চুয়াডাঙ্গায় বিএসএফের গ্রেনেড হামলায় নিহত জাকিরের সংসারে হাহাকার

চুয়াডাঙ্গায় বিএসএফের গ্রেনেড হামলায় নিহত জাকিরের সংসারে হাহাকার

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় বিএসএফএর সাউন্ডগ্রেনেড হামলায় শুধু গরু ব্যবসায়ী জাকিরই নিহত হয়নি, চুরমার হয়ে গেছে বানুর সংসার। স্বামী জাকির নিখোঁজ হবার পর চারদিন হাড়ি ওঠেনি চুলায়। প্রতিবেশীরা তিন বেলা যে খাবার দিয়েছে তাতেই কোনোরকমে দিনাতিপাত করছে জাকিরের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। দামুড়হুদা উপজেলার  কামারপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পুরো গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া। আর জাকিরের বাড়িতে কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছে। তার স্ত্রী শখের বানু, মা জোসনা বিবি, মেয়ে সাথী ও ছেলে মিঠুন কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। নিহত জাকিরের স্ত্রী শখের বানুর কন্ঠে কথা বের হচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বারাদী সীমান্তের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম কামারপাড়া। গত ৯ অক্টোবর ভোরে এ গ্রামের একদল গরু ব্যবসায়ী সীমান্তবর্তী মাথাভাঙ্গা নদী সাঁতরে ভারতের চাপড়া থানার বিজয়চন্দ্রপুর গ্রামে যায় গরু আনতে। গরু নিয়ে ফিরে আসার সময় বিজয়পুর ক্যা¤à§‡à¦ªà¦° টহলরত বিএসএফ তাদের উপর হ্যান্ড গ্রেনেড (হাত বোমা) ছুঁড়ে মারে। এ সময় সবাই পালিয়ে আসতে পারলেও সেই থেকে নিখোঁজ হয় জাকির। পরদিন ১০ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় জাকিরের ক্ষত-বিক্ষত লাশ ৮২ নম্বর মেইন পিলারের কাছাকাছি সীমান্ত সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদী থেকে লাশটি তীরে টেনে আনেন এলাকাবাসী। খবর দেন স্থানীয় বাড়াদি বিজিবি ক্যা¤à§‡à¦ªà¥¤ খবর পায় দামুড়হুদা থানা পুলিশ।  রাত ১১টায় মাথাভাঙ্গা নদীর ধার থেকে জাকিরের লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয় পুলিশ। অথচ এরআগে বিকাল চারটায় সীমান্তের ৮১ নম্বর মেইন পিলারের কাছে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে মিথ্যাচার করে বিএসএফ। এ বৈঠকের ঘণ্টাখানেক পরেই মাথাভাঙ্গা নদীতে ভেসে ওঠে হতভাগ্য জাকিরের লাশ।

 à¦®à¦™à§à¦—লবার সকালে জাকিরের লাশ ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরিবার-স্বজন ও এলাকাবাসীদের অভিযোগ,  বিএসএফ তাকে ধরে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে।

কামারপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য আশিক ইকবাল চঞ্চলের সাথে। এ ব্যাপারে তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে গরু আনার বৈধতা দিয়েছে। প্রতি জোড়া গরুতে সরকারে এক হাজার টাকা রাজস্ব নেয়। এ ছাড়াও যারা ভারত থেকে গরু এনে ব্যবসা করে তারা প্রতি জোড়া গরুর জন্য বিজিবি, পুলিশ, অন্যান্য সংস্থাকে টাকা দেয় নিয়মিত। এত কিছুর পরও একজন নিরীহ মানুষ গরু আনতে গিয়ে ভারতে বিএসএফএর হাতে ধরা পড়লে নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। তিনি দুদেশের হাইকমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে এসব নিরীহ বাংলাদেশীদের মেরে না ফেলে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে।”

 à¦ ঘটনার পর বিজিবির চুয়াডাঙ্গা-৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, “সীমান্ত পেরিয়ে যেন কেউ অবৈধভাবে ভারতে যেতে না পারে সে জন্য বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গরু আনতে সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে ভারতে কেউ যেতে পারবে না। প্রয়োজনে ভারতীয়রা গরু সীমান্ত পার করে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে দিয়ে যাবে।”

১০ মাস আগে কামারপাড়ার পাশের গ্রাম নাস্তিপুরের গরু ব্যবসায়ী আবুকে একইভাবে পিটিয়ে মেরে তার লাশ এই মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়েছিল বিএসএফ। এ ছাড়াও গত ৫ নভেম্বর একই সীমান্তের কামারপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমানকে (৩২) ধরে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে মুমূর্ষ অবস্থায় মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে ফেলে রেখে যায় বিজয়পুর ক্যা¤à§‡à¦ªà¦° বিএসএফ।