একটি দেশের প্রতি অতি আনুগত্য : চীনের সাথেও সম্পর্কে স্থবিরতা : নতুন টানাপড়েনে ঢাকা-ওয়াশিংটন
নিরাপত্তা সংকটের আশঙ্কা
॥ ফারাহ মাসুম ॥
একটি প্রতিবেশী দেশের ওপর অতি নির্ভরশীল হতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের আবারো টানাপড়েন দেখা দিতে শুরু করেছে। সৃষ্ট এ টানাপড়েন সামাল দিতে আবার রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সাথে প্রতিবেশী দেশটির আপত্তির কারণে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের একটি পরিস্থিতি যেকোনো সময় দেশের জন্য নিরাপত্তা সংকট ডেকে আনতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন। সরকারের উচ্চপর্যায় এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আবার টানাপড়েন
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা সংক্রান্ত এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ঘুষ-দুর্নীতিকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো ব্যবসাবান্ধব নয় বলে উল্লেখ করা এ রিপোর্টটি এমন একটি সময়ে প্রকাশিত হলো যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অনেক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ রিপোর্টটি প্রকাশের পর অনেকেই ধারণা করছেন যে, বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাকফুটে চলে গেছেন।
সরকার সমর্থক একটি পোর্টালে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার নতুন করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টানাপড়েন তৈরি হচ্ছে। নির্বাচনের আগে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ভিসানীতি এবং অন্যান্য সতর্কবার্তা জারি করে, বাংলাদেশ সরকারের ওপর সাঁড়াশি চাপ প্রয়োগ করেছিল তেমন অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয় কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। হঠাৎ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে কিনা, সে বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। আর নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বেগ অস্বস্তি এবং নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করায় সরকারি মহলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
জানা যাচ্ছে, চারটি বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন করে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। এসব বিষয়ের শীর্ষে রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব নয় এবং এখানে ঘুষ-দুর্নীতি ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানাল যে, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর সমুদ্রবন্দরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমেরিকান চাপের দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হলো সুশাসন এবং মানবাধিকার। বাংলাদেশের সুশাসন এবং মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার নতুন করে কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের ইস্যুটাকে সরাসরি উত্থাপন না করে এটি সুশাসনের অভাবে ঘটছে মর্মে উত্থাপন করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সুশীল সমাজের সাথে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলছে। দেশটি বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছে। সুশীল সমাজের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সুশীলদের যেন চাপে রাখা না হয়, তারা যেন সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে পারেন, সে আহ্বান জানিয়ে আসছে। সরকারের মধ্যে সুশীলদের ভূমিকা নিয়ে স্বস্তিকর ধারণা না থাকায় এটি নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন ঘটছে।
বিরোধীমত দমন এবং তাদের মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র বক্তব্যে রেখেছে। এখন নতুন করে এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় মনে করে যে, বিরোধীমতকে কথা বলার অধিকার দেওয়া উচিত। তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে এখনো সরকার বিরোধীদলকে যথাযথ স্পেস দিচ্ছে না বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। এসব নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসব দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র আলাপ-আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে সীমিত থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাইডেন প্রশাসন আবার ক্ষমতায় এলে এ চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারের কর্মকর্তারা।
পিনাকী রঞ্জন চক্রবর্তীর মন্তব্য ও প্রতিবেশী প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন করে এ টানাপড়েন সৃষ্টির মধ্যেই অতি সম্প্রতি ভারতের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির দুই সাবেক হাইকমিশনারের বক্তব্যে এ বিষয়ে দিল্লির হস্তক্ষেপের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এ অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভারত যে মোটেই পছন্দ করছে না, বাইডেন প্রশাসনের কাছে দিল্লি এটা স্পষ্ট করে দেওয়ার পরই ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে অনেকটা আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’ (ওআরএফ) নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারিÑ ভারতের পক্ষ থেকে তখন এ কড়া বার্তাটা যুক্তরাষ্ট্রকে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার পরিণতিতে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যিনি তার কিছু দিন আগেও অমুক বিএনপি নেতাকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনছিলেন অথবা তমুক বিএনপি নেতার বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছিলেন তাকে আর ভোটের সময় দেখাই গেল না! কোথায় যে তিনি গা ঢাকা দিলেন, সেটা তিনিই জানেন!’
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী আরো বলেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রও আসলে জানে জামায়াতের প্রকৃত রূপটা কী। কিন্তু সেই একাত্তর থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে বিদ্বেষমূলক একটা মনোভাব ছিল, তার প্রতিফলন আজও রয়ে গেছে।
দৃশ্যপটে আবার রাশিয়া : এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েনের এ সময়েই রাশিয়া রূপপুরে আরও ২ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রস্তাব দিয়েছে মর্মে ঘটা করে প্রচার করা হচ্ছে।
গত ২ এপ্রিল মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে রাশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প এলাকায় দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ এবং ইউনিট-৪) নির্মাণের এ প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। নতুন কেন্দ্র নির্মাণে দ্রুত সমীক্ষা শুরুর প্রস্তাব করেছে রাশিয়া। সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত সরকারি ব্রিফিংয়ে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ান ফেডারেশনের সহায়তায় রূপপুরে নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।
রোসাটমের ডিজি জানান, ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ১২০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শুরু হবে। ইউনিট-১ এবং ইউনিট-২ থেকে আগামী ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
লোকসভায় ছিটমহল আলোচনা : এদিকে হঠাৎ করেই ভারতের লোকসভায় ২০১৫ সালের বাংলাদেশের সাথে ভারতের ছিটমহল বিনিময়ের কথা তুলেছে ভারতের কংগ্রেস। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই আর ১ আগস্ট মাঝরাতে। প্রায় ৯ বছর পর লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সেই প্রসঙ্গ তুলে এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ভাষণের জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি তারই পুরোনো একটি বিবৃতি তুলে ধরে বলেছেন, ২০১৫ সালে বাস্তবায়িত ‘স্থলসীমা চুক্তি শুধু ভূমি পুনর্বিন্যাস ছিল না, সেটা ছিল হৃদয় মিলেমিশে যাওয়ার মতো ঘটনা।’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আসলে নরেন্দ্র মোদির তোলা একটি গুরুতর অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে ভারত-বাংলাদেশের স্থলসীমা চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। মোদির অভিযোগ, ‘নতুন তথ্য সামনে এসেছে যে কীভাবে বোকার মতো কংগ্রেস কচ্ছথিভু দিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে।’ কচ্ছথিভু দুই বর্গকিলোমিটারেরও কম আয়তন এর একটি ছোট দ্বীপ। পাক-প্রণালীতে অবস্থিত এ ছোট্ট দ্বীপটি নিয়ে শ্রীলঙ্কা ও ভারত দুই দেশই দাবি-পাল্টা দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে ১৯৭৪ সালে ওই দ্বীপের ওপর থেকে ভারত তার দাবি তুলে নেয়।
এ নিয়ে তামিলনাড়ুর স্থানীয় রাজনীতি একাধিকবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের বিরোধিতা করতে গিয়ে মোদিই প্রথমবার জাতীয় রাজনীতিতে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এলেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে ওই ঘটনাকে মোদি ‘চোখ খুলে দেওয়ার মতো’ এবং ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি লিখেছেন, এটি প্রতিটি ভারতীয়কে রাগিয়ে দিয়েছে। মানুষের মনে এ কথা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে যে কংগ্রেসকে কখনোই বিশ্বাস করা যায় না। ভারতের ঐক্যকে দুর্বল করা, ভারতের স্বার্থে আঘাত করাই ৭৫ বছর ধরে কংগ্রেসের কাজের ধরন। গত ৩১ মার্চ রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে যেমন বিষয়টি উত্থাপন করেন, তেমন সেদিনই তিনি এক্স হ্যান্ডলেও লেখেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও। সেখানে তিনি বলেন, ডিএমকে (তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল) আর কংগ্রেস এমন আচরণ করছে যে সবকিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের দায় আর তারা যেন কিছুই করেনি। বিষয়টি নিয়ে যেন এখনই শুধু আলোচনা হচ্ছে, এর যেন কোনো ইতিহাস নেই। সংসদে একাধিকার এ দ্বীপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে ২১ বার তামিলনাড়ু সরকারকে জবাব দিয়েছি। তৎকালীন বিদেশ সচিব ও তখনকার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মধ্যে ১৯৭৪ সালে কথা হয় কচ্ছথিভুর ওপরে ভারত আর শ্রীলঙ্কা দুই পক্ষেরই দাবি আছে। তবে এর আগে ২০২২ সালে জয়শঙ্করেরই মন্ত্রণালয়- পররাষ্ট্র দপ্তর সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় জানিয়েছিল যে ‘ভারত-শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমারেখার শ্রীলঙ্কার দিকে অবস্থিত কচ্ছথিভু।’
আবার ২০১৩ সালে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল যে ভারতের কোনো ভূখণ্ডই শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। এ কচ্ছথিভু দ্বীপের সাথে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময়ের সঙ্গে তুলনা করেছে কংগ্রেস। খার্গ বলেছেন যে কচ্ছথিভু দ্বীপটি ১৯৭৪ সালে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তির অংশ হিসাবে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হয়েছিল এবং মোদি সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে এটিতেও সীমান্ত ছিটমহল বিনিময়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি অনুরূপ একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ করেছে।
বিজেপি বলছে, কচ্ছথিভু দ্বীপের ওপর থেকে ভারতের দাবি তুলে নেওয়ার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের স্থল চুক্তি বাস্তবায়ন কখনোই তুলনীয় নয়। দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়ন করে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই আর ১ আগস্ট মাঝরাতে। ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল মিশে গিয়েছিল ভারতের সঙ্গে আর ১১১টি ভারতীয় গ্রাম হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের অঙ্গ।
স্থল চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি তুলে দুই দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা যে আন্দোলন করেছিলেন, তার নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, কচ্ছথিভু দ্বীপের ঘটনা ছিটমহল বিনিময়ের সঙ্গে তুলনীয় নয় কখনোই। আর ছিটমহল বিনিময়ে মোদির সরকারের ভূমিকা ছিল একান্তই বাস্তবায়নের। নেহরু-নূন চুক্তি, তারপরে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি আর খালেদা জিয়া-নরসীমা রাও চুক্তি-এগুলোই ছিল স্থলসীমা চুক্তির ভিত্তি। সেই অনুযায়ীই আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হচ্ছে ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময়। দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, আর এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেস-বিজেপি-বাম-তৃণমূল কংগ্রেস সবাই কিন্তু সমর্থন করেছিল।
বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের দিক হলো ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলেও সেটি একটি ইস্যু হিসেবে জাগিয়ে রাখতে চাইছে ভারত। তিন বিঘা করিডোরের বিষয়টিও নতুন করে জাগিয়ে তুলে এর ওপর বাংলাদেশের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করা হয়েছিল।
নাগরিকত্ব আইন ও শাড়ি পোড়ানো : এর বাইরে এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছে বিজেপি সরকার। এ আইন কার্যকর করে আসামে লাখ লাখ বাঙালিকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সব অধিকার থেকে একদিকে বঞ্চিত করা হয়েছে; অন্যদিকে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে বার বার। এবার পশ্চিম বঙ্গে এ ইস্যুটি জোরে সুর তোলা হয়েছে। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশ এটিকে একটি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দেখছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশে গত সাধারণ নির্বাচন অত্যন্ত অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন মত থাকতে পারে। কয়েকটি বিরোধীদল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মতামত দিতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে জনগণের ভোটাধিকার হরণে সহায়তার প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের তীব্র বিরোধিতা করেও বক্তব্য রাখেন। এ ইস্যুটির সাথে পরে শাসকদলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বক্তব্য রাখেন। ফলে এ ইস্যুটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে সংবাদ হিসাবে স্থান পায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে আপনি আওয়াজ তুলতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তাদের (ভারত) থেকে আপনি কী পেয়েছেন? আপনি সব স্বীকার করেছেন, কিন্তু আপনি তিস্তার পানির অধিকার রক্ষা করেননি। আপনি কেন এত হাঁটু গেড়ে বসে আছেন?’
এর আগে রিজভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাদের উচিত তাদের স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ানো মর্মে সাম্প্রতিক মন্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি নেতারা অনেক ভারতীয় শাড়ি কেনেন না।
উদ্বেগে বেইজিং : এদিকে এবারের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণে ভারতীয় প্রভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে চীনের সাথে ঢাকার সম্পর্কে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রের সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান এবং উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে নিয়োগে তাদের ব্যাপক প্রভাব কাজ করছে। প্রতিবেশী হস্তক্ষেপে একটি সংবেদনশীল এজেন্সি থেকে মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই প্রধান ব্যক্তিকে সরিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দান নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি ইফতার পার্টি করার কারণে এ কর্মকর্তা প্রতিবেশীদের বিরাগভাজন হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চীনা দূতাবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, তিস্তা প্রকল্প থেকে শুরু করে বেশ কটি প্রকল্পের ব্যাপারে সরকারের পূর্ব সম্মতি থাকার পরও একটি প্রতিবেশী দেশের আপত্তির কারণে এ ব্যাপারে সরকার অগ্রসর হতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে তা বাংলাদেশকে দেয়া বাজেট সহায়তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তার ওপর প্রভাব পড়ার সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে বেইজিংয়ের সহযোগিতা করাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ সূত্র উল্লেখ করেছে, একটি দেশের ওপর মাত্রা ছাড়ানো নির্ভরতা অনেক সময় নিরাপত্তা সংকটও তৈরি করে থাকে। ঢাকার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- রাজনৈতিক দল ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলেই দেশে কল্যাণকর পরিবর্তন আসবে আশা করা যায়
- বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর ঐক্যের সুবাতাস
- রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতায় আওয়ামী লীগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
- ভারতীয় পণ্যে সয়লাব ঈদবাজার
- বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে সাধারণ ছাত্রসমাজ
- নিজের দল হারলেও দেশকে হারিয়ে দেননি তিনি
- খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা আমীরে জামায়াতের
- মানুষের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য : ওবায়দুল কাদের
- স্মরণীয় সাংবাদিক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
- অরুণাচলের ৩০ স্থানের নতুন চীনা নাম
- ইমরান খানের সাজা বাতিল করলো ইসলামাবাদ হাইকোর্ট