সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

মো. মোস্তফা মিয়া
দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সম্পৃক্ততা একটি অশনিসংকেত বলে সমাজ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকে এই নেতিবাচক প্রবণতার জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যাকে দায়ী করেছেন। আবার অনেকে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়কে দায়ী করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে যে জাতীয় শিক্ষা নীতি থাকার কথা ছিল তা আমাদের নেই। এর কারণ স্বাধীনতা উত্তর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ছিল তারা সার্বজনীন যুগের চাহিদাভিত্তিক টেকসই জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। ফলে উচ্চবিত্তের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করে বিদেশে অবস্থান করেন। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে তারা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন নাই। সার্বজনীন মানবিক গুণাবলী থেকে তারা বঞ্চিত হন। প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রত্যাশা হলো প্রকৃতির সাথে মানবিক আচরণ করা। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রকৃতি নানাভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে বাধ্য। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে। এই নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষার্থীগণকে এবং তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনা অত্যাবশ্যক। এর জন্য গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে সর্বাধিক কল্যাণমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য।

ইসলামী আইনের উৎস চারটি। যথা- কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস। এই চারটি উৎসকে কোনো মুসলমান অস্বীকার করতে পারে না। এই চারটি উৎস সম্পর্কে মুসলমানদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। খণ্ডিত ইতিহাস দিয়ে যেমন জাতি গঠন করা যায় না, তেমনি খণ্ডিত ধর্মীয় জ্ঞান-এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়া যায় না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ৬৬৬৬টি আয়াত আছে এবং প্রতিটি আয়াতের সঠিক বাংলা অর্থ জানা মুসলমানদের জন্য ফরজ। এই আয়াতগুলোর কোথাও ইসলামের নামে কোন ব্যক্তি বা গোষ্টীকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা বলা হয় নাই এবং দায়িত্বও দেয়া হয় নাই। কুরআনের ৬৬৬৬টি আয়াতের বাংলা অর্থ যদি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণকে এবং যুব সমাজকে সার্বভৌম রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে কোনো বিশেষ মহলের পক্ষে কোনো শিক্ষার্থীকে খণ্ডিত ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে মগজধোলাই তথা কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারবে না। তাছাড়া আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা অর্জনের যে শাখা-প্রশাখা রয়েছে তার প্রত্যেক শাখার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মানবিক গুণাবলী বিকাশের স্বার্থে কুরআনের প্রতিটি আয়াতের বাংলা অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত করার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য হলো অর্থ বুঝে পড়া, অর্থ অনুধাবন করা এবং বাস্তবজীবনে অনুসরণ করা। এতে করে সকল প্রকার দুর্নীতি, অনাকাক্সিক্ষত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিহার করা সম্ভব হবে এবং সাথে সাথে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ভবিষ্যৎ দক্ষ মানব শক্তি তৈরি করাও সহজতর হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতি প্রণয়ন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক।  

বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলা যায় আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার পরও ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধের অভাবে অনৈতিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। মগজধোলাই-এর বিষয়টি সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্নভাবে ভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়। এটা যে শুধু খণ্ডিত ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে হয় তা নয়। মগজধোলাই এর মাধ্যমে যে শুধু ধর্মের নামে উগ্র জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে জড়িত হবে তা নয়, অনেক অমানবিক কার্যক্রমেও জড়িত হতে পারে। প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুইটি দিক বিদ্যমান, একটি বাহ্যিক দিক এবং অন্যটি অন্তর্নিহিত দিক। একজন ব্যক্তির মানবিক বিষয়টি তখনই প্রকাশিত হয় যখন তার অন্তর্নিহিত সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো সজাগ থাকে। ব্যক্তির দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান স্বার্থের কারণে মানবের অন্তর যখন ভোগের বিলাসিতায় মগ্ন থাকে তখন তার পরিবারের কাছের মানুষও মানবিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের নগর জীবনের বাস্তবতায় বলা যায়, উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের উচ্চ শিক্ষিত সন্তানরা বৃদ্ধ বয়সে তাদের পিতা-মাতাকে সহ্য করতে না পেরে প্রবীণ নিবাসে পাঠিয়ে দেয়। প্রবীণ নিবাস পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, অবসর প্রাপ্ত সচিবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে বাধ্য হয়ে প্রবীণ নিবাসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এমনকি ঈদের দিনও পিতা-মাতার খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। নগর জীবনে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে উচ্চ শিক্ষিত লোকদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ভাবে তালাকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া। এই ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা মানবিক সমাজ তথা পরস্পরকে শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথে বড় বাধা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নৈতিক অধঃপতনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পরিবারে প্রযুক্তির অপব্যবহার। একক পরিবারে পিতা-মাতা ও তাদের দুই জনসহ চারজন বসবাস করেন এবং সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত থাকেন। পারিবারিক পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক এবং শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে খোলা মন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। প্রত্যেকের হাতে টাচ্ মোবাইল এবং সবাই যার যার বেডরুমে নেতিবাচক একই দৃশ্য অবলোকন করে সময় অতিবাহিত করেন। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারাবাহিক বিকাশের সুযোগ থাকে না। এই নেতিবাচক ও আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের কল্যাণ সাধনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে না। প্রকৃতির প্রত্যাশার আলোকে উল্লিখিত বাধাসমূহ ও নেতিবাচক প্রবণতা অতিক্রম করা আবশ্যক।

আরেকটি বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ায় টক শোতে আলোচনা করা হয়, তাহলো মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। বাস্তবতা হলো আমাদের দেশের সমগ্র মাদরাসার মোট শিক্ষার্থীর কত % এই অস্বাভাবিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানগত তথ্য তারা উপস্থাপন করতে পারেন না। সার্বজনীন ইতিবাচক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের জন্য এই প্রতিহিংসামূলক এবং অনুমান নির্ভর বক্তব্য পরিহার করা অপরিহার্য। আমাদের মোট জনসংখার অধিকাংশ মানুষ এখনো নিজেকে সকল প্রকার সন্ত্রাসী ও অনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটা কোনো বিশেষ বাহিনীর ভয়ে রাখা সম্ভব হয় নাই। ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সততা চর্চার দৃঢ় মানসিক প্রতিজ্ঞার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। বিধায় ধর্মীয় শিক্ষাকে অবহেলা বা কটাক্ষ করার কোনো সুযোগ নাই। ইসলামের শিক্ষা সার্বজনীন, মুসলমানদের মেধা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নহে। মুসলমানদের মেধা সমগ্র মানবজাতি তথা সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য। এই বিষয়টি প্রতিটি মুসলমানের অনুধাবন করা উচিত। এই মেধার আলোকে মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মানুষের অন্তরে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ সাধন করা, সকল কাজের জবাবদিহিতার জন্য মহান স্রষ্টার সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় জাগ্রত করা। মাদরাসা শিক্ষা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বহি:র্ভূত কোনো বিষয় নয়। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা এবং সময়ের চাহিদার আলোকে গতিশীল করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের। বিধায় বাস্তবতার আলোকে এই শিক্ষার সার্বজনীন ইতিবাচক উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। সাম্প্রতিক অনাকাক্সিক্ষত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সার্বিক পরিচয় জানার পর নাগরিক সমাজ, নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ তথা দেশবাসী নতুন করে জানতে পারে সম্ভ্রান্ত পরিবারের ইংরেজি শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত সন্তানদেরকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে তা অবশ্যই জানার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে ইংরেজি মাধ্যমের সকল প্রতিষ্ঠানকে নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।     

জঙ্গিবাদের উত্থানে বিশ্বায়নের প্রভাবকে অস্বীকার করা যাবে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী যে কখন, কোথায়, কাকে, কীভাবে ব্যবহার করবে তা আগাম বলা যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। আইএসকে ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ প্রায় ৮টি দেশ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করছে। তারপরও তাদেরকে ধ্বংস করা যাচ্ছে না। এত হামলার মুখেও তারা তাদের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চলেছে। বিষয়টি সত্যিই অবাক করার মতো। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইসরাইল এবং সিরিয়া যে অস্ত্র আইএস এর উপর ব্যবহার করছে সেই দেশসমূহের তৈরি অস্ত্র দিয়ে আইএস পাল্টা আক্রমণ করছে। এই বাস্তবতার আলোকে প্রশ্ন হলো আইএসকে কারা অস্ত্র সরবরাহ করছে? ইতোমধ্যে রাশিয়া আইএসকে নিধন করার জন্য সিরিয়ায় যুদ্ধ জাহাজ প্রেরণ করছে। তাহলে এত কিছুর পরও অস্ত্র আসে কীভাবে? এর মানে হচ্ছে আমরা দৃশ্যমান যা অবলোকন করছি তার পিছনেও অদৃশ্যমান কিছু একটা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমর বিশেজ্ঞগণ মন্তব্য করেছেন যে, আইএস নিধন ইস্যু হচ্ছে অস্ত্র বাজারজাত করার কৌশলমাত্র। কারণ আইএস নিধন হলে প্রায় ৬০% অস্ত্র ব্যবসা হ্রাস পাবে। আল-কায়দার রূপান্তর হলো আইএস এবং আইএস এর রূপান্তর যে অন্য কিছু হবে না, তা তো নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক তথা বিশ্বায়নের এই প্রভাবকে দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য সরকারকে আরো বেশি কৌশলী হতে হবে। 

শিক্ষা মানুষের দেহ এবং মনের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে মানব সমাজকে পরিশুদ্ধ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা প্রমাণ করে যে, শুধু সামাজিক মূল্যবোধের অভাব নয়, কোথাও যেন একটা গলদ আছে। আর এই গলদের প্রথমেই আছে আমাদের পরিবার। পরিবার হচ্ছে মানবজীবনের আদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই মানব সন্তান জন্মগ্রহণ করে, লালিত-পালিত হয়, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব বিকাশের সূচনা পরিবার থেকে লাভ করে, সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো এবং মানবিক গুণাবলী পরিবারে বিকশিত হয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারে পিতা-মাতার ভূমিকা মুখ্য। এই মুখ্য দায়িত্ব পালন করতে তারা বিশেষ করে সম্ভ্রান্ত পরিবারের পিতা-মাতা ৮০% ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা থেকেই সন্তানদের মধ্যে পরিবার থেকেই মগজধোলাই-এর কাজ শুরু হয়। সামাজিক গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, পরিবারে যদি পিতা-মাতার মধ্যে শতভাগ উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হন, তাহলে তাদের সন্তানদের মধ্যেও তার প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ পিতা-মাতার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আর নেতিবাচক হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হ্যাগেলের দ্বান্দ্বিক তত্ত্বের আলোকে পরস্পরের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বিরাজমান থাকবে। এর প্রভাব চলমান সময়ের বিভিন্ন অমানবিক কার্যক্রমের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি ধর্মের মহামানবের জীবনী আলোচনা থেকে জানা যায়, তাঁদের পিতা-মাতারা তৎকালীন সমাজে শ্রেষ্ঠ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ছিল। এই বাস্তবতাটুকু সম্ভ্রান্ত পরিবারের পিতা-মাতাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের সাথে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটে। কিন্তু অভিজাত পরিবারে পিতা-মাতার অনীহার কারণে সন্তানদের মধ্যে সত্যিকারের সামাজিকীকরণ ঘটেনা। এটাও আমাদের চলমান সমাজ ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা। 

 à¦…ভিজাত পরিবারের সুবাদে সর্বোচ্চ আর্থিক ও জৈবিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও বাস্তবজীবনে প্রবেশের পূর্বে ১৮-২৫ বছর বয়সের শিক্ষার্থী এবং যুব সমাজের মধ্যে একটা শূন্যতা বিরাজমান থাকে। প্রকৃতিগতভাবে এই প্রবণতা থাকাটা স্বাভাবিক। এই সময়ে অধিকাংশ সন্তানেরা পিতা-মাতার অনৈতিক ও অমানবিক কার্যক্রম আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে না। এই অবস্থায় মানসিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত, কষ্ট ও দুঃখ থেকে মানসিক শূন্যতা সৃষ্টি হয় এবং তারপর তাদের মধ্যে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে হতাশার সৃষ্টি হয়। এই হতাশাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদেরকে খণ্ডিত ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে অমানবিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে। এই অবস্থায় পিতা-মাতার ভূমিকা ইতিবাচক এবং উদার হওয়া আবশ্যক।   

উল্লিখিত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে শূন্যতার মধ্যদিয়ে মগজধোলাই-এর প্রেক্ষাপট তৈরি করে পরিবার। তাই পরিবারের দায়বদ্ধতা বেশি। এই অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে বিরত রাখার প্রধান উপায় হচ্ছে দুইটি। যথা-(১) পিতা-মাতাকে সকল প্রকার অনৈতিক ও অবৈধ আর্থিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা এবং নৈতিকতার চর্চা শক্তিশালী করা। (২) ধর্ম সম্পর্কে মাতৃভাষায় পিতা-মাতাকে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা এবং একই স্বচ্ছ ধারণা সন্তানদের মধ্যে প্রদান করা। বিশেষ করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের প্রতিটি আয়াতের বাংলা অনুবাদ সম্পর্কে সন্তানদের জ্ঞান লাভ করার ব্যবস্থা করা। ভবিষ্যৎ মানবিক সমাজ এবং প্রজšà§‡§à¦° স্বার্থে তরুণ সমাজের মগজধোলাই-এর সুযোগ তৈরি করার সকল নেতিবাচক পন্থা বাস্তবতার আলোকে পরিহার করার আন্দোলন পরিবার থেকে নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে, উদার মন নিয়ে শুরু করতে হবে। তবে অভিজ্ঞ মহলের মতে, এই আন্দোলন তখনই স্বার্থক ও কার্যকর হবে, যখন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গণমানুষের সর্বাধিক কল্যাণ এবং মানবিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হবে।

সমাজ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবতার নিরিখে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমাদের ভয়ের কারণগুলো অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং গলদ কোথায়-পারিবারিক শিক্ষায়, পরিবেশে, নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এত সঙ্কটের মধ্যে আরেকটি বিষয় এসব সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করছে। সেটা হলো-আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি। কেউ দায়িত্ব নেবে না। দায় এড়িয়ে যাবে। অথবা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করবে। জাতীয় স্বার্থে এসব বন্ধ করতে হবে। মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সকল প্রস্তুতি রাজনৈতিকভাবে সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সঙ্কট সমাধানে রাজনৈতিক সংলাপ অপরিহার্য। 

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, কার্ড-সিলেট।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।