রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৩য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২২ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ২৫ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ৫ এপ্রিল ২০২৪

॥ মুহাম্মদ আল্-হেলাল॥
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা আল্লাহ করেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার দাসত্বের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)। তিনি দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছেনÑ যে কর্মসূচি পালন করাই আমাদের জন্য আল্লাহর দাসত্ব করা।
এজন্য তিনি ১০৪ খানা সংবিধান, ব্যবহারবিধি বা ম্যানুয়াল দিয়ে পাঠিয়েছেন এ দুনিয়ায়। আর সেই কিতাব পাঠ ও ব্যবহারবিধি বা ম্যানুয়ালের সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশেষ কার্যকরী সংবিধান হলো মহাগ্রন্থ আল্-কুরআন। যেটি কুরআনুল হাকিম, কুরআনুল কারীম, কুরআনুল মাজীদ, আল-ফুরকান যথাক্রমে বিজ্ঞানময় কুরআন, মহিমান্বিত কুরআন, মর্যাদাবান্বিত কুরআন, সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী ইত্যাদি নামে সমধিক পরিচিত। এ সংবিধান, জীবনবিধান তথা মহাগ্রন্থ আল্-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা রাজনীতি, সমাজনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মতো অর্থনীতিও নিবিষ্ট করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যে অর্থনীতি আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সেটি ইসলামী অর্থনীতি নামে পরিচিত। যাকাত ইসলামী অর্থনীতির একটি অংশ।
যাকাত আরবি শব্দ যেটির অর্থ পবিত্র, শুদ্ধ, পরিশুদ্ধ, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। অর্থাৎ যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র, প্রবৃদ্ধি বা পরিশুদ্ধ হয়।
এটি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষকে প্রতি চন্দ্রবছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত সীমা বা মালে নিসাব হয়, তবে শরীয়ত নির্ধারিতদের মধ্যে বিতরণের পদ্ধতিকে যাকাত বলে।
সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদকে মালে নিসাব বলে। আর এ পরিমাণ সম্পদ কারো অধীনে এক পূর্ণচন্দ্র বছর থাকলে তাকে মালিকে নিসাব বলে। মালিকে নিসাবের ওপর নির্ধারিত হার অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত খাতে যাকাত প্রদান করা ফরজ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতেই সাধারণত যেখানেই সালাত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন, সেখানেই যাকাতের কথা বলেছেন। ‘আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।’ (সূরা বাকারা : ৪৩)।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর প্রাপ্তবয়স্কহলে সালাত ফরজ করেছেন সাথে সাথে স্মরণ করে দিয়েছেন শুধু পূর্ব-পশ্চিম দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করলে পুণ্য হবে না আরো অনেক কাজ করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম মালিকে নিসাব হলে যাকাত প্রদান করতে হবে। ‘শুধু এটাই ভালো কাজ নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব আর পশ্চিম দিকে ঘোরাবে; বরং ভালো কাজ হলো ঈমান আনয়ন করা আল্লাহর প্রতি, শেষ দিনের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি, কিতাব ও নবীগণের প্রতি আর যে সম্পদ দেওয়া হয়েছে তার প্রতি মুহব্বত থাকা সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণ, এতিম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারী এবং বন্দিমুক্তি করতে খরচ করা এবং সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা এবং যা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করা, ধৈর্যধারণ করা কষ্ট, দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সূরা বাকারা : ১৭৭)।
মুমিনদের বন্ধু যারা হবেন তাদের মধ্যে সামর্থ্যবানদের যাকাত আদায়কারী হতে হবে সেটিও আল্লাহ এ মহাগ্রন্থে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে।’ (সূরা মায়েদা : ৫৫)।
মুমিনদের বন্ধুরা সামর্থ্যবান হওয়া শর্তে যাকাত প্রদান করবে, সেটিও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আর মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের বন্ধু, তারা (মানুষকে) ভালো কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ থেকে বাধা প্রদান করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদের আল্লাহ শিগগিরই দয়া করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা আত-তাওবা : ৭১)।
সামর্থ্যবান সফরে থাকেন আর যেখানেই থাকেন, সেখান থেকেই তিনি যাকাত প্রদান করতে পারবেন, “আর যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন।” (সূরা মারইয়াম : ৩১)।
আল্লাহ রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়ার পর প্রকৃতপক্ষে মুমিন যারা জমিনে সালাত প্রতিষ্ঠার মতো বিভিন্ন ভালো কাজের সাথে যাকাত আদায় করবেন তারা ‘তারা, এমন যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।’ (সূরা হজ : ৪১)।
প্রকৃত মুমিন যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় নয় সক্রিয় থাকবেন সেটিও কুরআনে ঘোষণা এসেছে ‘(১) অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, (২) যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত, (৩) আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ, (৪) আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়।’ (সূরা মুমিন : ১-৪)।
আখিরাতের নিশ্চিত বিশ্বাসীদের চেনার লক্ষণ হলো তারা সালাত কায়েমের সাথে সাথে যাকাত প্রদান কারী হবেন। ‘যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়। আর তারাই আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।’ (সূরা নামল : ৩)।
সালাত হলো শারীরিক ইবাদত আর যাকাত আর্থিক ইবাদত। মানুষের অর্থের প্রতি মোহ থাকে কিন্তু যারা প্রকৃত মুমিন তারা এ মোহকে অতিক্রম করে যাকাত প্রদান করে ‘যারা নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তারাই আখিরাতে দৃঢ়বিশ্বাস পোষণ করে।’ (সূরা লুকমান : ৪)।
সমাজে লক্ষ করলে দেখা যায় অনেকে সালাত আদায় করে, কিন্তু সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যাকাত প্রদান করে না, তারা প্রকৃতপক্ষে আখিরাতে বিশ্বাস করেনা “যারা যাকাত দেয় না। আর তারাই আখিরাতের অস্বীকারকারী।” (হা-মীম আস-সাজদা : ৭)।
যাকাতের ক্ষেত্রেও আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষের সমতার বিধান করে সামর্থ্যবান নারী হলেও তাকে অন্যান্য ভালো কাজের সাথে সাথে যাকাত প্রদানের হুকুম করেছেন।
‘আর তোমরা (নারীরা) নিজ বাড়িতে অবস্থান করো এবং জাহেলি যুগের মতো (নিজের) সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা নামাজ কায়েম করো। যাকাত আদায় করো, আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার! আল্লাহ শুধু চান অপবিত্রতাকে তোমাদের থেকে দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা আল আহযাব : ৩৩)।
অন্যান্য ইবাদতের মতো যাকাত প্রদান করতে হবে একনিষ্ঠভাবে, “আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।” (সূরা বাইয়্যনাহ : ৫)।
আমরা পবিত্র রমযানুল কারীম অতিবাহিত করছি। এ মহিমান্বিত মাসে সিয়াম সাধনার সাথে সাথে আরেকটি ইবাদত রয়েছে সেটি সদাকাতুল ফিতরা। ফিতরা এবং সদাকা দুটি শব্দই আরবি যার অর্থ খোলা বা ভাঙার দান অর্থাৎ রমযানুল মুবারকের সিয়াম ভাঙা বা খোলার জন্য শরীয়তমতে ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে প্রদত্ত দান বা সদাকাকে সদাকাতুল ফিতর বলে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৪৪৫ হিজরী সনের সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৯৭০ টাকা সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। (তথ্যসূত্র : মার্চ ২১, ২০২৪)। ফিতরা বা যাকাত আদায়ের খাত ও নিসাব একই। তবে যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেমন মালে নিসাব মালিকে নিসাবের নিকট এক পূর্ণচন্দ্র বছর থাকতে হয় কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে এক চন্দ্র বছর পূর্ণ হওয়ার প্রয়োজন হয় না শুধুমাত্র ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় মালিকে নিসাব হলেই তার ওপর ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।
এছাড়া মুমিনগণ সাধারণত এ মহিমান্বিত মাসে তাদের ওপর ফরজ যাকাত প্রদান করে থাকে। যাকাতের মাধ্যমে সমাজ থেকে দরিদ্রতা দূর হয়, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বিলোপ হয়ে এক সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পবিত্র কুআনের বিভিন্ন আয়াতে যাকাত ফরয হওয়ার দলিল, গুরুত্ব ইত্যাদি বর্ণিত হলেও মহাগ্রন্থ আল্-কুরআনের সূরা আত্-তাওবার ৬০নং আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাকাত তথা সদাকা প্রদানের খাত ঘোষণা করেছেন “দান-সদাকা শুধু নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, যাকাত বা দান-সদাকা ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মী, ইসলামের প্রতি অনুরাগী, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ ও সফরকারীদের জন্য, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাময়।”
উল্লেখ্য, মালিকে নিসাব তার ঊর্ধ্বক্রম যেমন মা-বাবা, দাদা-দাদি বা তারও ওপরে এবং নিম্নক্রম যেমন ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি বা তারও নিম্নক্রমদের ফিতরা বা যাকাত দিতে পারবেন না। কারণ তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব মালিকে নিসাবেরই।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাকাত বা সদাকার জন্য এ ৮টি খাতকে নির্ধারিত করে দিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সঠিক খাতে যাকাত প্রদান না করে ভিন্ন খাতে দান করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। প্রতিযোগিতায় লিপ্ত খাতগুলোর অগ্রভাগে রয়েছে মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি যে খাতে যাকাত প্রদান করলে আদায় হবে না এবং যাকাত প্রদান না করার ফলে গুনাহগার হতে হবে মালিকে নিসাবকে।
পর্যবেক্ষণে এসব খাতে বেশি বেশি দান করার কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয় দুটি বিষয় তা হলো- ১. সাওয়াব ও ২. সামাজিক মর্যাদা কারো কারো ক্ষেত্রে বিপরীত ক্রম ও দেখা যায়। সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার জন্য দান-সাদাকা করা হলে সেটি ‘রিয়া’ হয় আর ‘রিয়া’কারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ধ্বংসের কথা ঘোষণা করেন ‘৪. ধ্বংস ঐ সব সালাত আদায়কারীদের জন্য ৫. যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে নির্বোধ ৬. যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।’ (সূরা মাউন : ৪-৬)।
বিশ্বনবী (সা.) দান-সদাকাকে গোপনে করার জন্য তাকিদ দিয়ে বলেছেন, ‘দান এমনভাবে করবে যেন ডানহাত দ্ধারা দান করবে, কিন্তু বাম হাত জানতে পারবে না।’
আবার নিঃস্ব, অভাবগ্রস্তদের খাওয়ানো একটি সদাকা বা উত্তম কাজ। কেননা দান-সদাকার জন্য যে ৮টি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেনÑ তার মধ্যে এ দুটি খাতের স্থান সর্বাগ্রে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাই কোনো ব্যক্তি মারা গেলে কুলখানীর আয়োজন করা হয় এবং সেখানে বড় বড় ব্যবসায়ী, সমাজপতিদের অধিক পরিমাণে সমাদর করা হয় এবং অনুষ্ঠানস্থল এমনভাবে সাজসজ্জা করা হয়Ñ যেন শোকানুষ্ঠান আনন্দঘন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। ফলে যারা নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত বা প্রকৃতপক্ষে এ খানা পাওয়ার হকদার তাদের উক্ত অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার সীমিত হয় অবশেষে অর্থ-সম্পদ, সময়, শ্রম ইত্যাদি ব্যয় করেও সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ অর্জনের আশঙ্কা করা হয়, যেটি কখনো কাম্য হতে পারে না।
মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দান করে আলিশান করা জরুরি নয়। কারণ মসজিদের বা মাজারে যিনি শায়িত আছেন তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার বা পোশাকের প্রয়োজন হয় না, বরং অভাবগ্রস্তদের বা মাজারে শায়িত মৃত ব্যক্তির নিকট যারা এগুলোর জন্য প্রার্থনা করেন তাদের প্রয়োজন। মাজারে শায়িত মৃত ব্যক্তির সাহায্য করার কোনো ক্ষমতা নেই সেই ক্ষমতা শুধুমাত্র এক আল্লাহ তায়ালারই আছে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা দান করার যে ৮টি খাতের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহে দান করার কথা উল্লেখ করেননি। বরং সালাতের ওয়াক্ত হলে মসজিদের সামনে যে সকল ভিক্ষুক সালাতের জন্য অপেক্ষা না করে একটু সহানুভূতির জন্য অপেক্ষা করে, তাদের ঐ দানের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবেÑ যেন তারা আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য নয় সালাতের জন্যই মসজিদে আসতে পারে।
মসজিদ মাটির তৈরি হলে এবং সেখানে ইবাদত-বন্দেগী করলে সাওয়াব কোনো কম হয় না। বরং মাটি, পাথরের ওপর সালাত আদায় করার পর রাসূল (সা.)-এর কপালে এবং হাঁটুতে পাথরের দাগ পরিলক্ষিত হতো। রাসূল (সা.)-এর সময়কার মসজিদগুলো এমনই ছিল আজ আমাদের অতিশয় বাড়াবাড়ির কারণে বর্তমানে অধিকাংশ মসজিদ, কবরস্থান বা মাজার, ঈদগাহ, বাহ্যিকভাবে যতই পাকা বা আলিশান ভবনে পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে সমাজের মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে ততই কাঁচা হচ্ছে বা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মসজিদ কমিটির সদস্য কারা হবেন সদস্যদের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, তা পবিত্র কুরআনের সূরা আত্-তাওবার ১৮নং আয়াতে ঘোষণা করেছে, “নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে সালাত ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
কমিটিগুলোর সদস্যরা যদি এমন বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারী হতেন, তাহলে তারা মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং সমাজের মানুষের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে বেশি প্রতিযোগিতা করতেন। ফলে  সেখানে বিশৃঙ্খলা, বৈষম্য, অভাব-অনটনের স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতো।
লেখক : এমফিল গবেষক (এবিডি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।