বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে তৎপর শিক্ষার্থীরা : বিনা লাভের দোকানে ক্রেতার ভিড়
১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৪
স্টাফ রিপোর্টার : বাজারে শাকসবজির দামে অস্বস্তিতে ক্রেতারা। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সরাসরি কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি পৌঁছে দিতে রাজধানীসহ সারা দেশে উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে। সাশ্রয়ী দামে সবজি কিনতে শিক্ষার্থীদের দোকানে ভিড় করছেন লোকজন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তা কমিয়ে আনতে পাইকারি আড়ত থেকে কেনা দামে সাধারণ মানুষের কাছে পণ্য বিক্রি করা শুরু হয়েছে। বাজারে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের যে সিন্ডিকেট আছে, তা ভাঙতেই এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ কাজ চলমান থাকবে।
রাজধানীর ডেমরায় শিক্ষার্থীদের বিক্রয় কেন্দ্র
ডেমরার হাজীনগর এলাকার হাজী মোয়াজ্জেম আলী উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন একটি সবজির দোকানে কাঁচামাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থী। বাজারমূল্যের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে কাঁচাবাজার। কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। প্রতিদিন সকাল ৯টায় শুরু হয় বেচাকেনা। যতক্ষণ সবজি থাকে, ততক্ষণ চলে। জানা যায়, দোকানটিতে ঢ্যাঁড়শ প্রতি কেজি ৫০, বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৫০, লাউ প্রতি পিস ৩০, জালি কুমড়া পিস ৪৫, ফুলকপি পিস ২৫, পটোল প্রতিকেজি ৪০ ও জলপাই ৪০ এবং কচুরলতি ৬০ টাকা, যা বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ টাকা কম। কিছু সবজি অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে। একজন ক্রেতার ভাষ্য, আমার মতো গরিব মানুষ এখন তরিতরকারি কিনতে ভয় পায়। বাজারে ১০০ বা ৮০ টাকার নিচে কোনো তরকারি নেই; কিন্তু এখানে বেগুন, জলপাই, কচুরলতি, পটোল কিনলাম অর্ধেক দামে।
কিশোরগঞ্জের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে সবজি বিক্রি করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা
সরকার পতনের পর কিছুদিন স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীদের কাঁচাবাজারে আগুন লাগে। বাজার সিন্ডিকেটের লাগাম টানা যেন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আর সেই বাজার সিন্ডিকেট দমনে কিশোরগঞ্জের এক ঝাঁক যুবক নিজ উদ্যোগে খেটে খাওয়া মানুষের মনে স্বস্তি ফেরাতে বিনা লাভে শুরু করেছে সবজির দোকান। এখান থেকে পণ্য কিনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন ক্রেতারা। গত ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনের মতো কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের আখড়া বাজার ও পুরানথানা চত্বরে কেনাদামে সবজি বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। সার্বিকভাবে কার্যক্রমটি পরিচালিত করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহযোদ্ধা তানভির এনায়েত, আশরাফ আলী সোহান, আব্দুর রহমানসহ আরও অনেকেই। ক্রেতারা সকাল ১০টা থেকে এসে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনতে করতে পারবেন; যেমনÑ চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ, লাউ, মরিচ, বেগুন। কম মূলে এসব পণ্য কিনে খুশি ক্রেতারা। ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী সোহান বলেন, আমরা কেউ ব্যবসায়ী না, কিন্তু মানুষের কষ্ট দেখে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। মধ্যবিত্ত, দরিদ্র মানুষ যেন একটু স্বস্তি পায়। ফ্যাসিবাদ দূর করতে যেমন আমরা ফ্রন্টলাইনে লড়াই করেছি, তেমন নাগরিকের শান্তির জন্য আমরা কাজ করে যাবো।
সিন্ডিকেট ভাঙতে কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি
‘কৃষক-জনতা জিন্দাবাদ, সিন্ডিকেট মুর্দাবাদ’- এই স্লোগান সামনে নিয়ে কুমিল্লায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা ৮০ পয়সা, আলু কেজি প্রতি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২১০ টাকা, মাঝারি লাউ প্রতি পিছ ৩০ টাকা, কচুর ছড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটোল ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ২৫ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে নগরীর পূবালী চত্বরে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রির এ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
ময়মনসিংহে কম দামে সবজি বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা
সরাসরি কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তাদের এ কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে। সাশ্রয়ী দামে সবজি কিনতে শিক্ষার্থীদের দোকানে ভিড় করছে মানুষ। ২১ অক্টোবর সকাল থেকে কলেজের মুক্তমঞ্চের সামনে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি বিক্রির এ কার্যক্রম শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আনন্দ মোহন কলেজের প্রধান ফটকের বিপরীত দিকেই বসানো হয় দোকান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শামিয়ানা টানিয়ে দোকানটি চালানো হচ্ছে। টেবিলে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যের দোকানে ১৩ ধরনের সবজি মিলছে। স্থানীয় বাজার থেকে এ দোকানে কম দামে সবজি বিক্রি করেন তারা। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
বাকেরগঞ্জে জমে উঠেছে শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যের দোকান
স্থানীয় বাজারের তুলনায় এ দোকানে শাকসবজির দাম কম। কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা কমে কিনতে পারছেন লোকজন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সাশ্রয়ীমূল্যে সবজি কিনতে সেখানে ভিড় করেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কৃষক থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি পৌঁছে দেওয়ার এ কার্যক্রম শুরু করেছেন বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী। গত ২২ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে কাঁচাবাজারের সামনে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি বিক্রির এ কার্যক্রম শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এটি চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ ব্যবসা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড বাজারের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে বসানো হয়েছে এ সবজির দোকান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রাস্তার পাশে বসে সবজির দোকানটি চালানো হচ্ছে। সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।
অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছেন খুলনার শিক্ষার্থীরা
খুলনায় ‘বিনা লাভের দোকান’ অপ্রত্যাশিতভাবে লাভের মুখ দেখলো। পাঁচটি পয়েন্ট থেকে ২ দিনে ১৫০০ টাকা লাভ হয়েছে। তার চেয়েও বড় বিষয়, বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। ৪০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে। আলু-পেঁয়াজের দাম অবশ্য অপরিবর্তিত আছে। সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে কাঁচামরিচ বাদে কোনো সবজির দামই ক্রেতার নাগালে এখনো আসেনি। বিনা লাভের দোকান ২৭ ও ২৮ অক্টোবর খুলনার ৫টি পয়েন্টে চলমান থাকে। ৬টি পয়েন্টে এ দোকান হওয়ার ঘোষণা থাকলেও একটি পয়েন্ট (খালিশপুর চিত্রালী বাজার) বন্ধ রাখা হয়। আর শিববাড়ী মোড়ের পয়েন্ট ২৮ অক্টোবর ময়লাপোতা মোড়ে পরিচালিত হয়। কারণ কৃষি বিপণন বিভাগ থেকে ২৮ অক্টোবর শিববাড়ী মোড়ে কৃষিপণ্যের ওএমএস চালু হয়। এই ওএমএস খুলনার ৫টি পয়েন্টে পরিচালিত হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কার্যক্রম চালু থাকবে।