নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে কারা?
২৯ মে ২০২৫ ০৯:৩৫
স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন ও জারির প্রেক্ষিতে সচিবালয়ে আন্দোলনে নামেন সরকারি কর্মচারীরা। গত কয়েকদিন ধরে চলা এ আন্দোলন ২৮ মে এ রিপোর্ট লেখার দিন পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। গত ২২ মে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর থেকে এ অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলনের মধ্যেই গত ২৫ মে রোববার সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করে সরকার। এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ২৭ মে পর্যন্ত সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। এদিকে সচিবালয়ে আন্দোলনের নেপথ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছেন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা। অপরদিকে, আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বলছেন, সরকারের উচিত এখনই সচিবালয়কে ফ্যাসিস্টমুক্ত করা। এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হওয়ার কথা বলছেন তারা।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ খসড়া বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন সচিবালয়ের কর্মচারী ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রোববার সন্ধ্যায় চাকরিচ্যুতির মতো শাস্তির বিধান রেখেই সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ,-২০২৫’র গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এরপর ২৬ মে সোমবার আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ২৫ মে রোববার সকাল ১০টায় সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের দুই অংশের নেতারা চার নম্বর ভবনের পেছনের টিনশেডে বসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে বেলা ১১টার দিকে অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের বাদামতলায় জমায়েত হন। শুরুতে বাদিউল কবিরের নেতৃত্বে একটি মিছিলে এসে বাদামতলায় সমবেত হয়। এরপর নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বাদামতলায় আসে। এর একটু পরেই আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী ফোরামের আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে আগের দুটি মিছিলের সঙ্গে সমবেত হয়। পরে ২৭ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ২৮ মে এ রিপোর্ট লেখার দিন সকালে সচিবালয়ে যে কর্মসূচি পালনের কথা ছিল, তা হয়নি।
২৭ মে সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সিনিয়র সচিব সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচজন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন সচিবালয়ের আন্দোলনরত কর্মচারীরা। বৈঠক শেষে ভূমি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনিসহ কয়েকজন সচিবকে সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব দায়িত্ব দেন। সে অনুযায়ী তারা আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছেন। তাদের কথা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানানো হবে। এদিকে বাংলাদেশ সচিবালয় সংযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবির বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে আলোচনা করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন কর্মসূচি বন্ধ রাখব। তবে দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার কথা বলেন তিনি।’
এদিকে সংস্কারে বাধা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারকে জিম্মি করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, কর্মচারীরা সরকারের কাজে বাধা দিলে, হুমকি দিলে জনগণই তাদের বিকল্প খুঁজে নেবে। প্রায় একই রকম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফেসবুক পোস্ট করেছেন দলটির অন্যতম নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ।
অধ্যাদেশে কী আছে
অধ্যাদেশে সরকারি কর্মচারীদের (আইনানুযায়ী সবাই কর্মচারী) চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো-সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। এসব অপরাধের শাস্তি হিসাবে বলা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি হতে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।
সচিবালয়ে সংকট নিরসনে সচিব কমিটি
সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন সামাল দিতে গঠিত হয়েছে ৮ সদস্যের সচিব কমিটি। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি বিক্ষোভরতদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসেছে।
সচিবালয় ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
বাংলাদেশ সচিবালয় ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২৬ মে সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া ২৭ মে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সব ধরনের দর্শনার্থীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ১০ মে ২০২৫ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ওই নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।