ঘূর্ণিঝড় সিডরের সাত বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণ হয়নি

কাউখালী : সিডরের ৬ বছর পরও কুমিয়ানে বিশাল বিদ্যুতের টাওয়ার সিডরের তাণ্ডবলীলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে লোকালয়
বরগুনা সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় সিডরের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। এত দিনেও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনা জেলার ৩৬২ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হয়নি। এ কারণে প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ফসলি জমি ও লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার প্রায় ১৮০ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ও এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ছয় জেলার ৫২৭টি বাঁধের ৬৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ৫ দশমিক ১৯ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও স্লুইসগেট পুনঃণির্মাণ, অন্যান্য অবকাঠামো মেরামত ও উঁচু করতে ৪২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিশ্বব্যাংক ওই প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট করে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ২৮৯ কোটি টাকা সহায়তা দিতে সম্মত হয়। ওই সীমিত অর্থ দিয়েই ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে ও অর্থ বরাদ্দ স্থগিত থাকায় বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে বাঁধ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কারণে লোনা পানি ঢুকে গত চার বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ফসলি জমিতে লবণের মাত্রা ২৬ শতাংশ বেড়েগেছে বলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে বিশেষত সিডরের পর এই মাত্রা বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ ভাগ।

ইনস্টিটিউটের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ২০০৯ সালের জরিপ অনুযায়ী পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা হচ্ছে শূন্য দশমিক ৭৫ ডিএস/এম। অতিমাত্রার লবণাক্ততার কারণে (১২ দশমিক ১ থেকে ১৬ ডিএস/এমের ওপরে) বরগুনা জেলায় ১৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ৩৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর, ভোলায় ১২ হাজার ৭৭০ হেক্টর ও ঝালকাঠি জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। এতে দক্ষিণের শস্যভাণ্ডার খ্যাত এই চার জেলায় ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৬০০ হেক্টর। ফলে তিন লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন (হেক্টরপ্রতি পাঁচ টন হিসেবে) ফসল উৎপাদন কমেছে।

পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর মধ্যে ৩৬২ কিলোমিটার এখনো মেরামত যায়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরগুনা জেলা কর্মকর্তা অশোক কুমার হালদার বলেন, ‘আমরা বারবার কৃষির উন্নয়নের জন্য এ অঞ্চলের বাঁধগুলো মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি। দ্রুত এটা করতে না পারলে অচিরেই ফসল উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে’।