আল্লাহর পথে আহ্বানের গুরুত্ব
২২ মে ২০২৫ ১৭:১২
॥ ডক্টর মোহাম্মদ ইদ্রিস ॥
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুহাম্মদ (সা.)-কে চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়্যত দান করেন। মুহাম্মদ (সা.) প্রথম তিন বছর নীরবে গোপনে দীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। অতঃপর প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ আসার পর মুহাম্মদ (সা.) প্রকাশ্যে দীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। মুশরিকরা হাসি-তামাশা, গাল-মন্দ, হুমকি-ধমকি এবং বানোয়াট কথা প্রচার করে তাঁর বিরোধিতা করতে থাকে। মুশরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সত্যসন্ধানী মানুষ একে একে মুমিনদের কাফেলায় শামিল হতে থাকে। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মুশরিক শক্তি। নবুয়্যতের পঞ্চম সন থেকে দৈহিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে অবস্থা এতই নাজুক হয়ে ওঠে যে, বহুসংখ্যক মুমিন ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভেড়া-ঘোড়া-উট ইত্যাদি পেছনে ফেলে হাবশায় হিজরত করেন। আর যাঁরা মক্কায় থেকে গিয়েছিলেন, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
নবুয়্যতের ৬ষ্ঠ সনে কুরাইশদের ১০টি গোত্রের ৯টি গোত্র বনু হাশিমের বিরুদ্ধে একটি বয়কট চুক্তি স্বাক্ষর করে। মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যা করার জন্য তাদের হাতে না দেওয়া পর্যন্ত এ বয়কট চুক্তি বলবৎ থাকবে বলে স্থিরীকৃত হয়। প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য আবু তালিবের নেতৃত্বে বনু হাশিম এবং মুহাম্মদ (সা.) সহ মুমিনগণ তাঁবু খাটিয়ে শিয়াবে আবু তালিব নামক স্থানে অবস্থান করতে থাকেন। তিন বছর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে আল্লাহর অনুগ্রহে কয়েকজন বিবেকবান কুরাইশ যুবকের উদ্যোগে এ অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুহাম্মদ (সা.), মুমিনগণ এবং বনু হাশিম মুক্তি লাভ করেন। তবে বিরোধিতার মাত্রা সমভাবেই চলতে থাকে। মুমিনদের জন্য মক্কায় জীবনযাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এ সময়টিতে নাজিলকৃত সূরাগুলোর একটি হচ্ছে সূরা আন্ নাহল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় দাওয়াতদানের পদ্ধতি তুলে ধরেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর পথে লোকদের আহ্বান জানানোর বাস্তবসম্মত পদ্ধতি মুমিনদের জানিয়ে এরশাদ করেন, ‘বিজ্ঞতা (বুদ্ধিমত্তা-বিচক্ষণতা) অবলম্বন করে ও নসিহতপূর্ণ সুন্দর বক্তব্যের মাধ্যমে লোকদের তোমার রবের পথের দিকে ডাক। আর তাদের সাথে বাক্যবিনিময় কর সর্বোত্তম যুক্তি-প্রদর্শন করে। অবশ্যই তোমার প্রভু বেশি জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়েছে এবং তিনি বেশি জানেন, কে আছে সঠিক পথে।’ [সূরা আন-নহল: ১২৫]।
দাওয়াতের অর্থ: শব্দটি দাওয়াত আরবি শব্দ হতে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ আহ্বান, নিমন্ত্রণ, ডাকা, সাহায্য কমনা, প্রচার, অনুরোধ ইত্যাদি। [লিসানুল আরব]। অন্য অর্থে কাউকে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহিত করা প্রভৃতি। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে, “সে (ইউসুফ) বলল, ‘হে আমার প্রভু, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করছে, তা থেকে কারাগারই আমার নিকট অধিক প্রিয়।” [সূরা ইউসুফ: ৩৩]। পারিভাষিক অর্থে কোনো নির্দিষ্ট পথ, মত ও আদর্শের প্রতি মানুষকে আহ্বান জাননো ও বাস্তব জীবনে তা চর্চার পন্থা দেখিয়ে দেওয়ার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সামগ্রিক পদ্ধতি ও কৌশলের নামই দাওয়া। রবের পথে বলতে যে দাওয়াত বা আহ্বান মানুষকে তার রব প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার দিকে আমন্ত্রণ জানায় তা-ই রবের পথে দাওয়া। এটি আল্লাহ রব্বুল আলামিনের একত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি আহ্বান ও তাঁর প্রদত্ত একমাত্র জীবনব্যবস্থা দীন ইসলামকে পূর্ণরূপে গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যক্রমকে নির্দেশ করে।
আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আদ্-দাওয়াতু ইলাল্লাহর সরাসরি নির্দেশ রয়েছে। সূরা আল-মুদ্দাস্সিরের ২য় ও ৩য় আয়াতে এ সম্পর্কে প্রথম নির্দেশ এসেছে। আয়াত দুটিতে মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘ওঠ, লোকদেরকে সাবধান কর। তোমার রবের বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ কর, প্রতিষ্ঠা কর।’ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন আরো বলেন, ‘ওদের বল, এটাই তো আমার পথ যে, আমি লোকদের আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই।’ [সূরা ইউসুফ: ১০৮]। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘তোমার রবের পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।’ [সূরা আল মায়েদা : ৬৭]। যেই কথাগুলো ব্যবহার করে লোকদের আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানো হয়, সেই কথাগুলো সর্বোত্তম কথা বলে উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে লোকদের ডাকে, আমালুছ্ ছালিহ করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের একজন।’ [সূরা হা-মীম আস সাজদা: ৩৩]। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে একটি বাণী হলেও তা প্রচার কর। বানী ইসরাঈলদের থেকে (তাদের মধ্যে সংঘটিত বিষয়াদির) বর্ণনা কর, তাতে কোনো অসুবিধা নেই আর যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলবে, সে অবশ্যই জাহান্নামে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নেবে’। [সহীহুল বুখারী]।
আহ্বানের বিষয়বস্তু: যুগে যুগে নবী-রাসূলগণের (আ.) অভিন্ন আহ্বান ছিল তাগুতকে পরিহার করে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের দিকে মানুষকে নিয়ে আসা এবং মানুষকে তার প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার দিকে আমন্ত্রণ জানানো। যেমন-এরশাদ করা হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছিÑ যেন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর তাগুতকে।’ [সূরা আন-নাহল: ৩৬]।
প্রাচীন ইরাকের উর সাম্রাজ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন ইবরাহীম (আ.)। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় করে চল। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা তা বুঝ।’ [সূর ‘আনকাবুত : ১৬]। প্রাচীন আরবের প্রতাপশালী আদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন হুদ (আ.)। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ [সূরা ‘আনকাবুত : ১৬]। সামুদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন ছালিহ (আ.)। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ [সূরা হুদ : ৬১]। প্রাচীন আরবের তাবুক এবং এর নিকটবর্তী বিস্তৃত এলাকায় বসবাস করতো মাদ্ইয়ান জাতি। এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন শুয়াইব (আ.) তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ [সূরা হুদ : ৮৪]।
কানান বা ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইয়াকুব (আ.)-এর এক নেক সন্তান ছিলেন ইউসুফ (আ.)। ঈর্ষাপরায়ণ ভাইদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি নির্জন মরুভূমির এক কূপে নিক্ষিপ্ত হন। একটি বাণিজ্য কাফিলার লোক তাঁকে কূপ থেকে বের করে মিসরে নিয়ে সেখানকার প্রতাপশালী এক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করে। সেই প্রতাপশালী ব্যক্তির স্ত্রীর ষড়যন্তে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ইতোমধ্যে ইউসুফ (আ.) নবুয়্যত লাভ করেন। কারাগারের বন্দিদের মাঝেই তিনি দাওয়াতি কাজ শুরু করেন। বন্দিদের উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারো নয়। তাঁর নির্দেশ, তাঁকে ছাড়া তোমরা আর কারো ইবাদাত করবে না। এটাই মজবুত জীবনব্যবস্থা। অথচ অধিকাংশ লোকই তা জানে না।’ [সূরা ইউসুফ : ৪০]। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন মূসা ইবনে ইমরান (আ.)। তিনি মিসরবাসীর নিকট এবং ফেরাউনের নিকট দীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। ফেরাউনের সামনে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের আমার হাতে সঁপে দাও। আমি তোমাদের প্রতি বিশ্বস্ত রাসূল হিসেবে প্রেরিত। আল্লাহর ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে যেয়ো না। আমি তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট সনদ পেশ করছি।’ [সূরা আদ্ দুখান-১৮, ১৯]। ফিলিস্তিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব, তোমাদেরও রব। অতএব একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। এটাই সরল-সঠিক পথ।’ [সূরা মরিয়ম : ৩৬]।
দাওয়াতদানের গুরুত্ব: আলোচ্য আয়াতে (সূরা আন-নাহলের ১২৫) যেমন দাওয়াতি কাজের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলাত বর্ণিত হয়েছে, একইভাবে আল-কুরআনের অন্যান্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এরূপ এক দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে এবং ভাল কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজের নিষেধ করে আর তারাই সফলকাম’। [আলে ইমরান : ১০৪]। আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদের মানবজাতির কল্যাণের জন্য উদ্ভব করা হয়েছে, তোমরা ভালো কাজের আদেশ কর এবং মন্দ কাজ নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।’ [সূরা আলে-ইমরান : ১১০]। উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘হে মানব সকল! আল্লাহ বলেন, তোমরা সৎকাজের আদেশ কর আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখ, এমন মুহূর্ত আসার আগে যখন তোমরা আমাকে ডাকবে, আমি তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেব না, আমার নিকট চাইবে কিন্তু আমি তোমাদের দেব না এবং তোমরা আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে আমি তোমাদের সাহায্য করবো না’। [মুসনাদে আহমাদ]। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় দেখলে সে যেন হাতের দ্বারা তা পরিবর্তন করে। যদি তাতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন তার জিহ্বা দ্বারা তা পরিবর্তন করে, তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সে যেন অন্তর দ্বারা পরিবর্তন করে আর এটা সর্বাধিক দুর্বল ঈমান।’ [সহীহ মুসলিম]
আবু মাসউদ উকবা ইবনে আমর আল আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যেই ব্যক্তি কোনো ভালো পথ দেখায়, সেই ব্যক্তি এতটাই বিনিময় পায় যতটা ঐ কাজ সম্পাদনকারী পেয়ে থাকে।’ [সহীহ মুসলিম]। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যেই ব্যক্তি কাউকে হিদায়াতের পথের দিকে ডাকে, তার জন্য ঐ পথের অনুসারী ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত পুরস্কারের অনুরূপ পুরস্কার রয়েছে।’ [সহীহ মুসলিম]। আবু সাঈদ আল খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা রাস্তার পাশে বসার বিষয়ে সাবধান হও! তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের বৈঠকে বসা ছাড়া আর উপায় নেই, আমরা তো সেখানে কথাবার্তা বলি। তিনি বলেন, তোমরা যদি বসতেও চাও, তাহলে পথের হক আদায় করবে। তারা বললো, পথের হক কি? তিনি বলেন, দৃষ্টি সংযত করা, কষ্ঠদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর দান করা, সৎ কর্মের নির্দেশ দেয়া এবং অন্যায় কর্মকে নিষেধ করা’। [সহীহ মুসলিম]।
দাঈর কর্তব্য : একজন দাঈর অবশ্যই তাঁর প্রচারিত আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবান, বিশ্বাসী ও তার পূর্ণ অনুসরণকারী হবেন। তাকে সর্বপ্রথমে তার ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও সকল দিকে দাওয়াতের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর নিকট বড়ই ক্রোধের বিষয়।’ [সূরা আস-সফ: ২-৩]। একজন দাঈ ইলাল্লাহ পূর্ণাঙ্গ ইসলামকেই মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। ইসলামের অংশবিশেষ তুলে ধরা এবং অংশবিশেষ গোপন করা অন্যায়। পূর্ণাঙ্গ ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরার তাকিদ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে কে বেশি জালিম হতে পারে, যার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া একটি সাক্ষ্য রয়েছে, আর সেটি সে গোপন করে।’ [সূরা আল-বাকারা: ১৪০]। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘এমন যেন না হয় যে তোমার প্রতি যা কিছু ওহি করা হচ্ছে, তার কিছু অংশ তুমি উপস্থাপন করা থেকে বাদ দেবে এবং এসব প্রচারণায় তোমার মন সংকুচিত হবে যে, এ ব্যক্তির ওপর কোনো ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন অথবা এর সাথে কোনো ফেরেশতা আসেনি কেন? তুমি তো কেবল একজন সতর্ককারী। আর সব কাজের বিধায়ক তো আল্লাহই’। [সূরা হুদ: ১২]।
সমাপনী: বিজ্ঞতা-বুদ্ধিমত্তা-বিচক্ষণতা সহকারে লোকদের আল্লাহর পথে আহ্বান জানাতে হবে। নসিহতপূর্ণ সুন্দর বক্তব্য উপস্থাপন করে এবং সর্বোত্তম যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে লোকদের আল্লাহর পথে আহ্বান জানাতে হবে। নবী-রাসূলগণের (আ.) অভিন্ন আহ্বান ছিল আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের দিকে মানুষকে নিয়ে আসা। শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আমাদের মানবজাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান জানাতে হবে। একজন দাঈ অবশ্যই তাঁর প্রচারিত আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবান, বিশ্বাসী ও তার পূর্ণ অনুসরণকারী হবেন। তাকে সর্বপ্রথমে তার ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও সকল দিকে দাওয়াতের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হিদায়াতপ্রাপ্তি একদিকে ব্যক্তির আগ্রহ; অন্যদিকে আল্লাহর অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। দাঈর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক অব্যাহতভাবে দাওয়াতি কাজে অবিরত থাকা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সর্বাবস্থায় আদ্ দাওয়াতু ইলাল্লাহর কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাঁথিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সাঁথিয়া, পাবনা।