সংবাদ শিরোনামঃ

গণআন্দোলনের ডাক ** সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে দেশজুড়ে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ** বিচারপতিদের অভিশংসন, সম্প্রচার নীতিমালা গণতন্ত্রের ওপর ডেমোকিসের ছুরি ** ইরাকে পশ্চিমাদের হোলি খেলা ** অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন ** সরকার স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ভিত্তিমূলে আঘাত করছে ** বন্যাকবলিতদের দুর্দশা লাঘবে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন ** হীনম্মন্যতাবোধ এবং সেবাদাসদের দৌরাত্ম্য ** সাম্রাজ্যবাদ ও কাজী নজরুল ইসলাম ** পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে উদযাপিত হলো ঈদুল ফিতর ** উপমহাদেশে রেল দুর্ঘটনার শীর্ষে বাংলাদেশ, ক্ষয়ক্ষতিতে ভারত ** বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি ** মুসলমানদের অনৈক্যের কারণেই ইসরাইল গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪২১, ২৫ শাওয়াল ১৪৩৫, ২২ আগস্ট ২০১৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা নিয়ে গবেষণামূলক একটি বই বাংলাদেশের রাজনীতির বেশ কিছু অজানা অধ্যায় উন্মোচন করেছে। ‘জাসদের উত্থান-পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বইটির লেখক মহিউদ্দিন আহমদ নিজে জাসদের রাজনীতি করতেন। সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন জাসদের মুখপাত্র দৈনিক গণকন্ঠে।

তার বইয়ের যে অংশগুলো প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিষয়টি জাসদ নেতারা অবহিত ছিলেন। কর্নেল তাহের ও তার ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ভিসি সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত উগ্রবাদী। প্রবলভাবে শেখ মুজিব বিরোধী। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিব হত্যার সাথে জিয়াউর রহমানকে দায়ী করলেও জাসদের নেতাদের ভূমিকা নিয়ে অদ্ভুত নীরবতা পালন করছে। কর্নেল তাহের শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ কবর দেয়ার বিরোধী ছিলেন। তিনি তার লাশ বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের আকস্মিকতায় অনেকেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তেমন উত্তেজনা ল করা যায়নি। হুদা বাতেনকে বলেছিলেন, এ রকম একটা ঘটনা দু’ একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবার কাম্য ছিল। শুধু দুটো বিষয়ে তাঁদের অনেকের অজ্ঞতা ছিল। প্রথমত, ঘটনাটি কবে ঘটানো হবে এবং দ্বিতীয়ত, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হবে কি না। রশিদ-ফারুকের পরিকল্পনায় এই অভ্যুত্থানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই হত্যা পরিকল্পনার কথা জানতেন না।

মেজর নুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। পরে তিনি সর্বহারা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। সিরাজ শিকদারের নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি ুব্ধ হন। ১৫ আগস্টের কয়েক দিন পর সর্বহারা পার্টির কয়েকজন নেতা কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটা বাসায় সন্ধ্যাবেলা বৈঠক করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন, আকা ফজলুল হক ও মহসীন আলী। তাঁরা নূর ও ডালিমকে ডেকে পাঠান। নূর একাই এসেছিলেন। শেখ মুজিবের পরিবারের সবাইকে হত্যা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নূর বলেন, ‘ওরা আমার নেতাকে খুন করেছে, আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি।’ নূরের উদ্ধত আচরণে এবং নৃশংসতার পরিচয় পেয়ে জিয়াউদ্দিন ুব্ধ হন।

অনেক দিন পর বনানী ডিওএইচএসে কর্নেল ফারুকের বাসায় ফারুক ও রশিদের সঙ্গে আলাপ করার সময় আকা ফজলুল হককে কর্নেল রশিদ বলেছিলেন : শেখ মুজিবকে রেখে ক্যু করা যাবে কি না, তা নিয়ে আমরা অনেক ভেবেছি। কিন্তু দেখলাম তা সম্ভব নয়। রীবাহিনীর চিফ ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানকে আগেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত হয়। মুজিব পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সিদ্ধান্তটি অভিযানে অংশ গ্রহণকারীরা তাৎণিকভাবে নিয়েছিল।

মুজিব হত্যার পরিকল্পনায় বিমানবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তাঁদের বাদ দিয়েই এই অপারেশন চালানো হয়। এ রকম একটা ‘অ্যাডভেঞ্চারে’ শরিক হতে না পেরে তাঁরা মনঃুণœ হয়েছিলেন। এর প্রকাশ ঘটেছিল নভেম্বরে।

কর্নেল তাহের সম্ভবত জানতেন না, ১৫ আগস্ট তারিখটিই অভ্যুত্থানের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে এ রকম একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। কোটি টাকার প্রশ্ন ছিল, কবে, কখন? শেখ মুজিবের সরকারকে উৎখাতের জন্য তাহেরের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল। শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ােভ ছিল অপরিসীম।

তাহের মনে করতেন, ‘মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়নে চরম অবহেলা দেখিয়েছে এবং রীবাহিনীর মতো একটা কুখ্যাত আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে করা গোপন চুক্তির ব্যাপারেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

বাহাত্তর সালের নভেম্বরেই এসব ঘটেছিল এবং এ কারণেই লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন এবং তিনি যাঁর যাঁর রাজনৈতিক লাইন বেছে নিয়েছিলেন। অবশ্য তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করতেন।’ ছিয়াত্তরে তাহের ও অন্যদের বিচারের সময় ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দীতে তাহের এসব কথা উল্লেখ করেন।

শেখ মুজিব সম্পর্কে কর্নেল তাহেরের মূল্যায়ন ছিল এ রকম : শেখ মুজিব জনগণের নেতা ছিলেন। এটা অস্বীকার করার অর্থ হবে সত্যকে অস্বীকার করা। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তাঁর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার জনগণের ওপরই বর্তায়। জনগণের জন্য সঠিক পথ হবে জেগে ওঠা এবং প্রতারণার দায়ে মুজিবকে উৎখাত করা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে জনগণ মুজিবকে নেতা বানিয়েছে, তারাই একদিন স্বৈরাচারী মুজিবকে ধ্বংস করবে। জনগণ কাউকে ষড়যন্ত্র করার অধিকার দেয়নি।

হুদার সঙ্গে কথাবার্তায় বাতেনের মনে হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। সবাই সবটা জানেন না। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একটা বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তাঁদের সবার ব্যক্তিগত ােভ ছিল।

আওয়ামী লীগ-বাকশালের বাইরে ওই সময় সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ছিল জাসদ। জাসদের প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান তখন দেশে নেই। দলে একাধিক ‘কেন্দ্র’। গণবাহিনীর ইউনিটগুলো বিভিন্ন জেলায় মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হকচকিত, বিহ্বল। জাসদের মধ্যে যাঁরা ষাটের দশকের রাজনৈতিক সংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন, ১৫ আগস্টের মতো একটা ঘটনা ঘটতে পারে, এটা তাঁরা কখনো চিন্তা করেননি।

১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা নগর গণবাহিনীর অন্যতম সদস্য মীর নজরুল ইসলাম বাচ্চুর নেতৃত্বে তিতুমীর কলেজের সহ-সভাপতি কামালউদ্দিন আহমদ, গণবাহিনীর আবদুল্লাহ আল মামুন, ওয়াহিদুল ইসলাম সুটুল ও রতন ধানমন্ডিতে তাজউদ্দীনের বাসায় যান। কামালের বাড়ি ঢাকার কাপাসিয়া থানায়। তাঁর বড় ভাই নৌবাহিনীর প্রাক্তন লিডিং সি-ম্যান সুলতানউদ্দিন আহমদ আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এবং জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীনের সঙ্গে তাঁর পূর্বপরিচয় ছিল এবং একই এলাকায় বাড়ি বলে তাঁদের মাঝে মধ্যে দেখা-সাাৎ হতো।

তাজউদ্দীনের বাসায় গিয়ে তাঁরা শুনলেন, তিনি গোসল করছেন। তাঁরা বাইরের ঘরে অপো করতে থাকলেন। মিনিট দশেক পর তাজউদ্দীন এলেন। পরনে একটা পায়জামা, গায়ে হাতাওয়ালা গেঞ্জি। সিলিং ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে দুই হাতের আঙুল দিয়ে ব্যাকব্রাশের মতো ভঙ্গিতে চুল থেকে পানি ঝরাচ্ছিলেন। পানির ঝাপটা কামালের চোখে-মুখে এসে লাগছিল।

তাজউদ্দীন উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকলেন, ‘বোকার দল লাল বাহিনী বানায়, নীল বাহিনী বানায়। কোনো বাহিনী তাঁকে বাঁচাতে পারল?’

বাচ্চু বললেন, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ তাজউদ্দীন বললেন, ‘কোথায় যাব? কেন তোমাদের সঙ্গে যাব?’ বাচ্চু বারবার বলছিলেন, ‘যেতেই হবে।’

তাজউদ্দীন বললেন, ‘এটা কারা করল? রাইটিস্টরা না লেফটিস্টরা? লেফটিস্টরা হলে আমাকে আর জীবিত রাখবে না।’ লেফটিস্ট বলতে তিনি পিকিংপন্থীদের বোঝাচ্ছিলেন। বাচ্চুর কথার জবাবে তিনি বললেন, ‘সিরাজ কোথায়? ও যদি বলে তাহলে যেতে পারি। তাকে নিয়ে আসো।’ বাচ্চু বেরিয়ে গেলেন। আধঘণ্টা পর তিনি ফিরে এসে জানালেন, সিরাজুল আলম খান কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। বাচ্চু জানতেন না, তিনি দেশে নেই। অগত্যা তাজউদ্দীনকে ছাড়াই তাঁরা ফিরে এলেন।

তাজউদ্দীনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং কেন, এটা বাচ্চু ছাড়া তাঁর অন্য সহযোগীরা জানতেন না। পঁচাত্তরের ২৬ নভেম্বরে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযানের ঘটনায় বাচ্চু নিহত হলে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এটা আর হয়তো কোনো দিনই জানা যাবে না, কে বাচ্চুকে পাঠিয়েছিল এবং কী উদ্দেশ্যে।

বাকশাল গঠন নিয়ে জাসদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ১৫ আগস্ট সকালে মুহসীন হলের ছাত্র নূর মোহাম্মদ ঢাকা গণবাহিনীর উপপ্রধান আবুল হাসিব খানের কাছে ঢাকা নগর গণবাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেনের একটা চিরকুট নিয়ে আসেন। চিরকুটে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের অফিসে ঢাকা নগর গণবাহিনীর জরুরি সভা হবে বলে উল্লেখ ছিল। সভা শুরু হলে আনোয়ার হোসেন উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘ভাইজান (লে. কর্নেল আবু তাহের) সকালে রেডিও স্টেশনে গিয়েছিলেন। তিনি মেজর ডালিমকে বকাঝকা করে বলেছেন, ’র মেজর হয়েছ, এখন পর্যন্ত একটা মার্শাল ল প্রকেমেশন ড্রাফট করতে পারলে না। জানো, কাল ইউনিভার্সিটিতে কারা বোমা ফাটিয়েছিল? দে আর মাই বয়েজ।’

লে. কর্নেল আবু তাহের মেজর রশিদের অনুরোধে সকাল নয়টায় ঢাকা বেতারকেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি খোন্দকার মোশতাক আহমদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মেজর ডালিম ও মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে দেখতে পান। তাঁর পরামর্শে ডালিমরা সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানকে বেতার ভবনে নিয়ে আসেন অভ্যুত্থানকারীদের পে বিবৃতি দেয়ার জন্য। তিনি খোন্দকার মোশতাককে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবগুলো ছিল:

১. অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করতে হবে;

২. সারা দেশে সামরিক আইন জারি এবং এর প্রয়োগ করতে হবে;

৩. দলনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে;

৪. বাকশালকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে;

৫. অবিলম্বে একটি গণপরিষদ তথা পার্লামেন্টের জন্য সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সামরিক শাসন জারির দাবি ছিল তাহেরের একান্ত নিজস্ব। এ বিষয়ে তিনি গণবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড কিংবা জাসদের পার্টি ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেননি এবং এসব প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য পার্টি তাঁকে কোনো ম্যান্ডেট দেয়নি। প্রকৃতপে এই প্রস্তাব ছিল জাসদের মূলনীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে, সামরিক আইন জারির প্রস্তাবটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা যেকোনো সুস্থ রাজনৈতিক দলের জন্যই অপমানজনক এবং প্রগতিশীল রাজনীতির চেতনাবিরোধী। তাহের সব সময় শেখ মুজিবের ‘ফ্যাসিবাদী’ রাজনীতির বিরোধী ছিলেন এবং তাঁর সরকারের উৎখাত চাইতেন। জাসদও একই দাবি করেছে। কিন্তু জাসদ কখনোই দেশে সামরিক শাসন চায়নি।

সন্ধ্যায় খোন্দকার মোশতাক আহমাদ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাহের উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি মেজর খোন্দকার আবদুর রশিদসহ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে বঙ্গভবনেই বৈঠক করেন। বৈঠকের একপর্যায়ে তিনি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও ডেকে আনেন। দুই দিন পর ১৭ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের বাসায় যান পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করতে। ১৯৭১ সালে নঈম ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং প্রায়ই তাঁর সঙ্গে দেখা-সাাৎ করতেন। তাহের আপে করে নঈমকে বললেন, ‘ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।’

১৫ আগস্টের পর গণবাহিনীর প থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল, ‘খুনি মুজিব খুন হয়েছে অত্যাচারীর পতন অনিবার্য।’

শেখ মুজিব যখন নিহত হন, জাসদের প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান তখন কলকাতার ভবানীপুরে চিত্তরঞ্জন সুতারের বাড়িতে। চুয়াত্তরের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে সিরাজুল আলম খান ভারতে চলে যান। মাঝে দুবার তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। শেষবার পঁচাত্তরের জুলাই মাসে। তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ভিসা নবায়নের জন্য তিনি কলকাতায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেন। ১২ আগস্ট তাঁকে জানানো হয়, তাঁর পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার বাতিল করে দিয়েছে।

ফলে তিনি বাংলাদেশে ‘পারসন নন গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হয়ে যান। সচরাচর তিনি বেলা ১১টা-১২টা পর্যন্ত ঘুমান। সকাল ১০টার দিকে সুতারের স্ত্রী মঞ্জুশ্রী দেবী তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে শেখ মুজিবের মৃত্যু সংবাদ দেন।

সিরাজুল আলম খান শেখ মুজিবকে জানতেন ১৯৬১ সাল থেকে। সুখে-দুঃখে বিপদে-আপদে তিনি শেখ মুজিবের ছায়াসঙ্গী ছিলেন ইতিহাসের একটা বিশেষ পর্বে, যখন বাংলাদেশ পাকিস্তানি উপনিবেশের জঠরে থেকে জেগে উঠছে। বেগম মুজিবও তাঁর ওপর আস্থা রাখতেন। শেখ মুজিব যখন জেলে, বিশেষ করে ১৯৬৬-৬৯ সালে, বেগম মুজিবের মাধ্যমে শেখ মুজিব ও সিরাজের যোগাযোগ হতো। সিরাজ যে কথা শেখ মুজিবকে বলতে পারতেন না, সে কথা বেগম মুজিবকে দিয়ে বলাতেন। বেগম মুজিব যে কথা স্বামীকে বলতে পারতেন না, সিরাজকে দিয়ে তা বলাতেন। খবরটা শুনে সিরাজুল আলম খান হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।

 

আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের শেখ মুজিবের প্রতি আনুগত্য যতটা ছিল, ততটা ভালোবাসা ছিল না। শেখ মুজিব এটা জানতেন এবং সিরাজুল আলম খানের ওপর নির্ভর করতেন। শেখ মুজিবের কাল্ট তৈরিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সিরাজুল আলম খান। মুজিব তাঁকে একরকম ব্লাংক চেক দিয়েছিলেন। এককথায় সিরাজ ছিলেন শেখ মুজিবের সবচেয়ে ‘আস্থাভাজন শিষ্য’। এটাই ছিল সিরাজুল আলম খানের মতার ভিত্তি। দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় দুজনই দুর্বল হয়ে পড়েন।

শেখ মুজিব নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে সিরাজুল আলম খান দুঃখ পেয়েছিলেন সন্দেহ নেই। তবে তিনি মনে করতেন, এটা ছিল অনিবার্য। মুজিব নিজেই এই পরিণতি ডেকে এনেছিলেন।

অক্টোবরে সিরাজুল আলম খান কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। বাংলাদেশ তখন অনেকটাই বদলে গেছে। (সূত্র : আমাদের সময়.কম)

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।