শহীদের স্বপ্নের সমাজ গড়ার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের নির্মম ষড়যন্ত্রের সময়োচিত জবাব দেয়া হবে-রফিকুল ইসলাম খান

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, জামায়াতকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েই প্রতিশোধ-প্রতিহিংসায় উন্মত্ত সরকার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। ক্ষমতার ৬ বছরে সারাদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের শত শত কর্মী হত্যা করে বাংলাদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় সকল প্রকার আইনগত ও মানবিক অধিকার হরণ করে কামারুজ্জামানকে তড়িঘড়ি করে হত্যা করলো সরকার। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় কর্মীদের একবিন্দু পরিমাণ বিচলিত করতে পারেনি স্বৈরাচারী সরকার। গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে। শহীদের স্বপ্নের সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের এই নির্মম ষড়যন্ত্রের সময়োচিত জবাব দেয়া হবে। শহীদদের রক্তেভেজা বাংলায় আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করেই শহীদ কামারুজ্জামানের প্রতিফোঁটা রক্তের ঋণ শোধ করা হবে।

গত ১২ এপ্রিল রোববার দেয়া বিবৃতিতে মহানগরী আমীর বলেন, কথিত যুদ্ধাপরাধ আইন আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ তো নয়ই বরং এখানে দেশীয় মানও রক্ষা করা হয়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই বিচার ছিলো সরকারের ছকে সাজানো প্রহসন। বিচারপতির স্কাইপি কেলেংকারি, ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে সাক্ষী অপহরণ, মন্ত্রীদের বিচার নিয়ে আগাম মন্তব্য ও প্রসিকিউশনের সেফ হাউস কেলেংকারিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত আচরণে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে কথিত ট্রাইব্যুনাল ব্যপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের গড়া এই ট্রাইব্যুনালের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আসামিপক্ষকে মানবিক ও আইনগত সুযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে। দেশের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান, পরামর্শ, মতামত উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার তার ঘৃণ্য প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকার তার এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশই নয় সারা বিশ্বে এটি একটি নিকৃষ্ট রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকলো। তিনি অবিলম্বে আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ সকল নেতার মুক্তির দাবি জানান।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকার জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ধারার আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করে আমৃত্যু তাদের ক্ষমতায় থাকার স্থায়ী বন্দোবস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ইতিহাস সাক্ষী আবহমানকাল থেকেই বাতিলপন্থী শক্তি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলার অভিযাত্রীদের জুলুম-নির্যাতন, হত্যা করে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছে, কিন্তু রক্ত ঝড়িয়ে, হত্যা করে কোনো আদর্শকে কখনো স্তব্ধ করা যায়নি। বরং ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারাই নিঃশেষ হয়ে গেছে। এর আগেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে। কিন্তু জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা যত বৃদ্ধি পেয়েছে জনগণের হৃদয়ে জামায়াতের অবস্থান তত মজবুত হয়েছে। আদর্শিক সংগ্রামকে বিজয়ী করতেই যে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল কর্মীরা জীবন রক্ষার জন্য কোনো রাজনৈতিক গড়াপেটা করে না, রাষ্ট্রপতির মার্জনার তোয়াক্কা না করে শাহাদতের অমীয় সুধা পান করতেই ফাঁসির মঞ্চে সুস্থিরভাবে হেঁটে যায় সে আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার শক্তি এই জালিম সরকারের নেই।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সরকারের বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে মাঠে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে প্রতিবাদী জনতা নগরবাসী তাদের সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের শাহাদাত স্মরণে রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াতের কর্মীরা দোয়া মাহফিল করেছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, মগবাজার, লালমাটিয়া, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করায় তাদের আন্তরিক মুবারকবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারের তীব্র বাঁধা, হুমকি-ধমকি, জুলুম-নির্যাতন, গণগ্রেফতার উপেক্ষা করে এই ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দেশের ইসলামপ্রিয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার ঘৃণ্য আওয়ামী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে গণআন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবারের হরতালসহ সকল কর্মসূচি সফল করতে তিনি নগরীর সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহল, সাংবাদিক, ও ব্যাংক-বীমার কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক-ছাত্র, আইনজীবী, মেহনতি মানুষ, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল পেশা ও শ্রেণীর মানুষকে গণহত্যা, নৃশংসতা ও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে এসে মানব ইতিহাসে এ কলঙ্কজনক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশের আপামর জনতা ও বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।