মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত

জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল চলাকালে রাজধানীতে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী (পূর্ব)’র মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতে ইসলামীর ডাকে গত ১৩ এপ্রিল সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালের আগের রাতে পুলিশের গুলিতে সিরাজগঞ্জ শহরে ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মী আনিসুর রহমান আনিস এবং রাজশাহীতে জামায়াত কর্মী শহীদুল ইসলাম শহীদ হয়েছেন। রাজধানীসহ সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে আড়াই শতাধিক নেতাকর্মী। চলেনি দূরপাল্লার যানবাহন। স্থবির ছিল ব্যবসা বাণিজ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি, গ্রেফতার অভিযানের মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন স্পটসহ সারাদেশেই মিছিল সমাবেশ, পিকেটিং করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১১ এপ্রিল শনিবার দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ। হরতালে এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত ছিল।

গত ১২ এপ্রিল রোববার রাতে রাজধানীর মাতুয়াইল ও কদমতলী এলাকা থেকে ৪ জন জামায়াত ও শিবির কর্মীকে আটক করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। কদমতলী থেকে আটককৃত শিবির কর্মীরা à¦¹à¦²à§‡à¦¨Ñ à¦•à¦¬à¦¿ নজরুল কলেজের ছাত্র মো. শামীম, ঢাকা কলেজের ছাত্র জাহিদুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান। মাতুয়াইলে আত্মীয়ের বাড়িতে লক্ষ্মীপুর থেকে বেড়াতে আসা  ডা. মাহবুব রব্বানীকে আটক করেছে পুলিশ।

হরতালের সমর্থনে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রাজধানীর কল্যাণপুর, মৌচাক, খিলগাঁও, কমলাপুর, ভাসানটেকের ইব্রাহীমপুর বাজার,  ডেমরা কলেজ রোড, কাজলা ব্রিজ,  à¦¡à§‡à¦®à¦°à¦¾ রোড, লালবাগ, ধানমন্ডি, উত্তরা-৫ নং সেক্টর, বাবুবাজার, মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হরতালের কারণে গত ১৩ এপ্রিল ব্যস্ততম ঢাকার চিত্র পাল্টে যায়। সকালে হরতালের সমর্থনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। সকালে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগে। যাত্রাবাড়ীতে সকালে পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। অনেকেই পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছেছে। অনেকে আবার বিকল্প যান হিসেবে রিকশা ব্যবহার করেছে। তবে বিকেলের দিকে যানবাহন বাড়তে থাকে। সকালে এখানে অধিকাংশ মার্কেট এবং ফুটপাত বন্ধ ছিল। একইভাবে হরতালের কারণে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে ঢাকার বাইরে থেকে কোনো বাস প্রবেশও করেনি। এখানে বাস মালিকরা উপস্থিত থেকে বাস ছাড়ার চেষ্টা করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। এখানে হরতালের পক্ষে বিপক্ষে কোনো ধরনের মিছিল মিটিং হয়নি। তবে এই এলাকার সব স্কুল কলেজ ছিল বন্ধ। এদিকে সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। হরতালের কারণে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো দূরপাল্লার লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এসব লঞ্চ বহির নোঙ্গরে থাকতে দেখা গেছে। হরতালের সমর্থনে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে মিছিল করেছে স্থানীয় জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীরা। তবে এখানে রিকশার যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো। এখানের সব ধরনের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বন্ধ। সকালের দিকে ফার্মগেইট এলাকায় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হলেও ১০টার পরে এখানে তেমন পরিবহন ছিল না। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলি থেকে বিকেল পর্যন্ত দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে আরেক আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মহাখালী থেকেও কোনো ধরনের দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এখানে ফুটপাতের  অধিকাংশ দোকানই বন্ধ ছিল। হরতালের মধ্যেও কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল করলেও তার সংখ্যা ছিল খুবই কম। হরতালের কারণে ট্রেন সিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এতে  করে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। সকালে হরতালের সমর্থনে খিলগাঁও শাজাহানপুর এলাকার মিছিল করে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। এসময় পথচারীরা করতালি দিয়ে তাদের সমর্থন জানায়। এখানের সব কয়টি স্কুল কলেজ ছিল বন্ধ। সকালে পায়ে হেঁটে এখান থেকে অনেকেই অফিসে গিয়েছেন। তবে এখান থেকে গুলিস্তান সড়কে লেগুনা চলাচল করেছে নিয়মিত।  দেশের একমাত্র ব্যাংক পাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিলের সব কয়টি ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও তাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল খুবই কম। এসব প্রতিষ্ঠানের মেইন গেট বন্ধ থাকলেও কলাপসিবল গেইট দিয়ে গ্রাহকরা প্রবেশ করেছে। সকালের পরে এখানে তেমন যান চলাচল করেনি। একইভাবে সকালে হরতালে সমর্থনে এখানে মিছিল করেছে স্থানীয় জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। তবে এসময় কোনো হতাহত আর গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি। (আরো খবর গ্রাম বাংলা-এর পাতায় দেখুন)