ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল যমুনা চরের নতুন বাহন
১ মে ২০২৫ ২২:৫৬
এম.এ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : শাহজাদপুর উপজেলার যমুনার দুর্গম চরে বালুকাময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে একসময় বাহন হিসেবে চলতো ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি। তবে গত কয়েক বছর ধরে চরের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। এতে করে গুদারা ঘাট থেকে মানুষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে পারছে দুর্গম গ্রামগুলোয়। শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী, গালা, কৈজুরী ইউনিয়নের যমুনা চরের ২০টি গ্রামে যাতায়াতের জন্য অন্তত অর্ধশত যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এসব চরের গ্রামগুলোয় প্রথমে প্রমত্ত যমুনা পাড়ি দিতে হয়, তারপর মাইলের পরম মাইল পায়ে হেঁটে দূরের গ্রামগুলোয় যেতে হয়। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদী শুকিয়ে ছোট হয়ে নৌপথ কমেছে। বেড়েছে পায়ে হাঁটার পথ। এ চরের বালু, কাদা আর হাঁটুপানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাড়ায়চালিত এসব মোটরসাইকেল। হাঁটুসই বালুর ভেতর দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে চলা মোটরসাইকেল চরযাত্রা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। গ্রামের দূরত্ব বুঝে কোথায় ৫০ কোথায় ১০০ কোথায় ২০০ টাকা জনপ্রতি নিলেও যেন আপত্তি নেই যাত্রীদের। চরের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও তারা এমন সংকীর্ণ, দুর্গম পথের দক্ষ চালক। এক দুই ঘণ্টার পায়ে হাঁটা রাস্তা যেন ২০ মিনিটের মধ্যেই যাত্রীকে পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে।
স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল আমাদের চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে। ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল থাকায় চরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত অনেক সুবিধা হয়ছে।
ভাটদিঘুলিয়ার যুবক শামসাদ আলী জানান, মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তার। নদীপাড় থেকে গ্রামের দূরত্ব অনুযায়ী একজন আরোহী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দেন। যারা গ্রামে নিয়মিত আসেন তারা ফোন নম্বর রাখেন। ফোন করলেই নদীপাড়ে ছুটে যাই এবং আরোহীকে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেই।
ছোটচামতাঁরা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেও এসব চরে ৫-৬টি মোটরসাইকেল ছিল। এখন প্রায় বিভিন্ন রুটে শতাধিক মোটরসাইকেল ভাড়ায় চলছে। এ অঞ্চলে যমুনায় মাছ শিকার আর কৃষিকাজ ছাড়া তেমন কোনো কর্মসংস্থান নেই। ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সোনাতনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল যমুনা চরে যাতায়াতে নব দিগন্তের সূচনা করেছে। ফোন দিলেই চালকরা ছুটে আসেন বিভিন্ন গ্রাম কিংবা নদীঘাটে পৌঁছে দেন। ভাড়া বেশি হলেও সময় ও কষ্ট দুটিই সাশ্রয় হয়। তাই জনপ্রিয় হচ্ছে চরের গ্রামগুলোয় ভাড়ায়চালিত মোটরযান।