ছাত্র সংসদে নির্বাচিতদের কার্যক্রম জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে
২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৩১
দেশের সেরা চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির বিপুল জয় পেয়েছে। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক প্রকাশ্যে তৎপরতার বাইরে এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফ্যাসিবাদী বয়ান আর নির্যাতনে পিষ্ট এশিয়ার অন্যতম বড় ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠনটি। ২০২৪-এর গণআন্দোলন দমাতে হাসিনা সরকার নিষিদ্ধ করেছিলো ইসলামী ছাত্রশিবিরকে। তারপরও তাদের এ বিপুল উত্থান ফিনিক্স পাখির দৃষ্টান্তকে হার মানিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। নানা সমীকরণে বিশ্লেষণ চলছে। প্রথম দিকে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছিলো, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কিন্তু তা হালে পানি না পাওয়া ছাত্রদলের নানা দুর্বল দিক তুলে ধরছে। তারা অপ্রচার চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না। এজন্য তারা অতীতের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরছে, যার সাথে বর্তমান পরিস্থিতির কোনো তুলনা নেই। আসলে এ বিজয়ের নেপথ্যে যে সত্য লুকিয়ে আছে, তা তারা সামনে আনতে চাচ্ছে না। এর কারণ তারা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে অথবা পুরনো ব্যবস্থা থেকে বের হতে চাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মন্তব্যের আগে একটু ফলাফলের দিকে নজর দেয়া যাক।
ফলফল
ডাকসু নির্বাচন: ৬ বছর পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল। এর আগে অনেকবার অংশ নিলেও সংগঠনটি ঢাবিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি। তবে এবার ভিপি-জিএস-এজিএসসহ ২৮টি পদের ২৩টিতেই বিজয়ী হন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।
গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রশিবির প্যানেলের আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) পান ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান ৫ হাজার ৭০৮ ভোট পান। জিএস পদে একই প্যানেলের এস এম ফরহাদ হোসেন এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান বড় ব্যবধানে বিজয়ী হন। এছাড়া আরও ২০ পদে বিজয় লাভ করেছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। প্যানেলের বাইরে বাকি পাঁচ পদে জয়ী হয়েছেন অন্য প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হয়েছে ১৩টি পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন। ডাকসুতে মোট ভোটার ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার ছিল।
জাকসু নির্বাচন : ডাকসুর দুদিন পরই ১১ সেপ্টেম্বর ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ডাকসুতে বড় সাফল্যের পর এখানেও সেই ধারা অব্যাহত রাখেন শিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্রার্থীরা। জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে জিএস-এজিএসসহ ২০টিতে শিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটিতে স্বতন্ত্র এবং দুটিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্রার্থীরা বিজয়ী হন। জাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত সম্মিলিত ঐক্য জোটের মাজহারুল ইসলাম। জাকসুতে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদ দুটি। দুটিতেই ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। তারা হলেন- এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (নারী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এর ফলে ডাকসু নির্বাচনের পর জাকসুতেও বড় জয় পায় ইসলামী ছাত্রশিবির। জাকসুতে মোট ভোটার ছিল ১১ হাজার ৮৯৭ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রায় ৫৪৮ জন প্রার্থী।
চাকসু নির্বাচন: দীর্ঘ তিন যুগ পর এবার ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচন হয়েছিল। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এর আগে ডাকসু ও জাকসুতে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখায় ছাত্রশিবির। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চাকসুতেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি-জিএসসহ ২৬ পদের মধ্যে ২৪টিতেই জয়লাভ করে, ছাত্রশিবির-সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থীরা। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বাইরে এজিএস পদে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক এবং সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের তামান্না মাহবুব প্রীতি। ভিপি পদে বিজয়ী ছাত্রশিবিরের ইব্রাহীম পান ৭৯৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পান ৪৩৭৪ ভোট। জিএস পদে বিজয়ী ছাত্রশিবিরের সাঈদের ভোট সংখ্যা ৮০৩১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শাফায়েত হোসেন পান ২৭৩৪ ভোট। চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন, হল সংসদে ৪৭৩ জন এবং হোস্টেল সংসদে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।
রাকসু নির্বাচন: ৩৫ বছর পর এবার ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন (১৪তম) হয়েছিল ১৯৯০ সালের ২৯ জুলাই। রাকসু নির্বাচনের আগে দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় পায় তাদের ছাত্র প্রতিনিধি, যেখানে ছিল ছাত্রশিবিরের একক আধিপত্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৩ পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়লাভ করে ছাত্রশিবির-সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট। তবে জিএসসহ ৩টি পদ তারা হাতছাড়া করে। এ তিনটি পদের মধ্যে কেবল ক্রীড়া সম্পাদক পদে নার্গিস খাতুন জয়ী হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেল থেকে। এর বাইরে বাকি দুজনের একজন নির্বাচিত হয় জিএস পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার, যিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আলোচিত সমন্বয়ক ছিলেন। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা। ভিপি পদে জাহিদ পান ১২,৬৮৭ ভোট, আর ছাত্রদলের আবীর পান ৩,৩৯৭ ভোট। এজিএস পদে এস এম সালমান সাব্বিরের ভোট ৬,৯৭১ এবং ছাত্রদলের এষা পান ৫,৯৪১ ভোট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৭টি হলের মধ্যে ৬টি মেয়েদের এবং ১১টি ছেলেদের। মোট ভোটার ছিলেন ২৮,৯০৯ জন, যাদের মধ্যে ২০,১৮৭ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটের হার ছিল ৬৯.৮৩ শতাংশ। ডাকসু, জাকসু, চাকসু ও রাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একক আধিপত্য দেখিয়েছে।
সাবেক নেতাদের বক্তব্য
এ প্রসঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মীর্জা গালিব বলেছেন, ‘শিবিরকে হারাতে হলে মেধাবী হতে হবে।’ চাকসুতে ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টি শিবিরের প্যানেল পেয়েছে, আর রাকসুতে ২৩টির মধ্যে ২২টি (২০টি হবে)। ছাত্রদল ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু- সব মিলায়ে পেয়েছে শুধু একটা এজিএস। এই যে সারা দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের একচেটিয়া সাপোর্ট পাচ্ছে শিবিরÑ এইটা এক নতুন বাংলাদেশের গল্প বলতেছে।’ তিনি মনে করেন, ‘অছাত্র, বয়স্ক ছাত্র, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চিৎকার-চেঁচামেচি করা পুরনো রাজনৈতিক স্টাইল দিয়া আর রাজনীতি করা যাবে না। শিবিরকে হারাতে হলে মেধাবী হতে হবে, ছাত্রদের অধিকার নিয়া কনস্ট্র্যাকটিভ রাজনীতি করতে হবে, আর দেখতে-শুনতেও ব্যক্তিত্ববান কিউট সুইট টাইপের হতে হবে। গুণ্ডা গুণ্ডা ভাব থাকলে আর হবে না। এমন এক বাংলাদেশই তো আমরা চাইছিলাম আমাদের সারাটা জীবন ধরে।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে গেছে। এতে মানুষ জামায়াতসহ কল্যাণমুখী রাজনীতিকে বেছে নেবে। কারণ ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব ৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে পড়েছিল।’
সাবেক দুই শিবির নেতার বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বার্তা আছে। এক ছাত্র সংসদ নির্বাচন এ বার্তা দিচ্ছে যে, এখন আর সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি চলবে না, জনগণ সন্ত্রাসীদের রাজনীতির মাঠে চায় না। হোন্ডা, গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডার দিন শেষ। জেন-জি জীবন দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে শিখেছে। সন্ত্রাসনির্ভর ফ্যাসিবাদী পথে যে অঙ্গনেই যে কোনো দল আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলে জনপ্রতিরোধে তারা নির্বাসিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর বিপরীত ভাবনা কারা ভাবছেন?
অন্যরকম ভাবনাগুলো
অন্যরকম ভাবনাগুলোও ভাবছেন অনেকে। অন্যরকম ভাবুকরা দেশের জুলাই বিপ্লবের দাবি বুঝতে পারেছন না, নয়তো বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। যেমন- ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিএনপির নেতারা বলছেন, এই ফলের কোনো প্রভাব আগামী নির্বাচন বা জাতীয় রাজনীতিতে পড়বে না। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনে পড়বে- এটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে টার্গেট করে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। এটা তারাও মনে করে না। সেটা যদি তারা মনে করত, তাহলে জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাত না।
চাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, চাকসুর ফল চট্টগ্রামেই প্রভাব ফেলে না। একই কথা রাকসুর বেলায়ও প্রযোজ্য। তবে ডাকসুর ভোটের প্রভাব কমবেশি পড়লেও সেটা জাতীয় নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার মতো কিছু হয় না।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, কী কারণে ছাত্রশিবির ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এত প্রিয়, সেই কারণগুলো সাবেক ছাত্রনেতারা যা নির্ণয় করেছেন, তা কিন্তু একজনের সাথে আরেকজনের মিলে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাবেক ছাত্রনেতা, অর্থাৎ যারা আগের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। যেমন: ডাকসুর সাবেক জিএস ও বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন বলেন, বিগত দিনে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অপকর্মের দিকটা বিবেচনায় রেখে বিকল্প হিসেবে ছাত্রশিবিরের পক্ষে রায় দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখন এ বিজয়কে সুযোগ বিবেচনা করে বাড়াবাড়ি করলে জাতীয় রাজনীতিতে ফায়দা নিতে পারবে না জামায়াত-শিবির। এ ফলের ফায়দা নিতে হলে তাদের সংযত আচরণ করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রশিবির সংগঠিত ছাত্রসংগঠন হওয়ায় ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচনে ভালো ফল করেছে। তবে এ নির্বাচনের ফলের বড় প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে, অবশ্যই পড়বে। যারা ভিন্নমত প্রকাশ করছেন, তারাও স্বীকার করেন, এটি সব শ্রেণির মানুষের ওপর প্রভাব না ফেললেও ছাত্রসমাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ছাত্রসমাজের প্রভাবে অন্য ভোটাররাও প্রভাবিত হবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ফলের প্রভাব জাতীয়ভাবে পড়ার দাবি তারা (জামায়াত) করলেও বিষয়টি এমন নয়। জাতীয় রাজনীতির ধরন ভিন্ন। তবে এর একটা প্রভাব থাকবে রাজনীতিতে। কারণ তারা তাদের ছাত্র সংসদের নেতাদের ভোটে কাজে লাগাবে পরিকল্পিতভাবে। সেক্ষেত্রে তাদের ভোটের হার বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। কারণ এবার নতুন প্রায় চার কোটি ভোটার।
নতুন ভোটাররা হবেন ফ্যাক্টর
গত এক দশকে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে সোয়া তিন কোটি, যার মধ্যে একেবারে নতুন ভোটার প্রায় অর্ধকোটি। আর ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের ভোটারের সংখ্যা পৌনে চার কোটির কাছাকাছি, যা মোট ভোটারের ৩০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোট ভোটারের মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটির মতো। তাদের কথা, গত ১৫ বছরে বড় একটি সংখ্যার ভোটার ভোট দেননি বা দিতে পারেননি। আগামী ৩১ অক্টোবর বা তারপরে তরুণ ভোটারদের সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ভোটারের সংখ্যা আরো বাড়বে। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে যে ১২ কোটি ৬২ লাখ ভোটার, তার মধ্যে ১৮ থেকে ৩৭ বছর বয়সী ভোটার প্রায় পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৩ শতাংশ।
ভোটারদের নিয়ে এখন নানা ধরনের জরিপ প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। আর তা হলো, ৪৮.৫ ভাগ মানুষ কাকে ভোট দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত তারা এখনো নেননি। ওই জরিপে তাদের বয়সসীমা কী, তা বলা না হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনো যারা সিদ্ধান্ত নেননি, তাদের অধিকাংশই তরুণ ভোটার। কারণ তারা তাদের প্রত্যাশার জায়গা আরো দেখতে চান। আর তরুণ ভোটারদের সাথে কথা বলে তারই আঁচ পাওয়া গেছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের বড় বড় চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, তরুণরা মাস্তানি, চাঁদাবাজি, দখলবাজির রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাতীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে তারা ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদেরই বেছে নেবেন, এতে সন্দেহ নেই। বিপ্লবোত্তর পরিবেশে জামায়াতে ইসলামীর ইতিবাচক ইমেজ অনেক বেড়েছে। তাদের ক্লিন ইমেজ এবং ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যক্রম জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।