দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইফতারে নিষেধাজ্ঞা
প্রতিবাদে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতার
দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা
স্টাফ রিপোর্টার : গত ১১ মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপ-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি আয়োজন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই দিন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ আলমগীর সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করছেন। এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দেশবাসীও হতবাক হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্নধর্মের অনুষ্ঠান হলেও ইফতারে নিষেধাজ্ঞাকে ষড়যন্ত্রও বলছেন কেউ কেউ। দেশজুড়ে ক্যাম্পাসগুলো সমালোচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয়ও সমালোচনার ঝড় বইছে। লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো প্রবল প্রতিরোধের মুখেও সারা দেশে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে রমযান মাসের সূচনাতেই ঢেউ লেগেছে গণ-ইফতারির।
দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা : পবিত্র রমযান মাসে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার জন্য অনুরোধ জানানোয় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশনার প্রতিবাদে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এর ব্যানারে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে ‘গণ-ইফতার কর্মসূচি’র আয়োজন করা হয়। এতে সবাই সাধ্য অনুযায়ী ইফতারি নিয়ে আসেন। ইফতারি নিষিদ্ধ করা সরকার ও দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা হয় দেশজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীরা এ নিয়ে সোচ্চার রয়েছেন।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা, ঢাবিতে প্রতিবাদ
শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবি ইফতার পার্টির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আবহমান বাংলার হাজার বছরের বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির ওপর নগ্ন আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। গত ১১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আহলান সাহলান-মাহে রমজান’, ‘সাওম সালাত ইফতার-মুসলমানদের অধিকার’, ‘ক্যাম্পাসগুলোয় কনসার্ট হলে-ইফতার পার্টিও হতে হবে’, ‘ক্যাম্পাসে কনসার্ট হলে, সমস্যা কী ইফতার হলে’, ‘রমজান ইফতার-অধিকার অধিকার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ঢাবিতে রমযানের আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের হামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে রমযানের আলোচনা সভায় হামলা করেছে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আইন বিভাগের তিন শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছেন সাত শিক্ষার্থী। গত ১৩ মার্চ দুপুরে রোজার ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করতে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে জড়ো হলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- ঢাবির আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান, রেজওয়ান রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী ও কুতুবউদ্দিন। এ সময় তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন শাহীন, রেজওয়ান ও সাকিব। আহত অবস্থায় সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাবিতে গণইফতারে প্রথমে বাধা, ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ
শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবি ইফতার পার্টির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘নিষেধাজ্ঞার’ প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৩ মার্চ গণ-ইফতার কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কর্মসূচি শুরুর আগেই ছাত্রলীগ দাবি করে, এতে ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে। আয়োজনে আগত শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেয় তারা। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন কর্মসূচির আয়োজক জায়িদ হাসান জোহা। এরপর জোহার সঙ্গে ‘শিবিরের’ সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, সেটি যাচাই করতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতা। তাঁর সঙ্গে ‘শিবিরের’ সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ‘ক্যাম্পাসের পাহারাদার’ হিসেবে গণইফতার কর্মসূচিতে অংশ নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ গণইফতার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহিল গালিব ও নেতাকর্মীসহ শত শত শিক্ষার্থী।
চবিতে গণ-ইফতার
শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে রমযানে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গণইফতার কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত ১২ মার্চ প্রথম রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ সাধারণ শিক্ষার্থী এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া তারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
খুবিতে গণ-ইফতার মিলনমেলায় রূপ নেয়
রমযানের শিক্ষা নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সর্বস্তরে ইসলামী সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে গণইফতারের আয়োজন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। গত ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এ গণইফতারের আয়োজন করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ ইফতারে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। শিক্ষার্থীরা আসরের নামাযের পর থেকেই একে একে জড়ো হতে থাকেন। এরপর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কুরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত ও ইসলামী বিভিন্ন পরিবেশনা করতে থাকেন। দোয়া-মোনাজাত পর্বের পর মাগরিবের আজান দিলে সবাই একসঙ্গে ইফতারি করেন। দুই বিশ^বিদ্যালয়ে ইফতার নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ।
ইফতারে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ববিতে গণ-ইফতার
শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবি রোজার মাসে ইফতার পার্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তি। এ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে গণইফতার ও র্যালি বের করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। গত ১২ মার্চ বিকালে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণইফতারের আয়োজন করা হয়। এসময় বক্তারা বলেন, শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবিতে এ নোটিশের মাধ্যমে বাঙালি মুসলিমদের হাজার বছরের সংস্কৃতির ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এটা নাস্তিক্যের চক্রান্ত। বাংলাদেশে এমন চক্রান্ত মেনে নেওয়া হবেনা। অনতিবিলম্বে, এ ধরনের নোটিশ বন্ধ চাই। এ সময় দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়।
জাবিতে প্রতিবাদী গণ-ইফতারের আয়োজন
শাবিপ্রবি এবং নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রতিবাদে গণ-ইফতারের আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৪৯ ব্যাচের উদ্যোগে এ গণইফতারের আয়োজন করা হয়। ইফতারে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
গণ-ইফতার করে শাবিতে প্রতিবাদ
প্রথম রমযান। শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে গণইফতার করেন শিক্ষার্থীরা। এ ইফতারে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন। ইফতারের এক ঘণ্টা পূর্ব থেকেই হল ও ক্যাম্পাসের বাহিরে থেকে শিক্ষার্থীদের আগমন শুরু হয়। কেউ অটোরিকশা, কেউ টমটম গাড়ি আবার কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে গোলচত্বরে এসে হাজির হন। এদের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ ইফতারি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ইফতার সম্পন্ন হয়। গণ-ইফতারে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ইফতার মাহফিল করা এটা আমাদের মুসলমানদের ঐতিহ্য। ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিল করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্য। অথচ ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিল না করার জন্য অনুরোধ করে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা এর প্রতিবাদে গণ-ইফতার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গণ-ইফতার মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে।
শাবিতে ইফতার পার্টি নিয়ে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন
পবিত্র রমযান মাসে ক্যাম্পাসের ভেতরে ইফতার পার্টির আয়োজন না করার অনুরোধ জানিয়েছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ১২ মার্চ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান পূর্বের নির্দেশনার ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের কথা জানান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ নিজেদের অর্থায়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর রমযান মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হতো। তবে এ বছর সরকারিভাবে বড় ইফতার পার্টির আয়োজন না করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কমাতে এবারের রমযান মাসে সংশ্লিষ্ট কাউকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ নিজেদের অর্থায়নে ইফতার পার্টির আয়োজন করতে পারবে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- দেশজ শক্তিনির্ভর কৌশল বিরোধীদের
- আলামত শুভ মনে হয় না
- সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে আমীরে জামায়াত
- বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস বাড়লো
- বেঁধে দেওয়া মূল্যে পণ্য মিলছে না
- নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা
- ১৭ রমযান ঐতিহাসিক বদর দিবস
- ৪ মে উপজেলা নির্বাচনের ১ম ধাপ
- ইসলামভীতি মোকাবিলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস
- আইআইইউসিতে ফটকের বাইরে প্রতিবাদী ইফতার
- ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় জুলুম চলছে : গোলাম পরওয়ার
- বিএসএফের গুলিতে কিশোর নিহতের ঘটনায় বিএনপির নিন্দা