চার মাস পর লন্ডন থেকে ফিরলেন খালেদা জিয়া
৮ মে ২০২৫ ১৩:৪৭
স্টাফ রিপোর্টার : চার মাস লন্ডনে অবস্থানের পর গত ৬ মে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। লাখো ভক্ত ও অনুসারীর শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন খালেদা জিয়া। তিনি দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
এ অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন যান। ১৭ দিন ক্লিনিকে থেকে চিকিৎসা নেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। পরে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন খালেদা জিয়া। ৬ মে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে সাদা রঙের গাড়িতে করে দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় তিনি বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে বাসায় রওনা হন। ১০ কিলোমিটার পথে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তার বাসায় পৌঁছাতে লেগে যায় ২ ঘণ্টারও বেশি সময়।
বিএনপি নেত্রী সাধারণত গাড়ির সামনে না বসলেও এদিন তিনি সামনের আসনে বসেন। পেছনের আসনে বসেন তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ছিলেন সেখানে।
খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে ‘ফিরোজা’ আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত করার কথা বিএনপির তরফে জানানো হয়েছিল। এর আগে ৬ মে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাকে বহনকারী গাড়ি খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, নৌসদর দপ্তর হয়ে ফিরোজায় পৌঁছায়।
এ সময় সড়কের পাশে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। বিএনপি নেত্রী গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘খালেদা, জিয়া’, ‘তারেক, রহমান’, ‘খালেদা জিয়া ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। ফিরোজায় ও তার সামনের সড়কে সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়।
এর আগে বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।
গত জানুয়ারিতে যেভাবে লন্ডনে গিয়েছিলেন, সেভাবেই কাতারের আমীরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে খালেদা জিয়া দেশে এলেন। তার সঙ্গে এসেছেন দুই পুত্রবধূ তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শার্মিলা রহমান সিঁথি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও এসেছেন তার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ ১৪ জন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
খালেদা জিয়া দেশে ফিরতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৫ মে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে কাতারের আমীরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রওনা হন। সেখানে ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমান আবেগঘন পরিবেশে তাকে বিদায় জানান।
২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে দেশ ছাড়ার পর থেকে লন্ডনেই আছেন তারেক রহমান। তার সঙ্গে যান স্ত্রী জোবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরলেন জোবাইদা; তবে তারেক কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত করেনি বিএনপি। লন্ডন থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ছেলেকে দেখিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত বিএনপিকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ভাইয়াকে দেখে রেখো।’ বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আপাতত বিশ্রামে থাকছেন খালেদা জিয়া।