আনন্দবাজার পত্রিকা : ‘পুরনো ভয়’ ফিরে এসেছে! ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার মফিদুল ইসলাম, জামাল সেপাইরা সকাল থেকে শেক্সপিয়র সরণিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। রোজা রেখে রাজ্য লেখ্যাগার বা স্টেট আর্কাইভসের দফতরে পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। নদিয়ার হরিণঘাটার দুই তরুণ, রফিকুল বিশ্বাস ও সাহিল বিশ্বাসরাও ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন আইন কার্যকর করার পটভূমিতে দিল্লির শাসকদের সমর্থক মতুয়াদের একাংশ উৎসব করলেও পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তর সমাজে চেনা ভয়টাই গেড়ে বসেছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগার (স্টেট আর্কাইভস) থেকে পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকার খোঁজে ফের ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ জড়ো হচ্ছেন। কোচবিহার, আসামের বাঙালিদের মতো রাজ্যের অন্য জেলাগুলো থেকেও অনেকেই আসছেন। ভোটের আগে দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হবে, গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি শীর্ষনেতা অমিত শাহের এ ঘোষণার পরে সেই আইন খাতা-কলমে সদ্য কার্যকর করা এবং বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হুঁশিয়ারির পর অনেকেই ভোটার তালিকার কাগুজে প্রমাণ জোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
স্টেট আর্কাইভসের এক কর্তা ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘২০১৮ সালে আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়ার পরে একটা অস্বাভাবিক ভিড় এখানে আছড়ে পড়েছিল। তখন ভিড় সামলাতে এ অফিসে পুলিশ পাহারাও বসাতে হয়েছিল। চলতি সপ্তাহেও রোজই ৬০-৭০ জন করে নথি চেয়ে ভিড় করছেন।’ ওই কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, দফতরে লোকাভাবের জন্য একসঙ্গে এতজনের আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এক দিনে ২০ জনের বেশি মানুষের আবেদন গ্রহণ করা যাচ্ছে না এবং তাদের বলা হয়েছে, ভোটার তালিকার তথ্য দিতেও ৪৫ দিন লাগবে।’ আর্কাইভ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০ জনের অফিসে নয়জন রয়েছেন।
পুরনো ভোটার তালিকা দেখার কাজটিও আউটসোর্স করে সামলানো হচ্ছে। জনৈক কর্মকর্তা জানায়, ‘আগে প্রধানত আসামের বাঙালি, যাদের কোচবিহারে বাড়ি, তারা আসছিলেন। কোচবিহারে জেনকিন্স স্কুলে গোলমালের ঘটনায় জেলাপ্রশাসকের অফিসে আগুন দেয়া হয়। জেলার পুরনো ভোটার তালিকার নথিও পুড়ে যায়। আসামে বিয়ে হওয়া অনেক বাঙালি মহিলার নাম এনআরসি-তে বাদ পড়ায় তাদের আত্মীয়েরা তখন আসছিলেন। পরে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে পারে, এ আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা দলবেঁধে আসতে থাকেন।’
সিএএ-র আওতায় মুসলিমদের এমনিতেই বাদ রাখা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এনআরসি হলে ‘বাংলাদেশি’ তকমা ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কয়েক প্রজন্মের বাসিন্দা মুসলিমরাও পরিবারের পুরনো ভোটার তালিকা হাতে রাখতে চাইছেন। বাটা কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী জামাল, মফিদুলরা বলেন, ‘১৯৬৪ নাগাদ মহেশতলার চকচান্দুল, নুঙ্গি মোল্লাপাড়া, চুনরির মতো গ্রামে গোষ্ঠী সংঘর্ষে অনেকের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। পুরনো নথি কীই-বা পাব! পুরনো ভোটার তালিকায় বাবার নাম জোগাড় করতে এসেছি।’
চেন্নাইয়ে রেস্তোরাঁর পাচক রফিকুল বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী সাহিলরাও ভোটার তালিকায় তাদের দাদার নাম খুঁজতে এসেছেন। আর্কাইভসের এক কর্তা বলেন, ‘আগে আসামে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার নামে দালালরা মোটা টাকা তুলত। নথি জালের চেষ্টাও হতো। কয়েকটি কেন্দ্রের পুরনো ভোটার তালিকার নথি ভালো অবস্থায় নেই। মহাকরণ থেকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও যতটা পারি সাহায্য করছি।’
এ পাতার অন্যান্য খবর
- দেশজ শক্তিনির্ভর কৌশল বিরোধীদের
- আলামত শুভ মনে হয় না
- সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে আমীরে জামায়াত
- প্রতিবাদে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতার
- বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়লো
- বেঁধে দেওয়া মূল্যে পণ্য মিলছে না
- ১৭ রমযান ঐতিহাসিক বদর দিবস
- ৪ মে উপজেলা নির্বাচনের ১ম ধাপ
- ইসলামভীতি মোকাবিলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস
- আইআইইউসিতে ফটকের বাইরে প্রতিবাদী ইফতার
- ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় জুলুম চলছে : গোলাম পরওয়ার
- বিএসএফের গুলিতে কিশোর নিহতের ঘটনায় বিএনপির নিন্দা