সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

অধ্যাপক আশরাফ জামান
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল একটি উল্লেখযোগ্য জেলা। এখানে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে তার ছোটবড় অনেক নিদর্শন।

টাঙ্গাইল শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে ঐতিহাসিক কাগমারী ও সন্তোষ এলাকা। আজ যা পৌরসভার অন্তর্গত দু’টি ওয়ার্ড মাত্র। অথচ এর পেছনে আছে এক ঐতিহাসিক রক্তাক্ত ঘটনা যা শুধু বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

আজকের যে সন্তোষ তার নাম ছিল খোশনদপুর। দিল্লিতে বাদশাহ আওরঙ্গজেবের অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে। এ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পান ভারতের বিভিন্ন এলাকার জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এর মধ্যে ছিলেন রাজন্যবর্গ, সুসাহিত্যিক, শিল্পী, আলেম-দরবেশ অনেকেই। এ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পান সুদূর কাশ্মীরের একজন বিখ্যাত পীরে কামেল হজরত শাহজামান (রহ.)।

হজরত শাহজামান জৌলুসপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠানে আনন্দ উল্লাসের জন্য যাননি, গিয়েছিলেন দ্বীনী আন্দোলনের ব্যাপারে সহযোগিতার মনোবাসনা বুকে নিয়ে। কারণ তিনি জানতেন বাদশাহ আলমগীর একজন আধ্যাত্মিক জ্ঞানসম্পন্ন আল্লাহর ওলী। তিনি ডেকেছেন নিশ্চয়ই এর মধ্যে দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে একটা বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে।

ইমামুর রব্বানী শায়খ আহমদ মোজাদ্দেদ আলফেসানী (রাহ.) পরিকল্পিত ও তাঁরই সুযোগ্য আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী খাজা মাসুম (রহ.) পরিচালিত মিশনারীর প্রস্তুতি নিতেই জমায়েত হয়েছিলেন অভিষেক অনুষ্ঠানে।

বঙ্গীয় এলাকার রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে বাদশাহর পরিষদবর্গ দেখলেন মোমেনশাহী এলাকায় কিছু জায়গা সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় থেকেই দেখার কোনো লোক নেই। তাই বাদশাহর নির্দেশেই এলাকাগুলোর জন্য রিইন ফোর্স মেন্ট হিসেবে অন্তত একজনকে পাঠানো প্রয়োজন এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। টাঙ্গাইল শহরের দক্ষিণে আটিয়া পরগনা এবং মধুপুর গড়ের বিস্তৃত এলাকা রসুলপুর পরগনা এ দুটোর মাঝখানে কাগমারী পরগনা। এখানে একজন প্রশাসক প্রয়োজন। বাদশাহ আওরঙ্গজেব স্বয়ং হজরত পীর শাহজামান (রহ.) কাশ্মিরীকে এ এলাকার প্রশাসক নির্বাচন করলেন। মিশনারী কাজের ব্যয়ভার বহন করার জন্য তামার পাতায় লিখে দিলেন ওয়াকফ দানপত্র। বাদশাহ বাইশটি গ্রাম এতে ওয়াকফ করে দিলেন। এ বাইশটি গ্রামের একটি হলো খোশনদপুর।

॥ দুই॥

হজরত পীর শাহজামান কাশ্মিরী (রহ.) সুদূর দিল্লি থেকে চলে আসলেন মোমেনশাহী জেলার টাঙ্গাইলের এক প্রত্যন্ত এলাকা কাগমারী পরগনায়। প্রথম এসেই তিনি পার্শ্ববর্তী আটিয়া রসুলপুর কেল্লাআতা (কালিহাতী) পরগনার তৎকালীন ইসলামী মিশনারী কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলেন। তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে চারটি পরগনার মাঝখানে যেহেতু খোশনদপুর অবস্থিত তাই এখানে কেন্দ্রস্থল হিসেবে ইসলাম প্রচার মিশনের কেন্দ্রীয় অফিস স্থাপন করলেন। যাতে করে সকলে একত্র মিলিত হয়ে মিশনারী কাজের ব্যাপারে পরামর্শ বা বৈঠক ইত্যাদি করা যায়। অল্পদিনের মধ্যে এলাকার লোকজন হজরতের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এলো। ওয়াকফের আয় থেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করলেন মসজিদ, মাদরাসা, মুসাফিরখানা, দাতব্য চিকিৎসালয়, পশু হাসপাতাল ইত্যাদি। কোনো কোনো দরিদ্র এলাকায় অস্থায়ীভাবে লঙ্গরখানাও প্রতিষ্ঠা করলেন।

হজরত শাহজামানের খানকায় হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ফার্সি, আরবী, সাহিত্য, ধর্ম শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসতে লাগল। মুসলমান ছেলেমেয়ে ও বয়ষ্ক লোকদের জন্য কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তুললেন পীর সাহেব।

খোশনদপুরের উত্তরে বাটনা গ্রামের এক এতিম কিশোরকে পেলেন পীর সাহেবেব শিষ্য হিসেবে। সে শিক্ষা ও সাহচর্য লাভের জন্য এলো। তাকে দীক্ষা দিতে লাগলেন পীর সাহেব। তাকে তিনি পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন। চির কুমার পীর সাহেবের স্ত্রী-সন্তান ছিল না। এক সময় ইসলাম ধর্মের প্রতি মুগ্ধ হয়ে ছেলেটি ইসলামধর্ম গ্রহণ করে। পূর্বে তার নাম ছিল ইন্দ্র নারায়ণ, ইসলাম কবুল করার পর নাম হলো শাহ এনায়েত উল্লাহ চৌধুরী। এনায়েত উল্লাহর জন্মস্থান বলে বাটনা গ্রামের নাম হয় এনায়েতেপুর।

এনায়েতুল্লাহ হলেন পীর শাহজামান (রহ.) এর সুযোগ্য উত্তরসুরী। তাঁকে শেখানো হলো আরবী, ফার্সি ভাষা এবং ইসলামের শরীয়ত ও মারেফতের জ্ঞান। পুত্রস্নেহে লালন করেন পীর সাহেব। ধীরে ধীরে তাঁকে গড়ে তুলেন আধ্যাত্মিক ও জাগতিক সকল শিক্ষায়।

পীর সাহেবের বয়স হয়ে গেছে কখন চলে যান মহান আল্লাহতায়ালার আহ্বানে তাই এনায়েতুল্লাহকে মিশনের কাজে নেতৃত্ব দানের যোগ্য করে গড়ে তুললেন। একদিন হজরত শাহজামান (রহ.) সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে সাক্ষাৎ ও দোয়া আশীর্বাদের উদ্দেশ্যে দিল্লি নিয়ে যান। জিন্দাপীর বাদশাহ আলমগীর খুব খুশি হলেন। তিনি সমগ্র কাগমারী পরগনাকে ওয়াকফ স্টেটের অন্তর্ভুক্ত করে এ ব্যাপারে মুর্শীদ কুলিখানকে সরাসরি নির্দেশ দান করেন।

মুর্শীদ কুলি খানের সঙ্গে পীর শাহজামানের পরিচয় ছিল। তিনি মুর্শীদাবাদের নবাব পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এত আয়োজন এত প্রস্তুতি গ্রহণ করার পর ১৭১৮ সালে ৯১ বৎসর বয়সে হজরত শাহজামান (রহ.) ইন্তিকাল করেন। ঐ সময় মাত্র ৩২ বৎসর বয়সে মিশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শাহ এনায়েতুল্লাহ চৌধুরী।

বিদায়কালে এনায়েতুল্লাহকে কাছে ডেকে মিশনের সমস্ত দায়িত্বভার প্রদান করে হজরত শাহজামান (রহ.) হাত উঠিয়ে দোয়া করেন আল্লঅহর দরবারে “আল্লাহ তোমাকে কর্তব্য পালনে সাহায্য করবেন।”

॥ তিন॥

হজরত শাহজামান কাশ্মিরীর যোগ্য শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন শাহ এনায়েতুল্লাহ চৌধুরী। কাগমারী পরগনা মিশনের কাজ অত্যন্ত কামিয়াবির সঙ্গে এগিয়ে চলছিল। শাহজামানের মিশনের অর্থানুকূল্যে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ২২টি পাঠাগার, দাতব্য চিকিৎসালয়, পশু হাসপাতাল, লঙ্গরখানা প্রভৃতি পুরো গতিতে চলছিল। দলে দলে নিম্নবর্ণের হিন্দু নারী-পুরুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছিল। জনকল্যাণমূলক, সেবামূলক, শিক্ষা ও গবেষণা কাজে হিন্দু মুসলমান সমানভাবে অংশ নিতে পারত। এবাবে মিশনের সাফল্য তখন মধ্য গগনে।

এনায়েতুল্লাহ আপন কাকা ব্রজমোহন চৌধুরীকে নিয়েছিলেন বৈষয়িক কাজ হিসাব-নিকাশ ও আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে দেখাশোনার জন্য ওয়াকফ স্টেটের নায়েব হিসেবে। তিনি ইসলাম গ্রহণ না করে নিজ ধর্মই পালন করতেন। এ ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হতো না বা এনায়েতুল্লাহ কিছু মনে করতেন না।

কিছুদিন পর এনায়েতুল্লাহ পবিত্র হজব্রত পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। ভাবলেন, মহান আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ ও রাসূলের রওজা মোবারক যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আল্লাহ তায়ালা তাকে যে পবিত্র দায়িত্ব দিয়েছেন তার জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করবেন।

সেকালে হজ পালন করতে অনেক সময় লেগে যেতো। কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো নদী বা সমুদ্র পথে নৌকা ও জাহাজে করে যেতে হত। অর্থাৎ পবিত্র হজ পালন করতে এবং বাড়ি ফিরতে দু’তিন বৎসর সময় চলে যেত। শাহ এনায়েতুল্লাহ হজে যাত্রাকালে এস্টেটের দেখাশুনার সার্বিক দায়িত্ব দিয়ে গেলেন তার কাকা ব্রজমোহন চৌধুরীকে। স্ত্রী ও একমাত্র শিশু পুত্র সন্তানকে রেখে গেলেন কাকার জিম্মায় খোশনদপুরে।

কাকা ব্রজমোহন ভাতিজার সকল দায়িত্ব খুশি হয়ে গ্রহণ করেন। পৈতা ও ধর্মগ্রন্থ গীতা স্পর্শ করে ওয়াদা করলেন, জীবনের বিনিময়ে হলেও ভাতিজার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ইতিহাসের আরেক পলাশীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বাংলার নিভৃত গ্রাম খোশনদপুরে। শাহ এনায়েতুল্লাহ চৌধুরী হজ সমাপন করে দেশের মাটিতে ফিরতে প্রায় তিন বৎসর সময় চলে গেল। ইতোমধ্যে একের পর এক কূট ষড়যন্ত্রে খোশনদপুরে অনেক কিছু ঘটে গেল। খলনায়ক কাকা ব্রজমোহন স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। ভাতিজাকে হত্যা করার জন্য গুপ্ত ঘাতক পাঠালেন। ঘাতকেরা তার অনুসরণ করছিল। হজ থেকে ফেরার পথে এনায়েতুল্লাহকে হত্যা করা হবে। যশোরের কোনো এক স্থানে দু’জন ঘাতক নিরস্ত্র অবস্থায় এনায়েতুল্লাহকে নির্মমভাবে শহীদ করল। ঘটনাটি ঘটে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে। বাংলার নবাব সিরাজউদদৌলার হত্যার ১৮ বৎসর পূর্বে।

॥ চার॥

রাজ বল্লভ, উমিচাঁদের আরেক পূর্বসূরী ব্রজমোহন এভাবে এনায়েতুল্লাহকে নির্মমভাবে হত্যা করে খোশনদপুরে প্রচার করল ভাতিজাকে দস্যুরা হত্যা করেছে। মায়া কান্নাও জুড়ে দিল সে ও তার পরিবারবর্গ। এলাকার সাধারণ মানুষরা জানতে পারল না এর সত্য ঘটনা আর নায়েবের দ্বারা সংঘটিত পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের কাহিনী।

এখানেই শেষ নয় এনায়েতুল্লাহর একমাত্র শিশু পুত্রকে কৌশলে ঘাতক দিয়ে গোপনে হত্যা করল প্রচার করল এনায়েতুল্লাহর ছেলে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কতবড় নিষ্ঠুর হলে এ জাতীয় কাজ করতে পারে?

এনায়েতুল্লাহর স্ত্রী সন্তান হারিয়ে বিশ্বস্ত এক ভৃত্যের মাধ্যমে রাতের আঁধারে জীবনটুকু নিয়ে মুর্শিদাবাদ পালিয়ে যান।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকালে ১৭৩৯-৪০ এর সময় খোদ মুর্শিদাবাদে নবাবী নিয়ে মারামারি কাটাকাটি চলছিল। তবে ব্রজমোহনকে এনায়েতুল্লাহর হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কারাধ্যক্ষ বিশ্বেম্বর রায় কারসাজি করে ব্রজমোহনকে ছেড়ে দেয়। বিনিময়ে খোশনদপুর এসে দু’জনে মিলে সেখানকার নগদ অর্থ-সম্পদ লুটপাট করে নেয়।

এভাবে বাদশাহ আলমগীরের তামার পাতায় প্রদান করা ওয়াকফ সম্পত্তি আধ্যাত্মিক গুরু হজরত শাহজামান (রহ.) ও তার প্রিয় পুত্র শাহ এনায়েতুল্লাহ (রহ.) পরিচালিত মিশনের কাজ বন্ধ করে তা খলনায়ক ব্রজমোহনের  কারসাজিতে পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়। তারা এসে পালাক্রমে বংশপরম্পরায় ভোগ দখল করে ১৯০ বৎসর। কখনো জমিদার কখনো রাজা এবং মহাজারা উপাধি গ্রহণ করে পরের সম্পত্তি ভোগ দখল করে বিলাসবহুল জীবন কাটায়। খোশনদপুরের নাম পরিবর্তন করে সংস্কৃতি প্রতিশব্দ রাখে সন্তোষ।

অতীব দুঃখের ব্যাপার এই যে, সন্তোষের তথাকথিত রাজারা টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিল তাদের লোকজনদের নামে। কোথাও হজরত শাজামান ও এনায়েতুল্লাহ চৌধুরীর নামে কিছু নেই। পীর শাহজামান শুয়ে আছেন নিভৃত কাগমারী কলেজের সামনে অবস্থিত মাজারে। ফারসি শব্দ কাগ অর্থ কলম এবং মারী অর্থ কেন্দ্র যা হজরত শাহজামান (রহ.) এর দেয়া নাম। কাগমারীতে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সে আসলে জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। ছোট  বড় সকল শ্রেণির নারী পুরুষের মধ্যে শিক্ষা দান করা হতো। আরবী, ফারসি, বাংলা ভাষায় অক্ষরজ্ঞান ছাড়াও সাহিত্য, ব্যাকরণ, ধর্ম ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান শিক্ষাদান করা হত। পীর সাহেব তাঁর ভাবশিষ্য এনায়েতুল্লাহ চৌধুরীকে তিনি যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলেছিলেন।

দানকৃত ওয়াকফ সম্পত্তি যা ইসলাম প্রচারের উদ্দেশে মিশনারী আন্দোলনের জন্য দেয়া হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। তা একসময় ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। মজলুম জননেতা আধ্যাত্মিক পীর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী টাঙ্গাইলে এসে ১৯৩৬ সালে এ ব্যাপারটি অবগত হন। তারপর থেকে দীর্ঘদিন সন্তোষে জবর দখলকারী জমিদারদের সঙ্গে এই সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি প্রচেষ্টা চালান। ১৯৪৬ সালে তিনি উদ্ধার করেন এ সকল সম্পত্তি।

১৯৭৩ সাল থেকেই মওলানা ভাসানী হজরত শাহজামানের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নাম দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সেখানে প্রাথমিক স্কুল, কুরআন হেফজখানা, এতিমখানা, সূচি শিক্ষা, বালক-বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, পশু হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য এগুলোতে হজরত শাহজামানের ইসলামী মিশনের তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। মওলানা ভাসানীর নামে পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।

দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, দখলবাজ রাজা ও জমিদারগণ তাদের আপনজনের নামে টাঙ্গাইল শহর ও সন্তোষে বিন্দুবাসিনী স্কুল জাহ্নবী হাইস্কুল, রাণী দীনমনি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপন করে গেছেন। মওলানা ভাসানী ছোটখাট দু’একটি প্রতিষ্ঠান হজরত শাহজামান ও এনায়েতুল্লাহর নামে করেছেন।

টাঙ্গাইল শহর থেকে সন্তোষ পর্যন্ত রাস্তাঘাট বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের নাম নেই। আমাদের আশঙ্কা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধীরে ধীরে তাদের নাম ভুলে যাবে। জানবে না সন্তোষের রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা। আজ তারা হয়ে পড়েছেন অখ্যাত অজ্ঞাত।

লেখক : সাবেক অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, সন্তোষ মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।