রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৩য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২২ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ২৫ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ৫ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশবাসী ও বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য হয়নি। সে হিসেবে এ নির্বাচন ও সংসদের কোনো নৈতিক বৈধতা নেই। আর যে সংসদের নৈতিক বৈধতা নেই এবং যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, তাদের দ্বারা দেশের বড় কোনো কল্যাণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আজকে দেশে সাধারণ মানুষের অধিকার নেই, ন্যায়বিচার নেই, এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব বেশি, কিন্তু দেশবাসীরও দায়িত্ব আছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্তি জোগানো, পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রতিবাদ রাজনৈতিক দলগুলো করে তাতে সমর্থন দেয়া। রাজনৈতিক দলগুলো দেশ ও জাতির কল্যাণ চিন্তা করে ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ নিয়ে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করবে এবং দেশবাসী যদি সেই ডাকে সাড়া দেয়, তাহলেই আমরা একটি পরিবর্তনের আশা করতে পারি এবং সেই পরিবর্তনটা হবে আপামর জনগণের জন্য কল্যাণকর।                      
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া
সোনার বাংলা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদল অংশগ্রহণ করলো না, কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন আয়োজন করলো, জনগণ ভোট দিতে গেল না। এ নির্বাচনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ডা. শফিকুর রহমান : আসলে নির্বাচনকে আমাদের দেশের জনগণ এবং বিশ্ব যেভাবে দেখছে, আমিও সেভাবেই দেখছি। এটি বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। সেই হিসেবে এ নির্বাচনের কোনো নৈতিক বৈধতা নেই।
সোনার বাংলা : এ নির্বাচনের মাধ্যমে যেই জাতীয় সংসদ হলো, সেই সংসদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
ডা. শফিকুর রহমান : আসলে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সত্যিকারার্থে কোনো কিছুই মানছেন না। দেশের আইন, সংবিধান তারা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তাদের মতো করেই চালাচ্ছেন। এই হিসেবে যে সংবিধান বাংলাদেশের আইনকানুন, সংসদ সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তার গার্ডিয়ান হচ্ছে বিচার বিভাগ আর আইন প্রণয়নকারী হচ্ছে সংসদ। যে সংসদের নৈতিক বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন- তারা জনগণের ভোটে সেভাবে নির্বাচিত হয়নি, তারা জনগণকে নিয়ে কল্যাণ চিন্তা করবে কীভাবে? তারা তো ওইভাবে চিন্তা করবে না। ফলে তাদের দ্বারা সামগ্রিকভাবে দেশের বড় কোনো কল্যাণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সোনার বাংলা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলের অংশগ্রহণ না করা নিয়ে কোনো কোনো মহল প্রশ্ন তুলছে- এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
ডা. শফিকুর রহমান : এ প্রশ্ন তোলা তো একেবারেই অবান্তর। ২০১৮ সালের নির্বাচন দেখার পরও যারা এ প্রশ্ন তোলেন- এটা তারাই ভালো বুঝবেন যে, কেন তারা এ প্রশ্ন তোলেন। এ প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। এটি প্রমাণ হয়ে গেছে যে, এ সরকার কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে তারা ভয় পায়। এজন্য ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক, তাদের পছন্দের নির্বাচন করবে। তাদের পছন্দের নির্বাচন, যে নির্বাচনে আসলেই জনগণ অংশগ্রহণ করবে না; অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না। সেই নির্বাচনে কেন যাবে বিরোধীদল, এটার কোনোই যৌক্তিকতা নেই।
সোনার বাংলা : বিগত দুই যুগ আগে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল, তারপর ১৮ দলীয় জোট, এখন অবশ্য এ জোট নেই, আগামী দিনে রাজনীতিতে নয়া কোনো জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
ডা. শফিকুর রহমান : এটা তো সময়ের প্রয়োজনে হয়ে থাকে, জাতির প্রয়োজনে হয়ে থাকে। এখনই অগ্রিম কিছু বলা যাবে না। তিন পর্যায়ে এটি হয়েছে, প্রথমে চারদলীয় জোট, তারপর ১৮ দলীয় জোট, তারপর ২০ দল। তার সাথে বিভিন্ন সময়ে প্লাস-মাইনাস হয়েছে। এরকম যদি দেশ এবং জাতির প্রয়োজন হয় এবং সবাই যদি ফিল করে যে জোটবদ্ধ হওয়াই উচিত হবে, না হয় পাশাপাশি যেটা আমরা বিভিন্ন সময়ে যুগপৎ আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলন একই দফা একই দাবি যদি থাকে, তাহলে একই পদ্ধতিতে হবে বড়ো কোনো ডিফারেন্স নেই।
সোনার বাংলা : বিএনপি বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল, তারপরই জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান, এ দুই বড় দলের মধ্যে বর্তমানে রাজনৈতিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে?
ডা. শফিকুর রহমান : যারাই এ দেশকে ভালোবাসেন, দেশপ্রেমিক সকল দলের সাথেই আমাদের সম্পর্ক আছে। এদেশের মানুষ হিসেবে সবাই একদল করবে এটা বাস্তবতা না, এটা হয় না, কোনো দেশে এটি নেই। যার যার চিন্তা, যার যার আদর্শ পছন্দ করা এবং দল করার অধিকার সম্পূর্ণ স্বাধীন। এদিক থেকে বিএনপি তারা তাদের একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে কাজ করে, আবার জামায়াত তাদের একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে কাজ করে। এ দুই দলের সাথে দেশ এবং জাতির প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় সুসম্পর্ক ছিল। দেশ এবং জাতির প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও এটি থাকবে।  যেকোনো দলের সাথেই আমাদের এরকম সম্পর্ক।
সোনার বাংলা : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কয়েকটি ইসলামী দল রাজনৈতিক ময়দানে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। তাদের সাথে কি জামায়াতে ইসলামীর কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোট বা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
ডা. শফিকুর রহমান : এটি এখনো বলার সময় আসেনি। তবে আমরা চাই যে, যারা সত্যিকারভাবে দেশকে ভালোবাসেন এবং ইসলামের আদর্শ অন্তরে লালন করেন, তারা সকলেই দেশ এবং জাতির ব্যাপারে তাদের যে দায়ভার আছে, এটি পালনে তারা এগিয়ে আসুক, ঐক্যবদ্ধ হোক, শক্তিশালী হোক- এটি আমরা মনে মনে কামনা করি।
সোনার বাংলা : সরকার, সমমনা কিংবা মতাদর্শের প্রশ্নে বিপরীত দলগুলোর সাথে গণতন্ত্রে বিসী রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগ রক্ষা করা কিংবা সংলাপ কি গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার নয়?
ডা. শফিকুর রহমান : দেশ এবং জাতির স্বার্থে সভ্য দেশ হলে এটি সব দেশেই হয়। সেরকম কোনো পরিবেশ যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটি প্রকাশ্যেই হবে এবং জনগণকে সেটি জানিয়েই হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থ দেখাই তো রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ। ওই স্বার্থ সামনে রেখে যখন পরিবেশ ওইরকম হবে, সংলাপ করতে তখন কোনো অসুবিধা নেই, বরং জাতীয় স্বার্থে সংলাপ হওয়াই উচিত। কিন্তু সেটি সবাইকেই চাইতে হবে আর সংলাপটি হতে হবে সম্মানজনক, অপমানজনক কোনো সংলাপ হয় না। সংলাপটি খোলা মনে হতে হবে।
সোনার বাংলা : ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শক্তি বা পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন বা নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনার খুবই সূক্ষ্ম বা গোপনীয় একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ডা. শফিকুর রহমান : আসলে এ ধরনের প্রস্তাবের ব্যাপারে আমার কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই। কে দিয়েছেন? কীভাবে দিয়েছেন? এ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মত প্রকাশ করা আমি সঠিক বলে মনে করি না।
সোনার বাংলা : বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী দেশ হচ্ছে ভারত। বিগত দিনগুলোয় ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি; বিশেষ করে নির্বাচনে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
ডা. শফিকুর রহমান : আসলে এটি ভারত বলে কোনো কথা নয়। যেকোনো দেশে আরেকটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে এটি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ভারতই করুক আর যেই করুক। ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও বাংলাদেশ বা তার প্রতিবেশী কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো দেশের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে আমরা মনে করি না। যেটি ভারতের জন্য শোভনীয় নয়, সেটি বাংলাদেশের জন্য শোভনীয় নয়। আর সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ সবাই সবার কাছ থেকে আশা করে, আমরাও আশা করি। আমরা চাই যে, তাদের নীতি তারা নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীন দেশ হিসেবে তাদের নীতি তারা নির্ধারণ করবে। তারা কাকে নির্বাচিত করবে, কাকে নির্বাচিত করবে না তাতে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন এখতিয়ার রয়েছে। এখানে যদি কেউ হস্তক্ষেপ করে, যে কেউই হস্তক্ষেপ করুক এটি অগ্রহণযোগ্য।
সোনার বাংলা : বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাব; বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশেষ একটি দলের প্রতি অন্ধ সমর্থনের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
ডা. শফিকুর রহমান : এটি সবাই বলে থাকেন এবং দৃশ্য তো সেটিই মনে হয়। তবে দেশ হিসেবে দুটি দেশ যখন প্রতিবেশী হয়, তখন সরকারের সাথে সরকারের সম্পর্ক তো থাকবে, কিন্তু মূল সম্পর্ক থাকবে জনগণের সাথে জনগণের। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো দলকে যদি কোনো দেশ বাছাই করে নেয় এবং আপনি যেটি বললেন যে, অন্ধভাবে বাছাই করে নেয়, সেটি কারো জন্যই কল্যাণকর হয় না এবং এটি আমরা পছন্দ করি না। দেশের জনগণও এটি পছন্দ করেন না।
সোনার বাংলা : বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্ডিয়া আউট ও ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে একটি সামাজিক আন্দোলন চলছে। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি কী?
ডা. শফিকুর রহমান : সামাজিক আন্দোলন তো সামাজিক আন্দোলনই। এটি তো রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন নয়। যেহেতু এটি একটি সামাজিক আন্দোলন, সামাজিকভাবে যারা এটিকে সঠিক মনে করেন, তারা তা করবেন। এজন্য আমরা দলগতভাবে কোনো রাজনৈতিক মত দেয়া, এখনো আমরা সেটাকে বিবেচনায় নিইনি।
সোনার বাংলা : বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, কিন্তু বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার বিপরীতে সংবাদ মাধ্যমের ওপর বিভিন্ন কায়দায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে, বিগত দিনে বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও টিভি স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী ?
ডা. শফিকুর রহমান : হ্যাঁ, আসলে সংবাদমাধ্যম তো হলো জাতির ভ্যানগার্ড, তারা জাতির ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করে এবং যেসব দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে, সেই সব দেশের সরকারগুলো সংবাদমাধ্যমের দ্বারা উপকৃত হয়। কিন্তু কোনো সরকার যদি তার ইচ্ছা বৈধ হোক, অবৈধ হোক বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করে যে, তারা ভালোমন্দ বিবেচনায় নেবে না। তখনই দেখা গেছে যে, তারা শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রকমের কালা-কানুন তৈরি করে বাধা সৃষ্টি করে। যেটি বাংলাদেশে এখন চলছে। এ নিয়ে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বিগ্ন এবং এটি বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর নয়। আর বন্ধ যেসব চ্যানেল এবং পত্রিকা আছে আমরা দাবি করি যে, যত শিগগিরই সম্ভব এগুলো খুলে দিতে হবে, এর মাঝেই কল্যাণ। এগুলো বন্ধ করার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। ১৯৭২ সালের পর যে সরকার পরিচালিত হয়েছিল, সে সরকার এরকমই একটি পরিবেশ তৈরি করেছিল, সেগুলো আপনারা জানেন যে, সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি সংবাদপত্র ছাড়া বাকি সবগুলো গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটি আসলে জাতির জন্য কখনো কল্যাণকর হয় না, এখনো নয়, ভবিষ্যতেও নয়। এটি সবাইকে বুঝতে হবে। ক্ষমতায় তো কেউ চিরকাল থাকবে না। ক্ষমতার তো রদবদল হবে, এটাই তো রাজনীতি। তো আজ যদি বন্ধ হয়ে যায়, সরকারি দল যখন বিরোধীদল হবে, তাদেরও একই রকম দুর্ভোগ পোহাতে হবে, সাফারিং থাকবে তাদেরও। কিন্তু এটা কেন হবে?
সোনার বাংলা : বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, রাজনীতি করার সবার অধিকার আছে, কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলোকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না। এটা কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে?
ডা. শফিকুর রহমান : অবশ্যই না। এখানে বিভিন্ন আদর্শের লোকেরা তাদের বুদ্ধির চর্চা করবে, তাদের রাজনীতি করবে, কিন্তু একটি অংশ করবে আরেকটি অংশকে করতে দেবে না, এটি একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে কখনোই কাম্য নয়, হওয়া উচিতও নয়, আমরা এটি সমর্থন করি না। সকলের অধিকার তাকে অবশ্যই দিতে হবে। ছাত্রদের অধিকার রয়েছে তারা কার ডাকে সাড়া দেবে, কার আদর্শের অনুসারী হবে, আমি তো কারো ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার রাখি না, কেউ রাখে না। এর ফল যে ভালো হয় না, সেটি তো বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন তার প্রমাণ। এটি সবাইকে উপলব্ধি করা উচিত। সর্বশেষ যে নির্বাচন হয়েছে, সে নির্বাচনে কী হলো, সেখানে কার্যত সরকারি দল এবং সরকারি দলের মদদপুষ্ট ছাত্র সংগঠন ছাড়া কাউকে তো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রেজাল্ট কী হয়েছে? আর ছাত্রসমাজ সবসময়ই তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকে। তারা কোনো অন্যায়কে সমর্থন করে না এবং সহ্যও করে না।
সোনার বাংলা : বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অথচ এ দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোয় রমযানে ইফতার মাহফিল না করার ব্যাপারে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অবশ্য তারপরও ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ইফতার মাহফিল করেছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
ডা. শফিকুর রহমান : নিষেধাজ্ঞা যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা দুঃখজনক এবং সেটি অগ্রহণযোগ্য। আমরা মনে করি যে, ইফতার মাহফিলের এ সুযোগ অবশ্যই থাকা উচিত। সরকার বলে থাকে যে, সকল ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে চর্চা করবে। তাহলে সবাই করতে পারলে মুসলমান ছেলেমেয়েরা পারবে না কেন? এটা তো তাদের অধিকার। তারা তো এ ধরনের ইফতার আয়োজনে কাউকে শরিক হওয়ার জন্য বাধ্য করে না। যারা পছন্দ করে তারা সেখানে যাবে, এখানে বাধা দেওয়া অন্যায়।
সোনার বাংলা : বিগত দেড় দশক ধরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর ক্ষমতাসীন সরকার অসহনীয় অত্যাচার-নির্যাতন করে যাচ্ছে, তারপরও আপনারা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছেন, বিশেষ করে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অধিকাংশ কার্যালয় বন্ধ। এমন অবস্থা নিরসনে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ডা. শফিকুর রহমান : আমরা তো অবশ্যই চাইবো, এটা আমাদের অধিকার। আমরা গিয়ে সেখানে বসবো। কেউ কেউ বলে থাকেন যে, আপনাদের নিবন্ধন নেই। কিন্তু জনগণ জানে, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে অন্যায়ভাবে নিবন্ধন বাতিল করেছে। তাছাড়া নিবন্ধন না থাকা আর একটি দল থাকা এক জিনিস নয়। বাংলাদেশে এরকম অনিবন্ধিত অনেক দল আছে। তাদের অফিস আছে। তারা যদি অফিস করতে পারে, তাহলে জামায়াত কেন পারবে না! অবশ্যই জামায়াতকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। এটা জামায়াতের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটির অবসান আমরা চাই এবং হওয়া উচিত।
সোনার বাংলা : জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আপনার দৃষ্টিতে বিজয়ের শর্ত কী?
ডা. শফিকুর রহমান : বিজয়ের শর্ত তো একটিই। দেশের জনগণের জন্য, দেশের জন্য, দেশপ্রেম থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতেই এগোতে হবে। দেশের জনগণ এখন সেরকম একটি পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা মনে করি, অবশ্যই বর্তমান এ অবস্থা আর চলবে না। এর একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, এখন যারা বিরোধীদলে আছেন, যদি ইতিবাচক একটি পরিবর্তন আসে, তাহলে তা সকলের জন্য কল্যাণকর হবে। আমরা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করছি এবং সেই প্রস্তুতিও আমাদের আছে।
সোনার বাংলা : রাজনৈতিক ময়দানে; বিশেষ করে অপজিশন রাজনৈতিক ময়দানে একটি বিষয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে, বিরোধীদল; বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি শূন্যতা চলছে। এ ব্যাপারে আপনার কোনো মন্তব্য আছে কি?
ডা. শফিকুর রহমান : দেখেন, জিয়াউর রহমান সাহেব ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। একেকজন মানুষকে আল্লাহ একেকরকম যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেন। উনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তারপর দলের হাল ধরেছেন সাত্তার সাহেব কিছুদিনের জন্য। এরপর দলের হাল ধরেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, উনি দীর্ঘদিন ছিলেন। তিনি তার দলকে সফলভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিচালনা করেছেন। এখন তার বয়স হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে যে অবস্থা চলছে, এটি সবারই জানা। সে কারণে তিনি এখন আর কোনো ফাংশন করতে পারছেন না। সেই জায়গায় তার জ্যেষ্ঠ সন্তান জনাব তারেক রহমান এখন দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তিনি তার দল পরিচালনা করছেন। আত্মযোগ্যতা তো সবার সমান হয় না। একদিকে একজনের বেশি থাকে আর একজনের কম থাকে। কিন্তু একটি দল যখন গণতান্ত্রিক এবং পরামর্শভিত্তিক পরিচালিত হয়, তখন সেই দলের কোনো ব্যক্তিবিশেষের যোগ্যতার ওপর দলের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। সামগ্রিক লিডারশিপের মাধ্যমে এটি পুষে যায়। অনুরূপভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন কয়েক যুগ ধরে, তারা অভিজ্ঞতায়, জ্ঞানে, তাদের কর্মদক্ষতায় যে ধরনের পরীক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তার ঘাটতি তো আমাদের মাঝে থাকবেই। আমরা সবাই মিলে এ ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করব। এটাকে আমরা কোন নেগেটিভ সেন্সে দেখছি না। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়, একটি জায়গা খালি হয় আবার পূরণ হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এবং এটি যেকোনো দলের জন্যই প্রযোজ্য। সেটা বিএনপির জন্য বলেন আর জামায়াতের জন্যই বলেন কিংবা অন্য কারো জন্যই বলেন।
সোনার বাংলা : তাহলে জনগণ কী আশা করতে পারে যে, বর্তমান নেতৃত্ব জনগণকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে?
ডা. শফিকুর রহমান : আশাবাদী থাকাই তো আমাদের কাজ। আশাবাদী হয়েই তো মানুষ রাজনীতি করে।
সোনার বাংলা : সরকার বিনা কারণে অন্যায়ভাবে আপনাকে গ্রেফতার করে প্রায় ১৫ মাস কারাগারে আটক করে রেখেছিল। আপনার কারাগারের দুঃসহ জীবন সম্পর্কে কিছু বলবেন কী?
ডা. শফিকুর রহমান : কারাগার তো কারাগারই। কিন্তু কারাগারের জীবন রাজনীতিবিদদের জন্য বলা হয় সেকেন্ড হোম। তো আমরা এটিকে সেভাবেই নিয়েছি এবং জনগণ যা দেখেছে বিচারের ভার আমরা জনগণের ওপরই ছেড়ে দিয়েছি। আমি দুঃসহ অথবা সহনীয় কোনোটাই বলবো না। কারাগার কারাগারই। কারাগারে মানুষ যেমন থাকে, আমরাও তেমনি ছিলাম, ব্যতিক্রম আমরা নই।
সোনার বাংলা : জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী?
ডা. শফিকুর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ, চমৎকার কথা বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী সংগঠনকে যারা সমর্থন করেন, যারা এর নেতৃত্বে আছেন, কিংবা কর্মী বাহিনীতে যারা আছেন, তারা সকলেই একটি উদ্দেশ্যেই কাজ করেন আর সেটি হলো- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিল। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য মানুষের খেদমত ও আল্লাহ তায়ালা যেভাবে মানুষের জন্য দরজা খুলে দিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী সেই খেদমতটুকু করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। যারা সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিল করতে চায়, তাদের অবশ্যই কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে, এর বিকল্প কিছু নেই। (এক.) আদর্শের ব্যাপারে তার সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। আর আদর্শের সুস্পষ্ট জ্ঞানভাণ্ডার হচ্ছে আল-কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং সাহাবীদের জীবনী। এ বিষয়গুলো আমাদেরকে বেশি বেশি করে জানতে হবে। (দুই.) জানার সাথে সাথে যা আমরা জানলাম, যে জ্ঞান আমরা অর্জন করলাম, তার আলোকে যাতে আমরা নিজেকে ঘরে তুলতে পারি এবং বদলাতে পারি, এ গড়ে তোলা এবং বদলানোর কাজটি আমাদের নিষ্ঠার সাথে করতে হবে। তাহলে আমরা আদর্শের অনুসারী হতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। আর ইসলামের আদর্শ শাশ্বত আদর্শ, এটি আল্লাহর দান। আল্লাহর কিতাব আল কুরআন সর্বশেষ হিদায়েত। এরপর আর কিতাব আসবে না, নবী ও আসবেন না। আল্লাহ এর মাধ্যমেই তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন। নিয়ামতকেও পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। অতএব আমরা যদি এখলাছের সাথে, আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর কুরআনের জ্ঞান অর্জন করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নেক আমল করি, আমরা নিজেরাও ইনশাআল্লাহ বদলে যাবো, আল্লাহর দিকে এগোতে পারবো, নাজাত এবং কল্যাণের দিকে এবং জনগণকেও ইনশাআল্লাহ আমরা সহযোগিতা করতে পারবো। এভাবে একটি দরদি এবং ভালোবাসার সমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। যে সমাজটি হবে সাহাবায়ে কিরামের অনুসরণে চালিত সমাজ। তাদেরই পথ ধরে কর্মীদের এবং নিজেদের এভাবে গড়ে তোলার জন্য এবং জনগণের খেদমতে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য আমরা আহ্বান জানাবো।
সোনার বাংলা : দেশবাসীর উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী?
দেশবাসীর উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান : আসলে দেশবাসী তো বিভিন্নভাবে মজলুম। যদি কেউ নির্যাতিত হয়, তাহলে বিচার চাইতে গিয়ে এখন আর কেউ সেই স্বস্তিটা পাচ্ছে না। ন্যায়বিচার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ অসুস্থ হলে তার পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে না। গত ১৫ বছরে পণ্যের দাম ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে এমন মূল্যস্ফীতি এবং বাজারের অস্থিরতা আছে কিনা, আমি জানি না। যারা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ এবং স্বল্প আয়ের মানুষ, তাদের জন্য জীবন অসহনীয় হয়ে পড়েছে এবং জীবনটাই তাদের একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে হয়তো দেখেছেন যে, একজন মা তার পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কচি শিশুকে মাত্র আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এটি যদিও সমাজের সর্বত্র নয়, কিন্তু এটি সমাজের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতÑ আমরা কোথায় কোন দিকে আছি। আমরা একদিকে দেখছি যে, উন্নয়ন হচ্ছে দৃশ্যমান। আমরা বলছি যে, জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এটি কাদের জন্য এটি সমাজে নির্দিষ্ট গণ্ডিভূত কিছু মানুষের জন্য। সম্পদ নির্দিষ্ট কিছু মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে গেছে। আর বিপুলসংখ্যক জনগণ এখন দুঃসহ জীবনযাপন করছে। আইনও নেই। আবার জীবন বাঁচানোও তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একটা ছেলে যখন লেখাপড়া করে সে যখন তার যোগ্যতার প্রকাশ করল, কিন্তু মেধা এবং যোগ্যতার বলে সে তার চাকরি পায় না, তার এখন দলীয় পরিচিতিগুলো লাগবে। এভাবে দলীয় পরিচিতির আলোকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সত্যিকার মেধাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে এবং অসম্মান করা হচ্ছে। যার কারণে দুটি প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করতে পারছি। যুবসমাজের একটি অংশের মাঝে ব্যাপক হতাশা, হতাশা থেকে তারা নিজেরা বিধ্বস্ত এবং বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ তাদের হাতে হচ্ছে। আরেকটি অংশই দেশকেই তাদের জন্য উপযুক্ত মনে না করে তারা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। যদি আমরা আজ থেকে ২০ বছর ১৫ বছর আগের অবস্থার সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা করি, তাহলে জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সেই হারের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে আগে যারা বিদেশে লেখাপড়া করার জন্য মাইগ্রেট করেছে অথবা দেশ ছেড়ে চলে গেছে তার থেকেই বর্তমান সংখ্যাটা অনেক বেশি। একটি দেশের জন্য এটা কোনো কল্যাণকর জিনিস নয়। আমাদের মেধা কিন্তু ড্রেন হয়ে যাচ্ছে। অন্যত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থ পাচার গর্হিত অপরাধ, তার চেয়ে মারাত্মক হচ্ছে মেধা পাচার। এটি তো জাতির অনেক বড় লস। যদি সকল ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার স্বীকৃত না হয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে সমাজ তো এভাবে চলতে পারে না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব অবশ্যই বেশি কিন্তু দেশবাসীরও দায়িত্ব আছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্তি যোগানো, পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রতিবাদ রাজনৈতিক দলগুলো করে তাকে সমর্থন দেওয়া, আন্তরিক সমর্থন দেওয়া। যদি জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে এভাবে দেশ এবং জাতির কল্যাণ চিন্তা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারি বা দেশবাসী যদি সেই ডাকে সাড়া দেয়, তাহলে আমরা আশা করি একটি পরিবর্তনের, যা সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে- সরকারি দল, বিরোধীদল বলে কোনো কথা নেই। দেশবাসী যদি সেই ডাকে সাড়া দেয়, তাহলে দেশের আপামর জনগণের জন্যই হবে, সেটি কল্যাণকর। এরকম একটি পরিবর্তন আমরা আশা করতেই পারি।
সোনার বাংলা : সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন হবে। এ লক্ষ্যে বিরোধীদল আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো কর্মসূচি দেবে কিনা এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
ডা. শফিকুর রহমান : অবশ্যই দেবে কিন্তু সেটা কখন দেবে, সেটি হলো কথা। এখন ধরেন সমাজের বিভিন্ন অন্যায়-অসংগতির প্রতিবাদ সবাই করছে, আমরাও করছি- এটাও আন্দোলনের একটি অংশ। কিন্তু আপনি যেটি বলেছেন, সরকার পরিবর্তনের জন্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হবে কিনা? অবশ্যই হবে। সেটি একটু সময় নিয়ে সবকিছু চিন্তাভাবনা করে দেশ-জাতির কল্যাণের জন্য বিরোধীদল সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করি। এদিকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
সোনার বাংলা : সোনার বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. শফিকুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ। রমযানুল মোবারকের শুভেচ্ছা। অগ্রিম ঈদ মোবারক।


আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের জীবন বৃত্তান্ত
ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য নাম। এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান অন্যতম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সততা, যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
জন্ম : জাতির এ সাহসী সন্তান ও প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আবরু মিয়া এবং মাতার নাম খাতিরুন নেছা। শফিকুর রহমানরা তিন ভাই ও এক বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
শিক্ষা ও ক্যারিয়ার : ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৪ সালে স্থানীয় বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ (বর্তমান এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ) থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।
রাজনৈতিক জীবন : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ডা. শফিকুর রহমান জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে দীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি এ সংগঠনের সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি এবং সিলেট শহর শাখার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। এরপর সিলেট জেলা সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে জেলা ও মহানগরী আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনগণের (সদস্য) প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২২ কার্যকালের জন্য তিনি আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বসমূহ : ১৯৮৫ : কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার নির্বাচিত সদস্য, ১৯৮৬-৮৮ : সিলেট জেলা সেক্রেটারি, ১৯৮৯-৯১ : সিলেট জেলা নায়েবে আমীর, ১৯৯১-৯৮ : সিলেট জেলা আমীর, ১৯৯৮ : কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ১৯৯৮-২০০৭ : সিলেট মহানগরী আমীর, ২০১০ : এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ : নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ২০১১ : ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১৬ : সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১৯ : আমীরে জামায়াত।
পারিবারিক জীবন : ডা. শফিকুর রহমান ১৯৮৫ সালে ডা. আমিনা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডা. আমিনা বেগম অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। ডা. শফিকুর রহমান দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক।
সামাজিক কাজ : জননেতা ডা. শফিকুর রহমান প্রখ্যাত রাজনীতিকই নন, বরং তিনি একজন খ্যাতিমান সমাজসেবক, বলিষ্ঠ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তা। তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। একনজরে আমরা ডা. শফিকুর রহমানের সামাজিক কাজের কিছু অংশ তুলে ধরছি।
একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, একটি হাইস্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন, একাধিক হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন, একটি কামিল মাদরাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন, একাধিক এতিমখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা, একাধিক দাতব্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, কয়েকটি মসজিদের প্রতিষ্ঠা, ছাত্রজীবনে মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী ক্লাব ‘পালস’ প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন, একাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সদস্য, ১১. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।