your life will get bigger than your dream. অর্থাৎ ‘যখন আপনার উচ্চাকাক্সক্ষা আপনার ভয়ের চেয়ে বড় হবে, তখনই আপনার জীবন আপনার স্বপ্নের চেয়ে বড় হবে।’ যারা ভয়কে জয় করে বুকে বিশাল স্বপ্ন নিয়ে যোগ্যতা, সততা আর শানিত জ্ঞান ও মেধার অস্ত্র সম্বল করে সামনে পা বাড়ায়, মহান আল্লাহ তাদের চলার পথ সহজ করে দেন। বিজয় তাদের পদচুম্বন করে। ৩৬ জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান এ সত্যেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এদেশের নতুন প্রজন্ম বড় হওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে মাথা উঁচু করে সাহসভরা বুকে দাঁড়ানোর ত্যাগ-তিতিক্ষার নজির উপস্থাপন করেছে। সেই ত্যাগ ও সাহসের পুরস্কার ফ্যাসিবাদমুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ। কিন্তু সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। তাদের দিকে ধেয়ে আসছে ঝড়-ঝঞ্ঝা। সেই ঝড় সামাল দেয়ার মতো শক্তি অর্জন করতে তাদের সহযোগিতা করা বিশ্বাসী চেতনার দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।
দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী আদর্শের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দিকে আশাভরা বুকে তাকিয়ে আছে গোটা জাতি। সাথে সাথে শত্রু-মিত্ররা শুরু করেছে প্রচার এবং প্রোপাগান্ডা। দীর্ঘ দেড় দশক নির্যাতন-নিষ্পেষণের স্টিমরোলারের মোকাবিলা করতে হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে। দেশ-বিদেশের মিডিয়া তাদের বিরুদ্ধে সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদে একটি অক্ষর লেখেনি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে অনেকটা বাধ্য হয়েই মিডিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রতিটি কর্মসূচির সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। কিন্তু এ অবস্থা অনেকের মনে জন্ম দিচ্ছে সন্দেহ ও সংশয়। তারা ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক দিক তুলে ধরে প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, ‘জামায়াতে ইসলামীর এত বেশি বেশি… করা ঠিক হচ্ছে না।’ সত্যি কি জামায়াতে ইসলামী বেশি বেশি তাদের কর্মসূচি পালন করছে?
এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘না, তারা বেশি বেশি কর্মসূচি পালন করছে না। রুটিন কর্মসূচিই পালন করছে।’ বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তাদের এসব কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। কিন্তু সংগত কারণেই তা করা হতো একটু কৌশল অবলম্বন করে। অধিকাংশ মিটিংই হতো অনলাইনে, নয়তো সীমিত পরিসরে। এখন মুক্ত পরিবেশের কারণে একটু বড় পরিসরে অর্থাৎ কর্মসূচির মেজাজ, চাহিদা ও দাবি আদায় করে পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই ব্যাখ্যা পর্যবেক্ষদের কাছে নেই। কিন্তু সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের বক্তব্যে কারণটি কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়। তিনি বলেছেন, ‘এদেশের মানুষ জামায়াতকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন সৃষ্টি হয়েছে। কোনো শক্তি জামায়াতকে আর দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করা প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। তারা তাদের সাধ্য-সামর্থ্য অনুসারে মাঠে তৎপর থাকার চেষ্টা করে। এটাই স্বাভাবিক। জনসমর্থন বাড়লে প্রতিটি কর্মসূচিতেই তার প্রভাব পড়বে। যেমন মানুষ গাছ রোপণ করে তার ফল অথবা কাঠ পাওয়ার আশায়। অবশ্য ঘরের শোভা বাড়ানোর জন্য অনেকে বনসাই করে রাখেন অনেক বড় গাছকে। এটি একটি বিলাসিতা। অনেকটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, স্বাভাবিক বিকাশরুদ্ধ করা অবশ্যই কোনো ভালো কাজ নয়। এমন বিলাসিতার মাধ্যমে কোনো এক ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা পরিবারের মানসিক মনোরঞ্জন হতে পারে। এর মধ্যে দেশ, জনগণ ও বিশ্বমানবতার কোনো কল্যাণ নেই। তাই জামায়াতে ইসলামীর প্রতি জনগণের যে সমর্থন বাড়ছে, তা রুদ্ধ করার চেষ্টা করা কি কোনো বুদ্ধিদীপ্ত কাজ? অবশ্যই না? কারণ স্বাভাবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে তা সম্ভবও হবে না। বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, আপনার সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে তার জামাকাপড়গুলো ছোট হবে, তখন আপনি কি করবেন? জামাকাপড়ের মাপে সন্তানের বৃদ্ধি রোধ করার চেষ্টা করবেন, নাকি তার মাপের উপযোগী করে পোশাক তৈরি করে দেবেন। অবশ্যই দ্বিতীয় কাজটিই করবেন এবং মনে মনে খুশি হবেন, সন্তান বড় হচ্ছে এ কথা ভেবে। ঠিক তেমনিভাবে একটি রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের প্রতি জনসমর্থন বাড়লে, সাথে সাথে বিরোধিতাও বাড়বে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের ষড়যন্ত্র বাড়বে। বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলার পথ নিশ্চয়ই কাজ বন্ধ করে দেয়া নয়। বরং বিরোধিতা মোকাবিলা করার মতো কর্মকৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে বহমান নদীকে বাঁধ দিয়ে আটকে দিলে যেমন অবরুদ্ধ হয়ে হাজামজা খালে পরিণত হয়, সেই রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের অবস্থাও তেমন হবে। তাই প্রতিযোগিতায় নামতেই হবে। পাল্লা দিয়ে দৌড়াতেই হবে। থামলে চলবে না।
থামবে না এ কাফেলা
দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর দেশে রাজনীতির একটি নতুন গতিপথ তৈরি হয়েছে। সেই গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হলে আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবেÑ এ নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। তবে সেই ফিরে আসা হয়তো পুরনো নেতৃত্ব ও নামে নয়, আসবে নতুন পরিচয়ে। সেই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে বহন করতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে বেঈমানী করার অভিযোগে ইতিহাসের কাঠগড়ায় তাদের দাঁড়াতে হবে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তাদের ক্ষমা করবে না, যদি সেই ব্যর্থতার কারণ হয় কাপুরুষতা এবং সময়কে ধারণ করার দুঃসাহসের অভাব। ইতিহাস সাহসী নেতাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, বিজয়ী হয়ে মসনদ অলংকৃত করার জন্য নয়। বরং সাহসের সাথে ময়দানে লড়াই করতে করতে শাহাদাত করার হিম্মত যাদের আছে, তারাই হন স্মরণীয়-বরণীয়। উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে মীর জাফর আলী খাঁ মসনদ দখল করেছিলেন, কিন্তু তাকে মানুষ হৃদয় আসনে স্থান দেয়নি। অন্যদিকে সিরাজ-উদ্দৌলাহ ইংরেজ বেনিয়াদের সাথে আপস করেননি। যুদ্ধ করেছেন, বন্দি হয়েছেন, শাহাদাত বরণ করেছেন। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তিনি পেয়েছেন শ্রদ্ধার আসন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যেক নেতা-কর্মী মনে লালন করেন শাহাদাতের তামান্না। তাই তারা থামতে জানেন না। বিগত দেড় দশকে সেই প্রমাণ তারা দিয়েছেন। ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ও মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক মন্ত্রী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে জীবন দিয়েছেন। কারাগারে থেকেই আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস সুবহান, মাওলানা একেএম ইউসুফ। এখনো কারাগারে আছেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম।
এছাড়া এমন কোনো নেতা নেই, যারা গত বিগত দেড় দশকে কারানির্যাতন ভোগ করেননি। এমনকি কর্মী-সমর্থকরাও নির্যাতনের বাইরে ছিলেন না। তারপরও তারা থমকে দাঁড়াননি বলেই আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ত্যাগ-তিতিক্ষার মহিমার কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের প্রতি রহমতের বারিধারা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৫ বছরের যে ফ্যাসিবাদী যুগ আমরা পার করেছি, সেখানে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান অপরাধে অপরিচ্ছন্ন ও অপবিত্র হয়ে গিয়েছিল এবং ফ্যাসিবাদী শাসক দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। কেবল তিন মাস হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে; কিন্তু সেই অপরাধপ্রবণতা ১০০ ভাগ বিদায় হয়নি। এখনো ছোট-খাটো কিছু অপরাধ দেখা যাচ্ছে, তার মাত্রা কম। এ বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছি। জামায়াতে ইসলামী অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় দৃঢ় থাকবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বিধান এবং নবীর সা. আদর্শের ভিত্তিতে একটি কল্যাণরাষ্ট্র কায়েম করা। সেই রাষ্ট্রে সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষের কল্যাণ হবে।’ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কল্যাণের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগে এ কাফেলার আন্দোলন-সংগ্রাম কেউ থামাতে পারেব না। তাদের শান্তিপূর্ণ অগ্রযাত্রা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পথে জনসমর্থন বাড়ানোর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
রহমতে সিক্ত কেউ রিক্ত হাতে ফেরে না
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন, মহান রবের রহমতে সিক্ত কাউকে তিনি রিক্ত হাতে ফেরান না। কারণ মহান আল্লাহর এ ঘোষণা তারা জানেন, (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর; এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে! (তোমরা যদি আল্লাহর সন্ধান দেয়া ব্যবসা কর, তাহলে) তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতে অতি উত্তম ঘর তোমাদের দান করবেন। এটাই বিরাট সাফল্য। আর অন্য আরেকটিও (তিনি তোমাদেরকে দেবেন), যা তোমরা পছন্দ কর (আর তা হলো) আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। (হে নবী!) ঈমানদার লোকদের তুমি সুসংবাদ দাও। (সূরা আস সফ : ১২-১৩)।
কিন্তু আলোচক ও সমালোচকরা বসে নেই। তারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনেক ইতিবাচক কাজ তুলে ধরার সাথে সাথে সাথে সমালোচনা করতেও ছাড়েন না। যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাজ্জাদ পারভেজ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে গত ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরে মন্তব্য করেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত এক মাসের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ মুহূর্তে জামায়াত সবচেয়ে আলোচিত দল। দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিগত কয়েকদিনে জামায়াত মোটাদাগে যেসব কাজে ব্যস্ত রয়েছে, তা হলোÑজামায়াত হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর পাহারা দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। শহীদ আবু সাঈদের পরিবারসহ সকল শহীদ পরিবারের পাশে ছুটে গেছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জুডিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহারের চেষ্টা, ১৫ আগস্টকেন্দ্রিক আওয়ামী পরিকল্পনাসহ বিপ্লববিরোধী বিভিন্ন হঠকারী তৎপরতাকে ভণ্ডুল করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে দলটি। ইসলামপন্থী দলসমূহকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। নেতারা স্ব স্ব এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ করছেন। এ সকল তৎপরতা থেকে প্রতীয়মান যে, মোটাদাগে জামায়াত সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে ইমেজ বৃদ্ধি, নির্বাচনী মাঠ দখল এবং হারানো প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার কাজকে প্রাধান্য দিচ্ছে। রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান মজবুত করার জন্য এসব কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাও সমভাবে বিবেচ্য যে, সমাজকল্যাণ আর ভোট ছাড়াও বহু ফ্যাক্টর আছে, যা রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করে। মনে রাখতে হবে, এনজিও টাইপ কর্মকাণ্ড আর রাজনীতি এক কথা নয়। সামাজিক কাজ করে ক্ষমতায় যাওয়া গেলে ব্র্যাকের আবেদ সাহেবরা নেতা হতেন। জামায়াতের প্রতি মানুষের যে সমর্থন, সেটার মূল কারণ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দলটির আপসহীন ভূমিকা ও অসামান্য ত্যাগ-কুরবানি। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা এটা মনে করে যে, জামায়াতই একমাত্র দল, যারা এদেশকে ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে পারবে।” শুধু ভারতের আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয়, জনগণের প্রত্যাশিত কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ সমালোচনা বা পরামর্শ মাঝে যে প্রত্যাশা লুকিয়ে আছে, তা পূরণ করতে হবে। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর পথচলায় সতর্কতা জরুরি বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।