জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হোক ফ্যাসিবাদ নির্মূল ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা
২৯ মে ২০২৫ ১০:৩১
॥ সরদার আবদুর রহমান ॥
পলাতক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ তার শাসনকালে কেবল দুর্নীতির মচ্ছব চালিয়ে গেছে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছে, তা-ই নয়- তারা দুটি ক্ষেত্রে সর্বাধিক ক্ষতি করে গেছে। এর একটি হলো, ‘জাতীয় ঐক্য’ নামক রক্ষাকবচকে তছনছ করে দেয়া। অপরটি হলো, দেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিবেশী দেশের পদতলে অর্ঘ প্রদান করা। এখন তাদের পতনের পর এ দুটি ক্ষেত্রকে মেরামত করার দিকে নজর দিতে হবে। ফলে এ কথা বলা যায় যে, জাতীয় ঐকের ভিত্তি হোক ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন রোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন প্রশ্ন
গত কয়েকদিন যাবত রাজনীতিতে একটা অস্থিরতার আবহ বিরাজমান ছিল। বলাইবাহুল্য এর পেছনে দূর থেকে কলকাঠি নেড়েছে বিদায় হওয়া ফ্যাসিবাদের কালো ছায়া। কিন্তু সম্ভবত এ ছায়া আর কায়া হয়ে ফিরতে পারবে না। মাঝেমধ্যে এমন পরিস্থিতি মাথাচাড়া দিলেও সেটি শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারছে না। এর মূল কারণ সেই ফ্যাসিবাদ পুনরায় ফিরে আসুক অথবা কোনোভাবে ঠাঁই করে নিক, সেটি কেউই চায় না। এছাড়া ফ্যাসিবাদীদের আসল অভিভাবক দেশটি তক্কে তক্কে আছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো জেঁকে বসার সুযোগ খুঁজতে। এটি বুঝতে পেরেই সার্বভৌমত্ব অক্ষত রাখার পক্ষের দেশপ্রেমিক শক্তি সময়ে সময়ে পাল্টা ঐক্যের নমুনা দেখিয়ে দিয়েছে চপেটাঘাতের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের মানুষ যতই দুর্বল স্মৃতির হোক, তারা এ কথা কী করে ভুলে যাবে যে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এমনভাবে দেশ চালিয়েছিল, যেখানে হত্যা, গুম, হামলা, মামলা আর ভয় দেখিয়ে মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছিল। এ শাসনের মধ্যে তরুণরা কোনো মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারেনি। আর এ সবকিছু মিলিয়ে এবং জুলাইয়ের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতির এক মানসিক ধাক্কা এখনো তাদের কিছুটা ট্রমার মধ্যে রেখেছে বলে মনে করা যেতে পারে।
দুই পক্ষেই কিছু মানুষ তো এমন আছে, যাদের এক পক্ষ তাদের শাসনকাল আবারো ফিরে আসবে- এ আশায় দিন গুনছে। অপরপক্ষ দোদুল্যমান অবস্থায় আছেÑ যদি তারা আবারো ফিরে এসে প্রতিশোধ নেয়। তবে ইতিহাস বলে, স্বৈরশাসকরা সাধারণত বড় শক্তিধর বা রাজনৈতিকভাবে নিরাপদ দেশে আশ্রয় নিলেও তাঁরা খুব কমই দেশে ফিরে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। এরকম উদাহরণ অনেক আছে। এ বাংলারই পলাতক রাজা লক্ষণ সেন আর ক্ষমতায় ফিরতে পারেননি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যায়, একজন স্বৈরশাসক একবার ক্ষমতা হারিয়ে নির্বাসনে গেলে তাঁর পুরনো সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ বদলে যায় এবং আইনগত বাধাও তৈরি হয়। ফলে তাদের আবার ক্ষমতায় ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আবার এমনো আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা কী করবে? তারা কি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পথ অনুসরণ করবে, নাকি তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো ‘ভদ্র’ হয়ে উঠবে? তাই যেকোনো ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তনের লক্ষণ প্রকাশিত হতে দেখলে এর বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য যেন আরো দৃঢ় হয় সেই প্রস্তুতি অব্যাহত রাখতে হবে।
যদিও এগুলো বহুল আলোচিত, তবু স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য বলতে হয়, বিগত কয়েক বছরে অসংখ্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগকে কলঙ্কিত করেছে। সেগুলো মোটাদাগে এরকম-
(১) সামগ্রিক নির্বাচন ও ভোটব্যবস্থাকে ধ্বংস করে কেবল আওয়ামী লীগকে বার বার ক্ষমতায় বসানোর প্রক্রিয়া হিসেবে এ নির্বাচনব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়। এমনকি সংসদে বিরোধীদলও যেন আওয়ামী লীগরই বি-টিম থাকে, সেটিও নিশ্চিত করা হয়। এজন্য শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এ ফ্যাসিবাদী অনুশীলন চলানো হয়।
(২) সরকারের প্রতিপক্ষের দলগুলোকে সবসময় দাবড়ানির মধ্যে রাখা হয়। নামমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রদর্শন করা হয়। এজন্য দলীয় কার্যক্রম গলিপথে বা চিপার মধ্যে সীমিত করে ফেলা হয়। নিত্যনতুন মামলা; এমনকি ‘গায়েবি’ হলেও দায়ের করে পুলিশ আর আদালতের মধ্যে সৃষ্ট চক্করে আটকে রাখা হয়।
(৩) যেকোনো প্রকার বিরোধিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহী কিংবা জঙ্গি তকমা দিয়ে দমন করার জন্য গুম, ক্রসফায়ার, গুপ্ত হত্যা, আয়নাঘরে আটকে রাখা প্রভৃতি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়। এসব কাজের জন্য দলের ক্যাডার ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীকে নৃশংসতার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বাহিনীগুলো প্রতিপক্ষ দমনের নির্মম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এর লক্ষ্য ছিল মানুষের মধ্যে ভয়ের অনুভূতি প্রবিষ্ট করিয়ে দাবিয়ে রাখা।
(৪) দলীয় ও আত্মীয়করণ ছিল এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টর ও বিভাগের নিয়ন্ত্রক পদগুলোয় দলের ক্যাডারদের পদায়ন করা হয়। মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় অনুগত লোকেরা অগ্রাধিকার লাভ করে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারা পর্যন্ত প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে গর্ববোধ করতো।
(৫) চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, সিন্ডিকেটবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্য, পদ-বাণিজ্য, লুণ্ঠনবাজি প্রভৃতিকে কোনো অপরাধ বলে মনে করা হতো না। একচেটিয়া ক্ষমতাভোগী হওয়ার দৌলতে এসব ছিল স্বাভাবিক প্রবণতার অংশ। কেন্দ্রীয় হোক বা স্থানীয়Ñ অধিকাংশ নেতার ছিল নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এরা পাল্টাপাল্টি দখলদারিত্বে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি বড় অংশ এ অপকর্মের ভাগিদার হয়ে পড়েছিল।
(৬) পুরো গণমাধ্যমকে হয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অথবা ভীতি সৃষ্টি করে পুরোপুরি কব্জায় নিয়ে নেয়া হয়। সরকারের নীতি-পলিসির বিরোধিতা বা সমালোচনা করা ছিল মহা অপরাধের কাজ। গণমাধ্যম বন্ধ করে অথবা দখল করে নিজেদের লোকদের মালিকানায় দিয়ে তোষামাদকারী মিডিয়া হাউসে পরিণত করা হয়। এর ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতার অস্তিত্বই লুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়।
(৭) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লুণ্ঠনের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাধারণ ব্যাংক সর্বত্র এ লুণ্ঠন ছিল বেপরোয়া। নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার, আমদানি-রফতানি খাত ব্যবহার করে এলসির নামে অর্থ গায়েব করা এবং প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা ও উন্নয়ন বরাদ্দের নামে দুর্নীতি ছিল ওপেন সিক্রেট ব্যাপার। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর ড্রাইভার থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পপতি এবং খোদ রাষ্ট্রের কর্ণধার পর্যন্ত বেআইনি ও অবৈধ বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হয়ে পড়ে। দুর্নীতির মচ্ছব ছিল একরকম প্রকাশ্যে। এর প্রতিকারও ছিল আইওয়াশ মাত্র।
(৮) সর্বশেষ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার প্রয়াসে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অভাবনীয় প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করা হয়। এজন্য দেড় সহস্রাধিক জীবন কেড়ে নেয়া হয়। আহত ও স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হয় অন্তত ২৫ হাজার মানুষকে। এভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অপরাধ সংঘটন করে তারা।
উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী শাসকরা তাদের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে। হয় তারা এগুলো অনুসরণ করে নিজেদের ফ্যাসিবাদীর খাতায় নাম লেখাবে এবং জনরোষের মুখে পতিত হবে। ফলে পুনরায় গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হবে এবং সরকারের পতন ঘটবে। বিপরীতে সুযোগ থাকবে আওয়ামী নীতি-প্রক্রিয়ার বিপরীত অবস্থান নিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ বেছে নিবে।
সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে ঐক্য
জাতীয় ঐক্যের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্ন। প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও দুনিয়ার যেকোনো দেশের সঙ্গেই কেবল সমতার ভিত্তিতে দাদাগিরি বা বড় ভাই সুলভ নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যে বিপুল অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজমান ছিল, তা শুধরে নিয়ে ব্যক্তি বা বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তে রাষ্ট্র বা সরকার টু সরকার সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। যাতে ক্ষমতায় দলের পরিবর্তন হলেও সেটি যেন অটুট থাকে।
বিগত সময়কালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলানো ছিল একটি অতি সাধারণ ঘটনা। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হলেও তার কোনো তোয়াক্কা ছিল না। আর সেই বদাভ্যাস বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পরও অব্যাহত রাখতে চেয়েছে। তারা কখনো নির্বাচনে, কখনো সংখ্যালঘু প্রশ্নে, কখনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ইস্যুতে; এমনকি আসামি গ্রেফতার নিয়েও বক্তব্য-মন্তব্য দিয়েছে। অথচ ভারতে সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যতনের বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করলে তাতে তারা বিরক্তি প্রকাশ করে। তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়; যাতে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা যায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনকে তারা যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তারা বাংলাদেশের পলাতক লোকদের কেবল আশ্রয়ই দেয়নি, সেখান থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নানা প্রকার হুমকি-ধামকি দিয়ে চলেছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে। এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এটি পরিকল্পিত বলে মনে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশকে উজানের নদনদীর পানির ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। একতরফা পানি আটকানো ও খাল কেটে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে জিম্মি করে রাখতে চায়। এটিও বাংলাদেশের সার্বভৌম অবস্থানকে অবজ্ঞা করার নামান্তর। ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভারত ভারসাম্য রক্ষার বদলে একতরফা নিজেদের দিকে পাল্লা ভারী রাখতে চায়। হাসিনা রেজিমে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অনেকেই মনে করেন, এর মাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত প্রভাব বাড়ে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপরও প্রভাব ফেলতে থাকে। বিশেষ করে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ এবং বাণিজ্যিক খাতে ভারতীয় বিনিয়োগকে ঘিরে এসব আশঙ্কা তৈরি হয়। বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রচুর পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশে নানা সীমাবদ্ধতা ও জটিলতার সম্মুখীন হয়। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, অসম বাণিজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হ্রাস করতে এবং ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে থাকে। অনেকেই মনে করেন, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে থাকে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের জাতীয় ঐক্য মজবুত হলে সেই আশঙ্কা অনেকাংশে দূরীভূত হবে বলে আশা করা যায়। দেরিতে হলেও বাণিজ্যিক বিনিময়েও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের জোয়ার আওয়ামী সরকারের পতনের পর ভারতের বিজেপি সরকারের পাশাপাশি সেখানকার কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের ওপর বিষের গরল উগরে দিতে থাকে, সেটি ছিল এক নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে তারা প্রকাশ্যে পক্ষপাতমূলক অবস্থান নেয়। মনে হচ্ছিল যে, দুই দেশ সামরিক সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। আর ভারতের মিডিয়া সরাসরি যুদ্ধের মাঠ থেকে তার উত্তেজক ধারাবিবরণী দিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক ইস্যুতে ভারতের কূটনৈতিক কার্যক্রম এবং মন্তব্য মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে অবশ্য এর ধার কমে যায় এবং কিছু মিডিয়া; বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের প্রচারের ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে। বরং কোনো কোনো মিডিয়া ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়।
উপরোক্ত বিবরণ মোতাবেক আমাদের করণীয় হলো, জাতীয় ঐক্যকে প্রধানত এ দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য স্থির করা। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থায় ফ্যাসিবাদের দিনগুলো যেন আর কখনোই ফিরে না আসে সে, ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেন অন্য কোনো শক্তির কাছে বিপন্ন না হতে পারে, সে ব্যাপারেও সচেতন হওয়া সময়ের দাবি।