মুজাহিদ ও সালাউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকরে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান

তুরস্কের দুঃখ প্রকাশ, জাতীয় সংহতির আহ্বান

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করায় পাকিস্তান সরকার গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে দুঃখ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। সেই সাথে বাংলাদেশকে জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

গত ২৩ নভেম্বর সোমবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দুঃখের সাথে অবগত হয়েছি যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে।’

এতে আরো বলা হয়, ‘এটা উদ্বেগের কারণ যে, দুই শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড বিলোপকারী একটি দেশ হিসেবে তুরস্ক বলছে, এই পদ্ধতিতে অতীতের ত নিরসন করা সম্ভব নয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, শাস্তির েেত্র বাংলাদেশ যতো দ্রুত সম্ভব মৃত্যুদণ্ডের বিকল্প অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করবে। যা সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠায় অধিক সহায়ক হবে।’

বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দু’জন বিরোধী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তান সরকার গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ২২ নভেম্বর  রোববার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকারের প থেকে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে আমরা ল্য করেছি যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাকিস্তান শঙ্কিত।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ঘটনার ব্যাপারে বাংলাদেশে যে ত্রুটিপূর্ণ বিচার চলছে সে বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও ল্য করেছি।”

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সেই রায় গত ২১ নভেম্বর শনিবার মাঝরাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়।

পাকিস্তান সরকার বলছে, “পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল যে সমঝোতা হয়েছে সে অনুসারে বাংলাদেশে জাতীয় সমঝোতার প্রয়োজন আছে। এই সমঝোতায় ১৯৭১ সালের ব্যাপারে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর কথা বলা হয়েছে।”

পাকিস্তান বলছে, এই সমঝোতার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি আরো বাড়বে।

পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে আসছে শুরু থেকেই।

এর আগেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর পাকিস্তান সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এই বিচার প্রক্রিয়ায় তার পক্ষে পাকিস্তান থেকে কয়েকজন সাফাই সাক্ষী নিয়ে আসার জন্যেও আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন।

পাকিস্তান সংসদে পিপিপির নিন্দা প্রস্তাব

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব জমা হয়েছে পাকিস্তান সংসদে।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প থেকে প্রস্তাবটি গত ২৩ নভেম্বর সোমবার সংসদে পেশ করেন পিপিপির সংসদ সদস্য শাজিয়া মারি, নাফিসা শাহ, আজরা ফজল এবং সৈয়দ গুলাম মুস্তফা শাহ।

সংসদ সচিবালয়ে জমা দেয়া প্রস্তাবে ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে : ‘বাংলাদেশের দুজন প্রবীণ নেতার বিচারিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে (পাকিস্তান) সংসদ। ১৯৭১ সালে যারা অবিভক্ত পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক এবং বেআইনি পদপক্ষে মৌলিক মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি পরিপূর্ণ অশ্রদ্ধা প্রদর্শন। আমরা এই প্ল্যাটফরম থেকে সরকারের কাছে দাবি জানাই  আন্তর্জাতিক ফোরামে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ পদপক্ষে গ্রহণে (বাংলাদেশ সরকারকে) বিরত রাখার জন্য বৈশ্বিক  প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত।’