শাহজাদপুরের পশুর হাটের আকর্ষণ সোহাগ বাবু


২৯ মে ২০২৫ ১১:১৬

এমএ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : আসন্ন কুরবানির ঈদে বিক্রির জন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খামারিরা প্রস্তুত করেছেন লক্ষাধিক পশু। উপজেলার পৌর এলাকা ও ১৩টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় স্বযত্নে লালন-পালন করে প্রায় এক লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ও গাভি ৬০ হাজার, ছাগল ২০ হাজার, ভেড়া ১০ হাজার, গাড়ল (বিদেশি ভেড়ার জাত) ৫০০টি, মহিষ ২০০টি ও দুম্বা ২২টি। দুগ্ধ শিল্পের জন্য বিখ্যাত দেশের অন্যতম গো-চারণ ভূমি ও মিল্কভিটা কারখানার সুবাদে উপজেলায় ৩০ হাজার ছোট বড় গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে দুগ্ধ গাভি ছাড়াও বড় বড় জাতের ষাঁড় গরু মোটাতাজা করা হয়। এসব ষাঁড় গরুকে প্রাকৃতিক ঘাস, ছোলা, ভুট্টা, খৈল, ভুসি, চিটা গুড়, গম, মসুর, কালাই, খেসারি, জব, ভাত, চিড়া, ফিড ও দেশীয় জাতের খাদ্য খাইয়ে খামারিরা মোটাতাজা করে লালন পালন করেছেন। তাই এর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বলে প্রতিটি কুরবানির পশুর হাটে এ এলাকার ষাঁড় গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন খামারিরা এবারের কুরবানির ঈদকে ঘিরে বড় বড় ষাঁড় গরু মোটাতাজা করলেও এবারে উপজেলায় সাড়া ফেলেছে ২২ মণ ওজনের সোহাগ বাবুর। পোরজনা ইউনিয়নের উল্টাডাব গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ সাধু সরদার প্রস্তুত করেছেন ২২ মণ ওজনের ‘সোহাগ বাবু’ নামের একটি বিশাল ষাড় গরু। অস্ট্রেলিয়ান জাতের এ ষাঁড় গরুটি একনজর দেখতে সাধু সরদারের বাড়িতে প্রতিদিনই নানা বয়সের শত শত মানুষ এসে ভিড় করছেন। ক্রেতারাও এসে সাধ্যমতো দামদর করছেন। ফলে গরুটিকে নিয়ে চারদিক হইচই পড়ে গেছে।
এ বিষয়ে কৃষক আবু সাঈদ সাধু সরদার জানান, ২ বছর আগে তার গোয়ালের শংকর জাতের একটি শাহীয়াল গাভি সাদা-কালো ডোরাকাটা এড়ে বাছুর জন্ম দেয়। বাছুরটির আকার-আকৃতি ও ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বড় ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়ায় আদর করে তার নাম রাখা হয় সোহাগ বাবু। সেই থেকে তিনি সোহাগ বাবুকে পুত্রস্নেহে পরম যত্নে আদর-সোহাগ দিয়ে লালন-পালন করছেন। সোহাগ বাবুকে নিজ হাতে নাওয়ানো-খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছুই করেন সাধু সরদার। সোহাগ বাবুকে লালন-পালন করাই এখন তার একমাত্র কাজ। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজ হাতে শুরু করেন সোহাগ বাবুর পরিচর্চা। খাওয়ানো ও সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানোর কাজ চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এরপর নিজে গোসল ও খাওয়া সেরে কাস্তে হাতে বেরিয়ে পড়েন চক পাথারে সোহাগ বাবুর জন্য তাজা ঘাস সংগ্রহে। টানা ২ বছর ধরে ক্লান্তিহীনভাবে সাধু সরদার আদরের সোহাগ বাবুর যত্ন করে আসছেন। ফলে একনজর দেখতে একমাত্র মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময়ও পান না তিনি। সোহাগ বাবুকে বাজারের সব খাবার খাওয়ান না। উন্নতমানের, খইল, ছোলা, খেসারি, ভুট্টা, মাসকালাই কিনে নিজ হাতে তা গুঁড়ো করে গুড়ের পানি ও স্বাদমতো লবণ যুক্ত করে সোহাগ বাবুকে সকাল সন্ধ্যা খাওয়ান। এতে বাজারের চেয়ে তার খরচ বেশি হলেও তিনি সোহাগ বাবুর খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে একে বারেই নারাজ। গরুটির ওজন ও আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে আনেক বড় ও বেশি হওয়ায় তার পক্ষে লালন-পালন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ বছর কুরবানির ঈদে সোহাগ বাবুকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্রেতারাও এসে সোহাগ বাবুকে দেখছেন ও দরদাম করছেন। কিন্তু এখনো কেউ উপযুক্ত দাম না বলায় বেচা বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, সর্বসাকুল্যে সোহাগ বাবুর ওজন প্রায় ২২ মণ হবে। নিট মাংস হবে কমপক্ষে ১৫ মণ। সে হিসেবে ক্রেতারা গরুটির দাম সাড়ে ৪ লাখ টাকা বলেছেন। তিনি এর দাম আরও বেশির আশা করছেন।
গো-খামার মালিক মশিপুর গ্রামের শাহান উদ্দিন শাহীন বলেন, তার খামারের বয়স ১৩ বছর। তিনি প্রতি বছর ২৮-৩০টি ষাঁড় গরু ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কুরবানির পশুর হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। এ বছরও তিনি ২০টি গরু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ছোট বড় ষাঁড় গরু রয়েছে ১৮টি। তার ৩টি ষাঁড় গরু এলাকার সবার নজর কেড়েছে। এ ষাঁড়গুলো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই লোকজন এসে ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ আবার কেনার আগ্রহ পোষণ করে দামদর করছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী দাম না বলায় তা এখনো বিক্রি হয়নি।
ঘোড়শাল গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম ঠাণ্ডু বলেন, তার খামারে এ বছর ১০টি ষাঁড় গরু লালন-পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ কেজি ওজনের অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি এলাকা কাঁপিয়ে তুলেছে। তার এ ষাঁড়ের দাম তিনি ৫ লাখ টাকা চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শাহজাদপুরে মোট ৩০ হাজার গো-খামার রয়েছে। এর মধ্যে ছয় হাজার খামারে দেশীয় জাতের খাদ্য খাইয়ে খামারিরা মোটাতাজা করে লালন পালন করেন। কুরবানির পশু শাহজাদপুরের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ গরুর হাটে বিক্রি করেন। বাঁকি ২৪ হাজার খামারে ডেইরি মিল্ক উৎপন্ন করা হয়।