কোনো কাজে লাগছে না ভোলায় উৎপাদিত গ্যাসের ৭ ভাগ

ইউনুছ শরীফ, ভোলা  থেকে : ভোলায় দৈনিক ৬৮.৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের বিপরীতে বর্তমান চাহিদা রয়েছে ৯.৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট।  কোনো কাজে লাগছে না উৎপাদনের প্রায় ৭ ভাগ।  প্রস্তাবিত শিল্প কারখানায় সংযোগের পর উদ্ধৃত্ত থাকছে। এদিকে  আবাসিক গ্যাস সংযোগ বিল বাড়ার খবরে আতঙ্কিত গ্রাহকরা।

২০১৫ সালের আগে আবাসিক এলাকায় দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তাবিত ৪৫ কিলোমিটার গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। জানুয়ারিতেই জাতীয় গ্রিডে সংযোগ হচ্ছে ভোলার গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ এবং গ্রিডের আওতায় চলে যাচ্ছে ভোলা। মার্চ নাগাদ ২২৫ মেগাওয়াট থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা এবং এর সুবিধা পাচ্ছে ভোলাবাসী। তবে গ্রিড সংযোগের অবকাঠামো নিয়ে হতাশায় সংশ্লিষ্ট মহল। গত ১৯ অক্টোবর রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খানের আগমন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে মত বিনিময় সভায় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি, ওজোপাডিকো, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পেট্রোবাংলা তাদের ভোলার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট পেশ ও বিভিন্ন বক্তাদের বক্তব্য এবং প্রশ্নোত্তরে এসব তথ্য জানা যায়।

তবে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান বলেছেন, ভোলাতে গ্যাসভিত্তিক শিল্প, কল কারখানা, বিদ্যুৎ প্লান্ট, সিএনজি স্টেশন, গার্মেন্টস শিল্পসহ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠবে। আবাসিক এলাকায় দ্বিতীয় কিস্তিতে গ্যাস সংযোগের কাজ চলছে। 

জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক আবদুল মোমিন টুলু, পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, পেট্রো বাংলার পরিচালক গোলাম মোস্তফা, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেকুজ্জামান, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন, তজুমুদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল্যাহ জসিমসহ ওজোপাডিকো, পেট্রোবাংলা, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও ভোলার ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

মতবিনিময়ে পেট্রোবাংলার সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর পরিসংখ্যানে জানাযায়, ভোলা শহরে আবাসিক এলাকায় গৃহস্থালীতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে মিটার ছাড়া ২৫৩০টি। মিটার যুক্ত ৮টি। সি এন জি, শিল্প ও বাণিজ্যিাক আবেদনপত্র বিক্রি হয়েছে ৩৬টি। বাণিজ্যিক আবেদনপত্র জমা হয়েছে ৪টি। সিএনজি স্টেশনের প্রাথমিক সম্মতি দেয়া হয়েছে ২টি। ভেন্সার এনার্জি রিসোর্সে এবং আবাসিক এলাকায় বর্তমান গ্যাস চাহিদা ৯.৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এবং ভোলায় প্রস্তাবিত শিল্প, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগসহ মোট চাহিদা ৪৪.৪৪ ঘনফুট। অথচ শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে উৎপাদন যোগ্য মওজুদ ৫০০ বিলিয়ন ঘনফুট থেকে দৈনিক ৬৮.৫০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন করা যাবে। বর্তমান চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন যোগ্য প্রায় ৭ ভাগই অকেজো পরে আছে। যা প্রস্তাবিত সংযোগেও শেষ হচ্ছেনা। অথচ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগের অভাবে গ্যাস ব্যবহার করতে পারছেনা ভোলাবাসী। যার কারণে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত। সাম্প্রতিক কালে ভোলা সদর আবাসিক এলাকা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সংযোগের জন্য যে ৪৫কিলোমিটার লাইনের গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে তা গত ২৫.০৯.১৪ আন্তঃমন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ডিপিপিতে সুপারিশ করা হয়েছে। যার সময় সীমা ১৫ সালের ডিসেম্বর। পেট্রো বাংলার সহজ শর্তের ঋণের এ প্রকল্প কবে নাগাদ জট খুলবে তা নিয়েও সংকিত ভোলাবাসী। নিজেদের মওজুদের গ্যাস নিজেরা ভোগ করতে পারছেনা বলেও মতবিনিময় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। এ দিকে আবাসিক সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে যে প্রস্তাবনা চলছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খানের বক্তব্যে তার সত্যতাও ফুটে ওঠেছে মত বিনিময় সভায়। কি পরিমাণে বিল বাড়ছে তা স্পষ্ট না হলেও ৮শ থেকে ১২শত টাকার মধ্যে হতে পারে বলে যানা যায়।

অপরদিকে ওজোপাজিকোর অনিয়ম, বিলে অসামঞ্জস্য, লাইন পরিষ্কারকরণ, মিটার সমস্যা, নতুন সংযোগসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে দক্ষ জনবল ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের স্বচ্ছ আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। খুলনা ও যশোর থেকে ট্রান্স মিটার আনার পরিবর্তে ভোলায় ট্রান্স মিটার মওজুদের প্রস্তাব করা হয়। এবং সংযোগ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বেসরকারি ঠিকাদার নিয়োগের বিষয় প্রক্রিয়াধীন বলে জানান, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান।

সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ জনসাধারণের দোর গোড়ায় পৌঁছানের লক্ষে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান অতিথি। এ ব্যাপারে আগামী জানুয়ারি মাসে জাতীয় গ্রিডের সাথে ভোলার সংযোগ স্থাপন হলে সঞ্চালন লাইন সংস্কার, সাব মেরিন ক্যাবলসহ যাবতীয় সমস্যা দূর হওয়া সম্ভব। তবে ২২৫ মেগাওয়াট নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ২০১৫ সালের মার্চ মাস নাগাদ ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জাতীয় গ্রিডে সংযোগ স্থাপন করা যাবে বলে জানান ওজোপাডিকো। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়নের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয় মত বিনিময় সভায়। সব মিলিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বক্তাদের বক্তব্যে ভোলার আবাসিক এলাকায় গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগের বিষয়টির জোর দাবি যেভাবে উঠেছে মত বিনিময় সভায়-সেভাবে আশ্বাস মেলেনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খানের বক্তব্যে। যা হতাশারই শামিল বলে মন্তব্য ভোলার বিশিষ্ট জনদের।