পিরোজপুরে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ

পিরোজপুর : সদর উপজেলার ছোট খলিশাখালী গ্রামের একটি লাউয়ের মাচা। এই গ্রাম থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির শাক-সবজি পিরোজপুর শহরে বিক্রির জন্য নেয়া হয়

পিরোজপুর সংবাদদাতা : কয়েক বছর আগেও পিরোজপুর শহরের অধিকাংশ লোকদের যশোর ও খুলনা থেকে আসা সবজির উপর নির্ভরশীল থাকতে হত। তবে বর্তমানে জেলা শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ হওয়ায়, এই এলাকার মানুষের অন্যান্য এলাকার সবজির উপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমেছে। এর ফলে এখানকার জনসাধারণ প্রতিদিন বাজার থেকে তাজা সবজি কিনতে পারছে।

প্রতিদিন সকালে তিন চাকার ভ্যানে করে পিরোজপুরের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা তাদের মাঠে উৎপন্ন শাক সবজি নিয়ে ছুটে আসেন পিরোজপুর জেলা শহরে। কখনো সেগুলো খুচরা আবার কখনও পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমানে পিরোজপুর পৌর এলাকাধীন ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রচুর পরিমাণে টমেটো, লাউ, শশা, লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন শাকসবজি উৎপন্ন হচ্ছে। বর্তমানে এখানকার চাষিরা জমির পরিচর্যা, সবজি সংগ্রহ ও বিক্রির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে সদর উপজেলার খলিশাখালী গ্রাম। সেখানে শতাধিক চাষিরা বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদন করছেন। সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের মাচাঙ এ ঝুলছে বিভিন্ন আকারের লাউ। কেউ আবার ক্ষেত থেকে ফসল সংগ্রহের পর আবার নতুন করে তা তৈরি করছেন পুনরায় বীজ বপনের জন্য।

এ সময় কথা হয় ওই এলাকার যুবক কৃষক আলাউদ্দিন (৩৫) এর সাথে। সে চার বছর ধরে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। আলাউদ্দিন জানান, তার গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষক স্বল্প ও ব্যাপক পরিসরে সবজির চাষ করছে। সারা বছরই আলাউদ্দিনের ক্ষেতে কোনো না কোনো ফসল থাকে। সকল খরচ মিটিয়ে বছর শেষে এক বিঘা জমি থেকে সে ৮০/৯০ হাজার টাকা লাভ করতে পারে।

ছোট খলিশাখালী গ্রামের আরেক কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, প্রতিনিয়ত কৃষি কাজের উপর মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তাই অন্যান্য পেশা ছেড়ে অনেকেই এখন কৃষি কাজের প্রতি ঝুঁকছে। এছাড়া বাজারে সবজির দাম ভালো থাকায় তারাও খুব খুশি।

আরেক কৃষক আলামগীর হোসেন বলেন, তারা নিজেরাই তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। ফলে তারা ভালো দামও পাচ্ছেন।

বাজারে টাটকা সবজি পেয়ে শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও বেজায় খুশি। পিরোজপুর শহরের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন জানান, পূর্বে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সবজির উপর নির্ভর করত। তবে সেগুলো পরিবহন করায় সময় বেশি লাগায় আর টাটকা থাকত না। তবে উপায় ছিল না। বাধ্য হয়েই সেগুলো কিনতে হত। তবে বাজারে স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত শাকসবজি পেয়ে তিনি খুবই খুশি। বেলায়েত জানান, শীতকালের মতো সারা বছর এরকম সবজি পাওয়া গেলে তাদের আর কোন চিন্তা করতে হত না, সব সময়ই তারা বাজারে টাটকা সবজি পেত।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, কৃষি বিভাগ বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের শাকসবজি উৎপাদন ও ফলদ গাছ রোপণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে সাধারণ মানুষও তাদের আহ্বানে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়ে শাকসবজি উৎপাদন ও ফলদ গাছ রোপণের প্রতি ঝুঁকছে। এমনকি ব্যাপকভাবে লাভবানও হচ্ছে।

পিরোজপুর-বাগেরহাট-গোপালগঞ্জ সমন্বিত কৃষি প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগ সদর উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতির ২৮ প্রকার সবজি ও ফলজ গাছের ৯০টি প্রদর্শনী, বাংলাদেশ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র চাষিদের জন্য কৃষি সহায়ক প্রকল্পের আওতায় ২০টি প্রদর্শনী এবং অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় আরও ৬৩টি প্রদর্শনীর করেছে বলেন জানান কৃষি কর্মকর্তা। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে কৃষকদের সার ও বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রদর্শনী দেখে কৃষকরা ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এর ফলে কৃষকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও শাকসবজি উৎপাদন ও ফলদ গাছ রোপণের প্রতি প্রতিনিয়ত আগ্রহী হচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে পিরোজপুরে সবজি ও বিভিন্ন জাতের ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অন্যান্য একাকার উৎপাদিত ফসলের প্রতি পিরোজপুরের মানুষের নির্ভরতা কমেছে বলে জানান তিনি।