পরপর অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা


২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২২

স্টাফ রিপোর্টার : সাধারণ মানুষ কোনো ক্রমেই বিশ্বাস করতে চায় না যে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন কোনো দুর্ঘটনা। মানুষ মনে করে, এই অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আগুন লাগার পর এর তীব্রতা বাড়তে বেশ সময় লেগেছে। আগুন নেভানোর প্রক্রিয়া নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে চট্টগ্রামের রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) আটতলা ভবন ও রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি কেমিক্যাল গোডাউন থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন গ্রাস করে পাশের গার্মেন্টস কারখানাটিকে। সেখানে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই আগুন যেন পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দেয়। পরপরই তিনটি অগ্নিকাণ্ড মানুষের মনে নানা সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীরা এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে বিমানবন্দরে অগ্নিদুর্ঘটনার খবর বের হওয়ার পরপরই প্রায় সবাই বলাবলি করছিলেন যে, এটি পরিকল্পিত নাশকতা। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২৪-এর পরাজিত শক্তি সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছেন। আর এরাই বিভিন্ন স্থাপনায় পরিকল্পিত নাশকতা চালাচ্ছে।
শুরুতেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে না আগুন। বরং ছোট থেকে বাড়তে থাকে। বিমানবন্দরে নিজস্ব ব্যবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতায় কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে সেই গাফিলতিটা কোন কারণে সেটি খুঁজতে হবে। জবাবদিহি না থাকলে এর ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। কেননা কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতার গন্ধ পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ধারণা, দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে এমন নাশকতা ঘটানো হতে পারে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি পণ্য মজুদ রাখার কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। যে আগুনে শত সহস্র কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুনে অত্যন্ত মূল্যবান তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, স্যাম্পল, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামালসহ কোটি কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি স্পর্শকাতর জায়গায় দিনে-দুপুরে এমন ভয়াবহ আগুন লাগলো কীভাবে। আর যখন লাগলোই, তখন অ্যাভিয়েশনের নিজস্ব দমকল ইউনিট ব্যবহার করে অল্পতেই নেভানো সম্ভব হলো না কেন?
গত ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ীতে একটি কেমিক্যাল গোডাউন থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন গ্রাস করে পাশের গার্মেন্টস ও একটি কারখানাকে। দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ শ্রমিক। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী। যাদের জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল, একটু ভালো থাকা, সংসার চালানো, সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু তারা ফিরে গেলেন না ফেরার দেশে। পরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবনের ছাদের গেট ছিল বন্ধ, ফলে তারা চাইলেও ছাদে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে পারেনি। ভবনে কোনো নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না। যারা এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে কারখানা চালায় তারা দুর্ঘটনার পর নিজেদের দায় এড়াতে নানা কৌশল নেয়, আর বিপরীতে ভেঙে যায় সাধারণ শ্রমিকের স্বপ্ন।
প্রায় একইভাবে চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) আটতলা একটি ভবন আগুন লাগে সম্প্রতি। ওই আগুনে ছাই হয়ে যায় দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং অন্যটি জিহং মেডিকেল কোম্পানি। শতকোটি টাকার মালামাল, শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ, দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা সবই মিশে যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, সবাই মিলে আগুন নেভায়, কিন্তু প্রশ্নটা থেকে যায় আগুনের আগেই যদি প্রতিরোধ গড়া যেত- তাহলে হয়তো এই ক্ষতি, এই কান্না এড়ানো যেত।
গত ১৮ অক্টোবর শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে এই বিমানবন্দর শুধু যাত্রী পরিবহনের কেন্দ্র নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমর্যাদার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। গত এক সপ্তাহে দেশের দুই স্থানে রাজধানীর মিরপুরে এবং চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড আকস্মিক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, এ ব্যাপারে আমরা সকলে উদ্বিগ্ন। বিমান বন্দরের মতো এমন একটি কৌশলগত স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অবহেলা ও নিরাপত্তা ঘাটতির এক স্পষ্ট প্রমাণ।