ছাত্রশিবির নেতা হত্যার অভিযোগে ওসি উত্তম কুমারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা


১ মে ২০২৫ ২২:৫৬

কুমিল্লা সংবাদদাতা: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনকে (২৫) কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। নিহতের পিতা জয়নাল আবেদিন পাটোয়ারী বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলা দায়রা জজ আদালতে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৫০ নামে মামলা দায়ের করে।
গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার নিহত সাহাব উদ্দিন প্রধান আইনজীবী এডভোকেট শাহজাহান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, মামলায় ১নং আসামি তৎকালীন চৌদ্দগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার চক্রবর্তী মামলার দুই নম্বর আসামি তৎকালীন ওসি তদন্ত আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, এস আই নুরুজ্জামান হাওলাদার, এসআই ইব্রাহিম, ডিবির এস আই শাহ কামাল ডিবির এসআই শহীদ, চৌদ্দগ্রাম থানার কনস্টেবল নূর হোসেন, মহসিন মিয়া, কনস্টেবল ডাইভার আবু নাসের, শশাঙ্ক চাকমা, তৎকালীন কুমিল্লা এস এস এফ শাখার শরিফুল ইসলাম, মোতাহার হোসেন, তৎকালীন চৌদ্দগ্রাম থানা আনসার সদস্য মুরাদ হোসেনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এ বিষয়ে নিহত সাহাবউদ্দিনের অন্যতম আইনজীবী পিপি এডভোকেট বদিউল আলম সুজন জানান, আমরা আদালতের কাছে এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকা-ের নির্দেশদাতা এবং তার সাথে আরো কারা জড়িত আছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনা উদ্ঘাটন করে আদালত ন্যায়বিচার করবে এটাই আমরা আশা করি। এ মামলায় এজহারে সাবেক রেলমন্ত্রী মজিবুল হক মজিব ও সাবেক পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী ইন্দন ছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মাইনুদ্দিন রনি বলেন, ফ্যাসিস্ট মুজিবুল হকের নির্দেশে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে, মহাসড়কের লালবাগ এলাকায় সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারীর মাথায় গুলি করে হত্যা করে। আমরা এ সরকারের নিকট অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।
এ বিষয় নিহতের বাবাব জয়নাল আবেদিন পাটোয়ারী বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তখন বিকাল ৫টা আসরের নামায শেষ করে বাহির হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাহাবুদ্দিন। এমন সময় হুড়মুড় করে লুঙ্গি ও প্যান্ট পরা সাদা পোশাকের ১০-১২ জন পুলিশ এসে হামলা করলো আমার ঘরে। প্রথমে তার বড় ছেলে। মাঈন উদ্দিনকে সাহাব উদ্দিন মনে করে আটক করে। কিন্তু ঘাতকের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার আগে এক পুলিশ সদস্য বলে এটা না মালটা (সাহাব উদ্দিন) ঘরেই আছে। মুহূর্তের মধ্যে ঘর থেকে তাকে তার মায়ের সামনে থেকে ধরে টানা হেচড়া শুরু করে দেয়। সাহাব উদ্দিন শুধু বলছিল ‘আমাকে একটু সুযোগ দেন আমি জুতাগুলো পড়ে নিই।’ আমার সাহাব উদ্দিনকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেল আমি কিছু করতে পারলাম না। সাহাব উদ্দিন ছিল নম্র ভদ্র। তার ব্যাপারে কেউ কোনো দিন অভিযোগ করেনি। ইসলামী আন্দোলন করাই ছিল তার অপরাধ। সে ছাত্র সমাজের মাঝে কুরআনের দাওয়াত দিত। সৎপথের আহ্বান করতো। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
বিভিন্ন সূত্র জানা যায়, সাহাব উদ্দিন ভাইকে গুলি করার আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শিবিরের সভাপতি এ অপরাধে আমাকে হত্যা করতে পারেন, কিন্তু গাড়ি পুড়িয়েছি এ অপবাদে আমাকে হত্যা করবেন না’। আরো একটি কথা জানতে পারি গুলি করার মুহূর্তে সে শুধু বলেছিল ‘আমাকে জোরে জোরে কালেমায় শাহাদাত পড়ার সুযোগ দেবেন’। প্রিয় ভাইটি কালেমায় শাহাদাত জোরে জোরে পড়তে পড়তে শাহাদাত বরণ করেন। উল্লেখ্য, নিহত সাহাবউদ্দিন বাংলাদেশ ইসলামিক ছাত্র শিবিরের ২১৮তম শহীদ।