ইনশাআল্লাহ, আমরা শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না
২৯ মে ২০২৫ ১০:৪৬
॥ মাহবুবুল হক ॥
গত এক সপ্তাহে আমাদের দেশে অনেক ঘটনা ঘটে গেল। সেসব আমরা সবাই জানি। একশ’ জন বিদগ্ধ সাংবাদিকের সম্মুখে যখন কোনো ঘটনা ঘটে, পরের দিন সংবাদপত্রের পাতায় একই ধরনের সংবাদ পরিবেশিত হবেÑ দেশের সাধারণ মানুষ সেটাই আশা করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সংবাদপত্রসহ সকল মিডিয়ায় প্রায় একশ’ রকম সংবাদ প্রকাশিত হয়। এটা এ যুগের বাস্তবতা। মূল সংবাদটা প্রায় কাছাকাছিভাবে প্রকাশিত হলেও সংবাদের অভ্যন্তরের যে সংবাদ, তা একরকম হয় না। যেকোনো ঘটনার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ থাকে। যার স্থান, কাল, পাত্র, ঘটনার শানে-নযুল, পটভূমি ও প্রেক্ষাপটও একই ধারায় বিশ্লেষিত হয় না। সাংবাদিকরা অডিও-ভিডিও মেশিন নয়; তারা ক্যামেরাও নয়, তারা মানুষ। তাদের চোখ আছে, কান আছে, নাসিকা আছে, হৃদয়-মন আছে, মাথা আছে, মাথায় অনেক রকম বোধ-বিশ্বাস, স্বপ্ন-কল্পনা, অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা, শিক্ষা-দীক্ষা, উপলব্ধি, মনন, অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাজ্ঞতা, বিজ্ঞতা ইত্যাদির বিশাল একটা কেমিস্ট্রি আছে। আছে বিরাট বিরাট ক্যানভাস। আছে মালিকের নানারকম অভিলাষ। সেসব কারণে ঘটনার পরের দিন সংবাদটি যেভাবে উদ্ভাসিত বা পরিবেশিত হয়, তা অবিকল পরিবেশিত হয় না। একজন সাংবাদিক এ যুগে স্বাধীন নন। তাকে দেশের স্বার্থ, দলের স্বার্থ, রাজনৈতিক দলের স্বার্থ, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বার্থ এবং মালিকের স্বার্থের দিকে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে সবকিছু মিলিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। কাজটা সেবার। মূলত দেশ ও দেশবাসীর সেবার। এ সেবাটা অনেক সময় অতীতের মলিনতাকে দূর করার জন্য বর্তমানের শঙ্কা-আশঙ্কা, দুঃখ-কষ্ট, ভালো-মন্দ ইত্যাদিকে খোলাসাভাবে উপলব্ধি করার জন্য সৃষ্ট হয়।
কোনো সাংবাদিক ক্যামেরার মতো বা ক্যামেরার ছবির মতো ছবি প্রকাশ করে বলতে পারেন না ট্রেনটা লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। এ লাইনচ্যুত হওয়ার আগে লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেনটি কোথায় কী অবস্থায় ছিল এবং কেন লাইনচ্যুত হলো এবং লাইনচ্যুত হওয়ার পর উপস্থিতভাবে কী কী ঘটনা ঘটালো, কী কী ঘটনার সৃষ্টি ও অসৃষ্টি করলো, তাও সাংবাদিক প্রবরকে উল্লেখ করতে হয়। এর আবার পরম্পরা আছে। অতীত আছে, যাকে আমরা বলি, ‘ল্যাগাসি অব দি পাস্ট’- যার কোনো শেষ নেই। অন্তত ট্রেনের ক্ষেত্রে ঝট করে ঔপনিবেশিক সময়টা এসে যাবে, আসবে পাকিস্তান আমল এবং আসবে বাংলাদেশি আমল।
সাংবাদিকরা তাদের পাঠকদের বা তাদের টার্গেট গ্রুপদের চাহিদা পূরণের জন্য লিখে থাকেন। কারণ সংবাদপত্রে সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপনও অস্তিত্বের কারণে বাড়াতে হয়। সুতরাং একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব বহুমুখী, বহুকেন্দ্রিক এবং বহুমাত্রার।
গত সপ্তাহের কোনো একসময়ে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, ‘আমি অব্যাহতি গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছি। সাথে সাথে তা দেশ-বিদেশে চাউর হয়ে গেল। বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত অর্ধেক মানুষের কানে কথাটি পৌঁছে গেল। মনে হয় আমাদের কিছুটা ক্ষতি হলো। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানুষ ড. ইউনূসকে কেন্দ্র করে একটা আশাবাদের হিমালয় গড়ে তোলার প্রয়াসে মত্ত ছিল। কিছুসংখ্যক অপরিণামদর্শী কুচক্রী, স্বার্থপর ও ফ্যাসিবাদী মানুষ ছাড়া বিশ্বের মানুষ এ অঞ্চলের কল্যাণ ও বিকাশে ড. ইউনূসকে একতরফাভাবে পছন্দ করেছিল। যা হোক, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বা অভিপ্রায়ে একটি কল্যাণকর রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বিষয়টির আপাত একটা সমাধান হয়েছে বলে মনে হয়। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। বিষয়টি নিয়ে যতটুকু ক্ষতি আমাদের হয়েছে, মনে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি লাভ ইতোমধ্যে আমরা অর্জন করতে পেরেছি। তিনি বিশ্বমানের কৌশলী বলে উপর্যুক্ত কথা বলেছেন, নাকি রাজনীতিক বা ডিপ্লোম্যাট নন বলে বাস্তব অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন, সেটা নিশ্চিত করে আমরা বলতে পারব না, আল্লাহ আলেম।
’৫২ সালে আমার বয়স ছিল ৪ বছর। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বসে যেসব স্লোগান তখন শুনেছিলাম, বিভিন্ন ছোট ছোট মিছিলে তার একটা সত্য বর্ণনা আমার একটি কবিতায় রয়েছে। কবিতার শিরোনাম- ‘আমার প্রথম স্লোগান শোনা’। একটু বড় হয়ে ৬ বছর বয়সে যখন প্রাইমারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই, তার কিছু আগে-পরে স্লোগানগুলো আব্বাজান, চাচা, বড় ভাইয়ের কাছে শুদ্ধভাবে শুনেছিলাম। রাফ খাতায় ভাঙা ভাঙা হরফে লিখে রেখেছিলাম। স্কুলে শিক্ষকদের মুখেও শুনেছিলাম। দুটি স্লোগান এখনো আমার মনে আছে- ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। আরেকটি হলো- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নূরুল আমিনের কল্লা চাই’। পরবর্তী জীবনে এদেশে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, যে আন্দোলন ও সংগ্রামের কারণে ছাত্র-জনতা হতাহত হয়েছে, তাদের স্মরণে সবসময় স্লোগান দেয়া হয়েছে- ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।’ এবার ২৪-এর ৫ আগস্টের আগে-পরে সবসময় আমরা স্লোগান শুনেছি। এদেশের ছাত্র-জনতা সবসময় অবারিতভাবে শহীদের মর্যাদা দিয়ে এসেছে। শহীদের জন্য জাতি সম্মান ও মর্যাদা যথাযথভাবে উচ্চকিত করেছে, সমুজ্জ্বল করেছে। থানায় থানায়, উপজেলায় উপজেলায় শহীদ মিনার গড়েছে। শহীদ মিনার ছাড়া কোনো স্কুল-কলেজের স্থাপনা আছে বলে মনে হয় না। আমাদের জীবনবিধানে শহীদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। মিথ্যার বিরুদ্ধে, অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা জিহাদের সমতুল্য। আমাদের দেশের ছাত্র-জনতা সবসময় জিহাদের আবহেই বেড়ে উঠছে। সে কারণে বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে অধিকাংশ সময় যে স্লোগান আমাদের তাড়িত করছে, তা হলো- ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।’
আমরা বিশেষভাবে ২৪-এর ছাত্র-জনতার বিপ্লব, অভ্যুত্থান বা আন্দোলনকে আন্তরিকভাবে স্মরণ করেছি। যখনই আন্দোলন-সংগ্রাম, বিভিন্ন দিকে মোড় ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তখনই ছাত্র-জনতা আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠেছেÑ না, আমরা শহীদদের সাথে বেঈমানী করতে পারব না। তারা বিভিন্নভাবে উচ্চারণ করেছে, আমরা বিশ্বাসঘাতক নই, আমরা কোনো রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। শুধু কী ছাত্র-জনতা, বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতৃবৃন্দ গত কয় মাস ধরে বার বার বলেছেন, আমরা ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে বা গণঅভ্যুত্থানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। একই কথা সেনাবাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আমলা, শিক্ষাবিদ; এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার প্রথম ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন- আমি এবং আমরা ২৪-এর শহীদদের সাথে বেঈমানী করব না বা বিশ্বাসঘাতকতা করব না। গত ৯ মাসে বাংলাদেশের হাটে-ঘাটে-মাঠে এ শপথ, এ ওয়াদা, এ অঙ্গীকার সীমা-শঙ্কাহীনভাবে উচ্চারিত হয়েছে। এ উচ্চারণ দেশবাসীকে সচকিত করেছে, উদ্দীপ্ত করেছে, আশান্বিত করেছে।
কথিত ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের অনুবর্তীরা ছাড়া আরো কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ছাত্র-জনতার এবং পরবর্তীতে দেশবাসীর এ অনড় অঙ্গীকার ও শপথ উচ্চকিত করেনি। তারা এ আমানতকে ধারণ করেনি। তারা আন্দোলন, সংগ্রাম, বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের সাথে সংযুক্ত বা সংশ্লিষ্ট হয়নি। সত্যিকার অর্থে তারাই কথিত স্বৈরাচারীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ ঐতিহাসিক বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই মূল্যায়ন করেনি। এখনো করছে না। কখনো তারা বলছে, ‘তোমরা কারা’? তোমাদের তো আমরা চিনতে পারছি না? তোমরা এত হইচই করছ কেন? যাও তোমাদের বিদ্যাপীঠে ফিরে যাও। লেখাপড়া কর, মানুষ হও, আমরাই তো আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। আমাদের কাজ করতে দাও।
দেশবাসী সরলভাবে বিশ্বাস করেছিল, এত বড় বিপ্লবকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারী ছাড়া আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, উপেক্ষা বা অবহেলা করবে না। কিন্তু হতভাগ্য দেশবাসী প্রত্যক্ষ করল রাজনীতির ক্ষেত্রে এদেশে যারা দ্বিতীয় প্রধান শক্তি, তারা শুধু নিজেদের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে এ অনিবার্য বিপ্লব বা অভ্যুত্থানকে সরাসরি উপেক্ষা করে বসল। ফ্যাসিবাদী সরকারের মতো তারাও ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে লাগল, আমরাই তো ছিলাম এবং আছি। আমরাই তো একমাত্র শক্তি, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটানা লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা গত ১৬ বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার হতাহত হয়েছে। শত শত গুম হয়েছে। আয়নাঘরে থেকেছে। অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা হয়েছে। লাখ লাখ কর্মী জেল-জুলুম খেটেছে। আমাদের আয়ের উৎস ফ্যাসিবাদী সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরাই তো একমাত্র প্রতিবাদী, আমাদেরই রয়েছে একমাত্র অধিকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার। এ ধরনের হাজারো যুক্তি তুলে যে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হলো এবং প্রায় দুই হাজার বনি আদম শাহাদাতবরণ করল, ইতিহাসের এ অনবদ্য অধ্যায়কে বড় সেই রাজনৈতিক দল নানাভাবেই অসম্মানিত করে বসল। এ ত্যাগী বীর, গাজী ও শহীদদের তারা ইতিহাসের পাতায় কোনোভাবেই স্থান দিতে চাইল না। তারা এদের পরোক্ষভাবে মার্সিনারী হিসেবে অভিহিত করল।
দেশবাসী আরও ধারণা করেছিল, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের সাথে যে কোটি কোটি মানুষ সংযুক্ত ছিল, তাদের মধ্যে যারা বাধ্য হয়ে নানা দুর্বলতার কারণে, অসহায়ত্বের কারণে, দারিদ্র্যের কারণে, বেঁচে থাকার কারণে, ধীরে ধীরে সহযোগী হয়ে উঠেছিল, তারা হয়তো বিপ্লবের পর তাওবা-তিল্লা করে ফ্যাসিবাদীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। স্বৈরাচারীদের পক্ষে প্রকাশ্যে ও গোপনে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করবে না। ফ্যাসিবাদের দেশবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, দেশবাসীবিরোধী, লুটপাট, ধ্বংস, শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ উপলব্ধি করতে পারবে, অনুতপ্ত হবে, অনুশোচনায় দগ্ধ হবে। দলে দলে মন্দ থেকে ভালোর দিকে ফিরে আসবে। দুর্নীতি থেকে সুনীতির পথে অগ্রসর হবে। কিন্তু হতভাগ্য দেশবাসী হৃদয় দিয়ে এবং মস্তিষ্ক দিয়ে অনুভব করল, তেমন কোনো ওলট-পালট হলো না। দেশবাসীর একটা অংশ যেমন ছিল, তেমনি রয়ে গেল। কারণ জনগণের একটা বিপুল অংশ ফ্যাসিবাদের লুটপাটের অংশীদার হয়ে উঠেছিল। তারা সেভাবেই থেকে গেল।
দেশপ্রেমিক দেশবাসীর একান্ত আশা ছিল, প্রতিবেশী দেশসমূহসহ সারা বিশ্বের সকল দেশ ও জাতি ইতিহাসের এ অনবদ্য বিপ্লবকে বিপুলভাবে অভিনন্দিত করবে। বিপ্লবের শক্তিকে এবং বিপ্লবের নায়কদের বিশ্বের সম্পদ মনে করবে। বিপ্লবকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত মনে করবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, হতভাগ্য দেশবাসী সেখানেও তেমন কোনো উপহার ও উপঢৌকন, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা অবলোকন করল না। নিকটতম প্রতিবেশীরা পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারকে পূর্বের মতোই সচল ও সজীবভাবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গায় রেখে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিপ্লবকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে লাগল। যারা ছিল এতকাল তথাকথিত বন্ধু, তারা হয়ে উঠল দেশ ও দেশবাসীর প্রকাশ্য শত্রু। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশকে তারা ধ্বংস করার এবং কিছু কিছু ক্ষেত্র আয়ত্ত করার উন্মাদনায় মেতে উঠল। নিকটতম বড় প্রতিবেশীকে সারা দুনিয়ার মানুষ এক রকমভাবে গণতান্ত্রিক দেশ বলে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু এবার বিপ্লবের পর সারা দুনিয়ার ন্যায্য ও সুশীল মানুষ অনুধাবন করল, তাদের অনুধাবন সঠিক নয় এবং সঠিক ছিল না। একটি গণতান্ত্রিক দেশ কীভাবে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে বহু বছর ধরে বন্ধু বলে বিবেচনা করেছে, সৎ প্রতিবেশী বলে সৌহার্দ্য বজায় রেখেছে। সবাই এখন ভাবছে, প্রতিবেশী থাকাকালে না হয় সবকিছু করা সম্ভব ছিল না, কিন্তু ছাত্র-জনতার বিপ্লবের কারণে যে সরকার ধ্বংস হয়ে গেল, পতিত হলো, তাদের এত সাহায্য ও সহযোগিতা করার কি ন্যায্য বিষয় আছে। তারা অমানবিকভাবে, অগণতান্ত্রিকভাবে, আইন অমান্য করে, নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনরায় দেশের মাটিতে পুনঃস্থাপন ও পুনর্বাসন করার শুধু চেষ্টা নয়, প্রকাশ্যে অবিরতভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এসব সংগ্রাম কে প্রতিহত করছে? এককথায় বলা যায়, বিপ্লবী শক্তি ও দেশের কোটি কোটি দেশপ্রেমিক মানুষÑ যারা প্রকৃত যোদ্ধা, যাদের কোনো ট্রেনিং নেই, আছে শুধু ঈমান ও ঐক্যের অবিচল শপথ ও অঙ্গীকার, তারা এখন ডিফেন্সিভ মুড থেকে অফেন্সিভ মুডে উত্তরণ ঘটানোর প্রবল চেষ্টায় অবিরতভাবে সময় দিচ্ছে।
নানা আশার গুড়েবালির আস্তরণ পড়ে থাকলেও দেশপ্রেমিক বিপ্লবী জনগণ এখনো চিৎকার করে বলছে, আমরা ‘শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করব না।’ আমরা শহীদদের পবিত্র পরিবারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমরা আমাদের আদর্শের সাথে অবিচল ও অটল থাকব, ইনশাআল্লাহ।