পাইকগাছায় খেজুর রসের সঙ্কট

পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা : পাইকগাছায় তীব্র সঙ্কট চলছে খেজুর রসের। আগাম বুকিং দিয়েও মিলছে না রস, এমনকি এক হাঁড়ি রসের জন্য অপো করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। তীব্র সঙ্কটের মধ্যে কিছুটা হলেও চাহিদা পূরণ করছে লোনা পানি মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের উৎপাদিত রস। তবে চাহিদা এতটাই বেশি সরবরাহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় রস সংগ্রহকারীদের। প্রতিদিন সূর্য উদয়ের আগেই কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেয় অসংখ্য ক্রেতা।

উল্লেখ্য খেজুর রসের জন্য উপকূলীয় এ এলাকা এক সময় খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়। বিগত কয়েক বছর আগেও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে, খেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দু’ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোন প্রকার পরিচর্চা ছাড়ায় অনেকটাই প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠত খেজুর গাছগুলো। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রসদিয়ে তৈরী করা হতো গুড়। খেজুর গুড় অত্যান্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা পূরণ করে বাড়তি গুড় সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, লবণ পানির আগ্রাসন ও জ্বালানী হিসাবে ইট ও টালী পোড়ানোর কাজে অবাধে খেজুর গাছ ব্যবহারের ফলে মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় খেজুর গাছ।

বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা তে খামারের পাশে এমনকি রাস্তা-ঘাটের পাশেও দেখা মেলেনা খেজুর গাছের। অনেকটাই বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব গুরুত্বপূর্ণ এ গাছ।ঞ্চ  রস সংগ্রহ করে অনেকেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করলেও অধিকাংশরাই ছেড়ে দিয়েছেন পূর্বের এ পেশা। দু’একজন এখনো ধরে রেখেছেন পুরোনো এ পেশা। ব্যক্তি পর্যায়ে অসংখ্য খেজুর গাছ এখন আর তেমন কারও নাই। তবে পৌর সদরে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, লোনাঞ্চ পানি কেন্দ্রের অভ্যন্তরে রয়েছে দু’শতাধিকের ও অধিক খেজুর গাছ।

যা বিগত কয়েক বছর এলাকার রসের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এ বছরও এলাকার একমাত্র রস প্রাপ্তির স্থান হচ্ছে লোনা পানি  কেন্দ্র। তাই প্রতিদিন ভোরে কেন্দ্রের সামনে এক হাড়ি রসের জন্য উপস্থিত হয় অসংখ্য নারী-পুরুষ। কিন্তু উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় কাক ডাকা ভোরে উপস্থিত হয়েও মিলছে না এক হাড়ি রস। রস নিতে আসা আব্দুল হাই জানান, এমনকি আগাম বুকিং দিয়েও অপো করতে হয় দিনের পর দিন। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর দামও বেড়েছে কিছুটা। রস সংগ্রহকারী আব্দুল করিম জানান, চাহিদার তুলানায় উৎপাদন কম হওয়ায় রসের এ সঙ্কট চলছে। গাছের সংখ্য কমে যাওয়ায় প্রতি বছরই রসের প্রাপ্তিতাও কমে আসছে এ বছর প্রতি হাড়ি রস ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।