নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বিএনপির হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ
২১ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪১
নোয়াখালীতে ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বিএনপি ও যুবদলের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে ছাত্রশিবির, ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ২টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ। যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি আসিফ আব্দুল্লাহ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিবগাতুল্লাহ বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির তার কার্যক্রমের কারণে দেশের ছাত্রসমাজের আস্থা অর্জন করেছে। শিক্ষার্থীরা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে।”
তিনি বলেন, “ছাত্রশিবির মেধাবীদের সংবর্ধনা দেয়, পাশাপাশি কুরআন শিক্ষারও আয়োজন করে। নোয়াখালীতে কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বিএনপি ও যুবদলের হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, “ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময় ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ১৯৮৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কুরআনের জন্য শিবিরের কর্মীরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কুরআনের জন্য জীবন দিতে ছাত্রশিবির কখনো পিছপা হবে না।” বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী আচরণ পরিহার করুন এবং কুরআনের কার্যক্রমে বাধা প্রদান থেকে বিরত থাকুন। নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা বুঝে দায়িত্বশীল আচরণ করুন।”
তিনি ছাত্রশিবিরের কর্মীদের আহ্বান জানান— “তারা আমাদের একটি দারসুল কুরআন বন্ধ করেছে; আমরা সারাদেশে লক্ষ দারসুল কুরআন চালু করব।” সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের ছাত্রশিবিরের দেওয়া ২৪ ঘন্টা আল্টিমেটামের মধ্যে গ্রেফতার ও সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়। বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, তথ্য সম্পাদক আবু সায়েদ সুমন, ঢাকা মহানগর পশ্চিম সভাপতি হাফেজ আবু তাহের ও দক্ষিণ সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পাদক হাফেজ আবু মুসা, প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক রিয়াজুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ।
প্রতিবাদ বিবৃতি
নোয়াখালী সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেমবাজার এলাকায় ছাত্রশিবির আয়োজিত পূর্বঘোষিত দারসুল কুরআন প্রোগ্রামে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯ অক্টোবর, রবিবার) ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “আজ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নোয়াখালীর নেয়াজপুর কাশেমবাজার জামে মসজিদে ছাত্রশিবিরের দারসুল কুরআন প্রোগ্রামে যুবদল নেতা ফারুকের নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ফারুকের নেতৃত্বে নেয়াজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন বাবুল, ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি জাকির হোসেন আলো, বিএনপির কর্মী ইমাম হোসেন রায়হান ও কামাল হোসেন, ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদল সভাপতি ইলিয়াস সুজন এবং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন রেজাসহ কয়েক শত সন্ত্রাসী এ হামলায় অংশ নেয়।
এতে ছাত্রশিবিরের প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। গতকালও তারা একইভাবে কুরআন তালিমে হামলা করে। মসজিদের মতো পবিত্র স্থানে কুরআন প্রশিক্ষণের আয়োজনে এমন হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয়। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সংবিধান স্বীকৃত একটি বৈধ ও আদর্শিক সংগঠন। কোনো সংগঠনের সভা-সমাবেশে হামলা করা দেশের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রসমাজের মাঝে নৈতিক, আদর্শিক ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীবান্ধব ও গঠনমূলক কাজে ভীত হয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ছাত্রশিবিরের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সম্প্রতি বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনসমূহও নব্য ফ্যাসিবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নারী হেনস্তা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং বিরোধী সংগঠনের কর্মসূচিতে হামলা এখন তাদের রুটিন কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “ছাত্রশিবির ধৈর্য, সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে ও বিএনপিকে যথাক্রমে আইনানুগ ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
নেতৃবৃন্দ ২৪ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে প্রশাসনের প্রতি সময় বেঁধে দিয়েছেন।-প্রেস রিলিজ,তারিখ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ছাত্রশিবির আয়োজিত কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ