ফ্যাসিবাদ ফেরানোর অপচেষ্টা ব্যর্থ


২৯ মে ২০২৫ ০৯:৩৯

॥ ফারাহ মাসুম॥
বাংলাদেশে আধিপত্যবাদী শক্তির সহায়তায় ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আবারও ব্যর্থ হয়েছে। এবার দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকারী একটি শক্তির ওপর ভর করে অরাজকতা তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলো পতিত স্বৈরাচারী শক্তি। ফ্যাসিবাদবিরোধী দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকায় এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে দায়িত্বশীল সমন্বয়কের ভূমিকা রাখেন এ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচনের কাজ একসাথে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ড. ইউনূসের নেতৃত্ব গ্রহণ-পরবর্তী সময়ে এ বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে জোরালো। ধারণা করা হয়, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আয়োজন করা বিক্ষোভে স্বৈরাচারের দোসর রাজনৈতিক শক্তি ঢুকে পড়ে প্রফেসর ড. ইউনূস যাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, তেমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। শেষ পর্যন্ত সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে নতুন সমন্বয়ের বাস্তবতা তৈরি হয়।
এবারের বিক্ষোভের মূল কারণগুলোর মধ্যে ছিল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সেনাপ্রধান যার যার পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আহ্বান জানান। অন্যদিকে প্রফেসর ইউনূস ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে একটি বিস্তৃত সময়সীমার প্রস্তাব করেন। এ বিলম্বের সাথে ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রচেষ্টার কিছুটা ধীরগতি বিএনপির মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তারা ঢাকায় বেসামরিক কর্মচারী, শিক্ষক এবং কর্মীদের বিক্ষোভকে উসকে দেয়। এর সাথে সাথে ঢাকায় আওয়ামী আমলের একতরফা নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিএনপি প্রার্থী ইশরাককে কোর্টের রায় অনুযায়ী মেয়র ঘোষণার জন্য আগ্রাসী চাপ সৃষ্টি করা হয়। হুমকি দেয়া হয় যে, দাবি পূরণ না হলে এরপর ‘যমুনা’ ঘেরাও করা হবে।
এদিকে সামরিক বাহিনীর সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা ইস্যুতে দূরত্ব ও সমন্বয়হীনতা বাড়তে থাকে। একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা লবি এ দূরত্ব ও রাজনৈতিক শক্তির দ্রুত ক্ষমতা পাবার আকাক্সক্ষাকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলনের উত্তেজনা তৈরির জন্য কাজে লাগায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ড. ইউনূস এবং সামরিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ও সম্ভাব্য দ্বন্দ্বে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান পদত্যাগের চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। তিনি মনে করেন যে, বর্তমান পরিবেশে তার পক্ষে একটি মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এ প্রতিশ্রুতি তিনি জাতির কাছে দিয়েছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অভ্যন্তরে সবাই একই লাইনে না ভাবার বিষয়ও জানা যায়। এ অভ্যন্তরীণ দূরত্ব রাজনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে তাদের আকাক্সক্ষার চেয়ে বিলম্ব বিএনপির মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়। এ অসন্তোষ রাস্তায় বিক্ষোভের জন্ম দিলে রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র হয়। সেনা এড্রেসে বিএনপির নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ে অবস্থানকে সমর্থন করে সেনাপ্রধানের দেয়া বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে, যা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দেয়। উপরন্তু, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ করায় সেটিও চাপ হিসেবে যুক্ত হয়।
এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে যোগাযোগ করে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা নেন। এ ব্যাপারে অভিভাবকসুলভ ভূমিকা রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর সাথে সরকারের ঐকমত্য কমিশনের কয়েকজন সদস্য ও কয়েকজন উপদেষ্টা উভয়পক্ষের দূরত্ব নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেন। এতে শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে নির্বাচন ও সংস্কারের ব্যাপারে একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তির বিরোধীদলের দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আহূত বিক্ষোভে ঢুকে পড়ে প্রফেসর ড. ইউনূসের পতন ঘটিয়ে পুরো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং পতিত শেখ হাসিনার চট করে দেশে ঢুকে পড়ার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, এ পরিকল্পনায় একটি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা দ্বিমুখী নকশা নিয়ে সামনে এগোয়। বিএনপিকে ধারণা দেয়া হয় যে, অধ্যাপক ইউনূসের সরকার নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে বিলম্ব করবে। এমনকি ৫ বছর থেকেও যেতে পারে। এতে বিএনপির ক্ষমতায় যাবার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর ড. ইউনূসের পতনের পর সেনাপ্রধানের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বিএনপির নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন হলে তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে বলা হয়, বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে ড. ইউনূসের পতন ঘটানো গেলে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে আসবে। একপর্যায়ে তারা নিজের পরিচয় নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে প্রতিবেশী দেশের নেটওয়ার্কের সহায়তায় রাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। আর এ সময় শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন। প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা বাহিনী তার নিরাপত্তা বিধান করবেন আর রাষ্ট্রপতি চুপ্পু হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করবেন।
এ পরিকল্পনার কথা আওয়ামী লীগের সবার কাছে গোপনে পৌঁছে দেয়া হয়। তারা যার যার মতো অবস্থান নিতে থাকেন। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এগিয়ে আসা এবং একাধিক শক্তিমান আন্তর্জাতিক পক্ষ প্রফেসর ইউনূসের সমর্থনে বার্তা দিলে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। অন্তর্বর্র্তী সরকারের কর্তৃত্ব আবার ফিরে আসে পরিস্থিতির ওপর।
নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ড. ইউনূস নির্বাচনী সংস্কারের সময় ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে চলমান আলোচনার সাথে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া তদারকি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন।
ভারতের রহস্যময়ী অবস্থান
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ভারত দৃশ্যত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উদ্বেগের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগের ভারসাম্য বজায় রেখে সতর্ক ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। তবে তাদের রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি। যদিও অন্য দলগুলোর সাথেও সমান্তরাল যোগাযোগ বজায় রাখার নীতি রয়েছে প্রতিবেশী দেশটির।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ভারত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের সাথে দেখা করে স্বরাষ্ট্র, জ্বালানি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এ বৈঠকগুলো আরও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের অপেক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য ভারতের আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।
কিন্তু একই সাথে বাংলাদেশে নানা ধরনের অস্থিরতার পেছনে প্রতিবেশী দেশটির হাত খুঁজে পাওয়া যায়। পুশইন এবং সীমান্ত হত্যার মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির নীতি অব্যাহত রাখে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে পশ্চিমা অবস্থান
পশ্চিমা দেশগুলো সাধারণভাবে বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সংস্কার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কূটনৈতিক সমর্থন ও সহায়তা প্রদান করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের প্রশাসনের প্রতি দৃঢ সমর্থন দেখিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশকে ‘গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গঠনে’ সহায়তা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সহযোগিতা করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন। উপরন্তু, সুশাসন, স্থিতিস্থাপকতা, সামাজিক সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইইউ তার ক্রান্তিকালীন সময়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল ইইউ তার ক্রান্তিকালীন সময়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং অতীতের সহিংসতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক মানবাধিকারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশে তহবিল বৃদ্ধির ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, শক্তি, পানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোয় মনোনিবেশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্য ড. ইউনূসের সরকারের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থন দেখিয়েছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং এটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে বর্ণনা করেছেন। জার্মানিও একইভাবে সমর্থন জানিয়েছে, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের মসৃণ রূপান্তরের ওপর জোর দিয়েছে।
কানাডা: কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্বোধনকে স্বাগত জানিয়েছেন। গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আইনের শাসনকে উৎসাহিত করার জন্য সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক : ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক বাংলাদেশে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যার লক্ষ্য তার তহবিল দ্বিগুণ করে ২ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত করা। তবে, ব্যাংকটি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে মানবাধিকার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের সাথে আলোচনায় এ বিষয়গুলোর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ: বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী দুই প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। আইএমএফ তার সর্বশেষ বাজেট সহায়তার কিস্তি অনুমোদন করেছে। বিশ্বব্যাংক নতুন সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে।
সংক্ষেপে পশ্চিমা দেশগুলো ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মূলত স্বাগত জানিয়েছে। কূটনৈতিক সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। যদিও তারা মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। গণতান্ত্রিক নীতি এবং মানবাধিকারের পক্ষে সমর্থনের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখছে।
চীন: চীন তাদের অবস্থানের কথা সাধারণভাবে প্রকাশ্যে না জানালেও অন্তর্বর্র্তী সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। এবারের রাজনৈতিক সংকটে সেনা প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্তর্বর্র্তী প্রশাসনের দূরত্ব নিরসনের ক্ষেত্রে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অন্তর্বর্র্তী সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের কারণে যেকোনো সামরিক আগ্রাসনের বিষয়ে ৫ বার ভাবতে হচ্ছে ভারতকে।
সামরিক হস্তক্ষেপের জল্পনা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একীভূত এবং ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের সাথে; বিশেষ করে শান্তিরক্ষায় ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। নানা ধরনের জল্পনা থাকলেও এক্ষেত্রে যেকোনো সামরিক অভ্যুত্থান আন্তর্জাতিক নিন্দা এবং সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে পড়বে, যা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সেনা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব পর্যায়ে সামরিক অসন্তোষ বা দলাদলির কোনো উল্লেখযোগ্য প্রকাশ্য প্রমাণ নেই। বর্তমান সরকারের অধীনে সামরিক বাহিনী অর্থনৈতিক ও পেশাগতভাবে লাভবান হচ্ছে, হস্তক্ষেপের প্রণোদনা হ্রাস করছে।
যদিও কোনো দেশ রাজনৈতিক ধাক্কা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে। তবে যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় অথবা অভিজাতদের বিভাজন নাটকীয়ভাবে গভীর হয়, তাহলে ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, যা কোনোভাইে সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য অনুকূল নয়।