আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শিক্ষার্থীরা ভোলেনি : অধ্যাপক আইনুল নিশাত
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে সাধারণ ছাত্রসমাজ
বিপরীত অবস্থানে ছাত্রলীগ
স্টাফ রিপোর্টার : ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রেশ এখনো কাটেনি। শিক্ষার্থীরা ওই ঘটনা ভুলে যাননি। সে কারণে তারা চান না- এখানো কোনো ছাত্ররাজনীতি চলুক এবং নতুন করে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম হোক। সে কারণে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। তারা ছাত্ররাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনিষ্ট করার বিরুদ্ধে লড়ছেন। বুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষক এবং প্রায় শতভাগ অভিভাবক এমনটাই চান। কারণ ছাত্ররাজনীতি থাকলে শিক্ষকদেরও বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয়, আর ক্যাম্পাসে রাজনীতি চললে অভিভাবকদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কেননা, তার সন্তান কখন কোন বিপদে পড়ে, তা নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়। সাবেক শিক্ষার্থীরাও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টিকে (বুয়েট) রাজনীতিমুক্ত দেখতে চান। তারা চান অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার চর্চা হোক ঠিকভাবে।
সম্প্রতি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টিা অবস্থান দৃশ্যমান। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। গত কয়েকদিন ধরে বুয়েটে নিজেদের অবস্থান ফিরে পেতে ছাত্রলীগ মরিয়া হয়ে ওঠে। অন্যদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্ররাজনীতি নিষেধাজ্ঞার বহাল রাখতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের টানা চার দিন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে এ বিষয়ে ১ এপ্রিল উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এলো। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানালেও তারা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই জানায়নি। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ।
জানা যায়, ২০১৯ সালে ৭ অক্টোবর ভোররাতে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যার পর থেকেই বুয়েটে ছাত্রলীগসহ সকল দলের ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। কিন্তু সুযোগ বুঝেই বুয়েটের শিক্ষার্থীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পাসে গোপন মিটিং করতো ছাত্রলীগ। বুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ২০২২ সালে আগস্টে শোক দিবস উদযাপন করতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন। এরপর কিছুদিন নীরব ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর (জানুয়ারির প্রথম দিকে) একবার গোপনে মিটিং করেছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেজন্য বৈঠকে উপস্থিত বুয়েট শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিভিন্ন গ্রুপ থেকে ব্যান করা হয়েছিল। পরে তারা ক্ষমা চেয়ে পার পায়।
গত ২৮ মার্চ রাত ৩টার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনের সহায়তায় গোপন মিটিং করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ।
ছাত্রলীগের গোপন মিটিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দিতে গত ২৯ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাযের পর দুপুর আড়াইটায় বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে বুয়েটের হাজার হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়। তারা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। গোপন মিটিংয়ের ঘটনায় বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের এতে ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। তবে আন্দোলনকারীরা এককভাবে গণমাধ্যমে মুখ খোলেননি। বিকেলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রেস ব্রিফিংয়ে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বুয়েট গড়তে ছয় দফা দাবি জানান।
বুয়েট শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হলের বাতিল করা সিট ফেরত দিতে বুয়েট প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ছাত্রলীগ। গত ৩১ মার্চ রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছে ছাত্রলীগ।
এদিকে বুয়েট ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। গত সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি এ রিট দায়ের করেন। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। আদালতের এ আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে জানান তিনি। আদালতে আইনজীবী ছাড়াও ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই- হাইকোর্টের এমন রায়কে শিরোধার্য মন্তব্য করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, ‘আদালতের রায় অবশ্যই আমাদের মেনে নিতে হবে। আদালতের রায় অবমাননা করে আমরা শাস্তির মুখে পড়তে চাই না’।
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আদালতের রায়ে আশাহত হলেও বসে নেই বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তারা শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায় রয়েছেন, পাশাপাশি তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে শিক্ষকদের পাশে চান। গত ১ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় বুয়েট ক্যাম্পাসের রশীদ ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৌন সম্মতি এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সমর্থন ছিল বলেও জানান তারা। সবার সমর্থনে ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রশাসন বুয়েট সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ জারি করে। কিন্তু গত১ এপ্রিল হাইকোর্ট বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করায় শিক্ষার্থীরা নতুন পদক্ষেপ নিতে শিক্ষকদের সহায়তা কামনা করেছেন।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ভোলেননি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে যদি শিক্ষার্থীরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের কথা চাপিয়ে দিতে পারেন না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিরপেক্ষভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মতামত জানার চেষ্টা করুন। তিনি আশা করেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামতকে বিবেচনায় নেবেন।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- নিরাপত্তা সংকটের আশঙ্কা
- রাজনৈতিক দল ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলেই দেশে কল্যাণকর পরিবর্তন আসবে আশা করা যায়
- বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর ঐক্যের সুবাতাস
- রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতায় আওয়ামী লীগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
- ভারতীয় পণ্যে সয়লাব ঈদবাজার
- নিজের দল হারলেও দেশকে হারিয়ে দেননি তিনি
- খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা আমীরে জামায়াতের
- মানুষের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য : ওবায়দুল কাদের
- স্মরণীয় সাংবাদিক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
- অরুণাচলের ৩০ স্থানের নতুন চীনা নাম
- ইমরান খানের সাজা বাতিল করলো ইসলামাবাদ হাইকোর্ট