সরকারি রামাইডাঙ্গা বিল উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন
১৫ মে ২০২৫ ১৬:১৪
শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা: বগুড়ার শেরপুরে গোয়ালজানী ও সাতাড়া গ্রাম দুটির মধ্য দিয়ে বহমান রামাইডাঙ্গা বিল। শতবিঘা আয়তনের সরকারি জলাশয় এটি। একসময় এ বিল থেকে পানি সেচ দিয়ে অন্তত দেড় হাজার বিঘা জমি চাষাবাদ করতেন কৃষক। পাশাপাশি বাঙালি নদী থেকে আসা নানা প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়া পাঠ জাগ দেওয়া, গরু-মহিষকে গোসল করানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো বিলটির পানি। কিন্তু জনস্বার্থে ব্যবহার্য ওই বিলটি চলে গেছে প্রভাবশালীদের কব্জায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বিলটির সিংহভাগ জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে বিলের মধ্যে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন চক্রটি। ফলে বিলের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বিলের জমিতে মাটি ভরাট করে বসতবাড়ি বানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ সরকারি সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। ফলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই সরকারি বিলটি রক্ষার দাবিতে মাঠে নেমেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে গোয়ালজানি ঈদগাঁ মাঠে স্থানীয় এলাকাবাসীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে নানা শ্রেণি-পেশারসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তৃতায় উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল্লাহ আল মামুন জিহাদ বলেন, গোয়ালজানি মৌজায় একত্রিশ দশমিক আশি একর আয়তনের একটি বিল রয়েছে। যার নাম রামাইডাঙ্গা বিল। ব্রিটিস আমলে এটি প্রসন্ন নাথ চক্রবর্তী ও হেমচন্দ্র স্যানাল দিং পত্তনী নিয়ে ভোগদখল করতেন। তাঁরা অজ্ঞাতবাস হলে বিলটি এমআরআর (এসএ) খতিয়ানে সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ান হিসেবে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিলটি জনস্বার্থে ব্যবহার্য হিসেবে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমে আ.লীগ নেতা আফজাল হোসেন, রজব আলী সরকার, আছাব আলী সরকার, আলী আজগর, আব্দুল খালেক, সিরাজদৌল্লা, আব্দুর রশিদ আকন্দ ও সৌরভ আলী বিলের জমি দখলে নিতে জালিয়াতির মাধ্যমে রামাইডাঙ্গা বিল কাগজে-কলমে হাওয়া করে দেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেদের নামে বিলের চব্বিশ দশমিক ছেষট্টি একর জমি আরএস খতিয়ান প্রস্তুত করে নেন। তাই সরকারি এ বিলটি জনসাধারণের অনুকূলে ব্যবহার্য হিসাবে এক নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তকরণসহ স্থায়ীভাবে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানান তিনি।
আব্দুল্লা আল মামুন জিহাদ অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বিলের জমি অবৈধভাবে দখল ও নিজেদের নামে রেকর্ড প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এরপরও প্রভাবশালী ওই চক্রটি বসে নেই। সরকারি ওইসব কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিলের জমি দখলের মহোৎসব চালাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদের সহযোগিতা দিচ্ছেন। এসব নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বিলের একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে বাঙালি নদীর সঙ্গে মিশে যাওয়া ওই বিলটির পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বিল থেকে কোনো সুফল পাচ্ছে না এলাকার সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি অভিযোগ তদন্তে সরেজমিন গেলে সত্যতাও পাওয়া যায়। দেখা যায়, শতবিঘা আয়তনের সরকারি রামাইডাঙ্গা বিলটিতে অন্তত পনেরটি বাঁধ দিয়ে ছোট-বড় জলাশয় বানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিলের জমি নিজেদের মালিকানা দাবি করছেন ওইসব প্রভাবশালী। তাই সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করছেন তারা। আবার বিলের জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করে বসতবাড়ি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বুলু, শাজাহান আলী, মুকুল হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির স্থানীয় নেতাদের প্রভাবে বিগত পনের বছর রামাইডাঙ্গা বিলটি নিজেদের দখলে রাখেন ওইসব প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর এখন উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আবু সাঈদ, হুমায়ুন কবির বিপ্লব, মানিক মিয়া ও ইউনুসের সঙ্গে মিলেমিশে সরকারি ওই বিলটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন আ.লীগ নেতাকর্মীরা। ভাগ-বাঁটোয়ারার ক্ষেত্রে দল দুটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা একাট্টা বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে বক্তব্য জানতে চাইলে সুঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির বিপ্লব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রামাইডাঙ্গা বিলের জমি দখল ও মাছ চাষের সঙ্গে তিনিসহ দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নেই বলে দাবি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি খাল-বিল ও নদী দখলের কোনো সুযোগ নেই। তাই রামাইডাঙ্গা বিল দখলের বিষয়টি জানার পর দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিলের সরকারি খাসজমি উদ্ধারে অচিরেই অভিযান চালানো হবে বলে দাবি করেন তিনি।