স্বাধীনতার অগ্রদূত শহীদ সৈয়দ আহমদ বেরলভী


১ মে ২০২৫ ১৮:০১

॥ আশরাফ জামান ॥
স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত সৈয়দ আহমদ বেরলভী (রহ.) অযোধ্যার রায়বেরলী জেলায় ১৭৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম হাসান (রা.)-এর বংশধর। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মুহাম্মদ ইরফান।
রায়বেরিলী জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে সৈয়দ আহমদ লক্ষেèৗ গমন করেন। বাল্যকাল থেক্ েসৈনিকসুলভ কুচকাওয়াজ ও খেলাধুলার প্রতি তার ছিল তীব্র আকর্ষণ। অতঃপর ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের জন্য দিল্লি গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে শাহ আবদুল আজিমের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেন।
শিক্ষা সমাপ্ত করে সৈয়দ আহমদ জিহাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৮১০ সালে রাজপুতনায় যান এবং আমীর খানের সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন। মুসলমানদের অজ্ঞানতা, কুসংস্কার এবং রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার জন্য তিনি চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবাদের মহান আদর্শ ও চরিত্রকে সামনে নিয়ে তিনি চরিত্র সংশোধনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং সেই আদর্শে শিষ্যবর্গকে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। শিগগিরই তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে মুসলমানগণ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার বিশ^স্ত সহচরদের মধ্যে শাহ মুহাম্মদ ইসমাঈল, মৌলভী আবদুল হাই ও মৌলভী মুহাম্মদ ইউসুফ উল্লেখযোগ্য।
১৮২১ সালে সৈয়দ আহমদ কলকাতায় আসেন এবং সেখান থেকে হজযাত্রা করেন। এরপর কিছু সময় আরবে কাটানোর পর ১৮২৪ সালে দেশে ফিরে ধর্মযুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। শিষ্যদের তিনি যুদ্ধের অনুপ্রেরণা প্রদান করেন। ইসলামী শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অস্ত্র চালনার ট্রেনিং দান করতে থাকেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ বাহিনী দেশ থেকে বিতাড়িত করে পুনরায় দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। ভারতে মুসলিম শাসনের মাধ্যমে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা।
পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায় ছিল মুসলমানদের জাত শত্রু এবং ব্রিটিশ বাহিনীর দালাল। কাজেই শিখদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। কাবুল ও কান্দাহারের মুসলিম শাসকদের সহযোগিতায় তার বিরাট মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে পেশোয়ার প্রবেশ করেন এবং আকোডা, খটকে শিখ বাহিনীকে পরাজিত করেন। ১৮৩০ সালে তিনি পেশোয়ার দখল করতে সমর্থ হন। এ সাফল্য লাভের পরই তিনি নিজের জন্য খলিফা উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজ নামে মুদ্রা অংকিত করে তা চালু করার চেষ্টা করেন।
দূররানী ভাইয়েরা ও স্থানীয় খানদের বিশ^াসঘাতকতায় নিরুৎসাহিত হয়ে সৈয়দ আহমদ কাশ্মীরের দিকে রওনা হন। কাশ্মীর যাত্রার প্রাক্কালে শিখ বাহিনী তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়।
কাশ্মীরে ১৮৩১ সালে শিখ বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত মর্দে মুজাহিদ সৈয়দ আহমদ বেরলভী বালাকোট প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন। তার সঙ্গে শাহ মুহাম্মদ ইসমাঈলও শহীদ হন।
সৈয়দ আহমদের শিষ্যদের প্রধান কাজ ছিল ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সকল ব্যাপারে অসহযোগিতা। তারা ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি করাকে ঘৃণা করতেন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।