নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসে হাসিনা চক্র
১ মে ২০২৫ ১৭:৩৪
॥ সরদার আবদুর রহমান ॥
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অর্ধশতাব্দীকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পরও একটি সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য স্থিতিশীল নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারলো না। স্বাধীনতার পর প্রথম যে নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়, সেটিও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। পরবর্তী কয়েকটি নির্বাচন অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হলেও হাসিনা-এরশাদ চক্র তা একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। অতঃপর ২০২৪-এর ৫ আগস্টের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে নতুন করে জাতির সামনে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে যে, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা অন্ধকারের সুড়ঙ্গ থেকে আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে ফিরে আসতে পারবে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ হচ্ছে নির্বাচন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়। গ্রহণযোগ্য না হলে সেই ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই নির্বাচন শুধু আইনি বা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়, এর সঙ্গে ক্ষমতার বৈধতা, গণতন্ত্র, রাজনৈতিক বন্দোবস্তÑ এ সবকিছুই জড়িত। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে সাতবার সামরিক শাসনসহ দলীয় সরকার ও চারবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পরিষদ তথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। ওই নির্বাচনেও যথারীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয় লাভ করে। তবে ওই নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসনে কারচুপি, দখল, বিরোধী প্রার্থীকে জোরপূর্বক পরাজিত করা প্রভৃতি অভিযোগ ওঠে সরকারি দলের বিরুদ্ধে। ইতিহাসে সেই কর্মকা-গুলো ছিল নির্বাচনব্যবস্থাকে কালিমালিপ্ত ও কলঙ্কযুক্ত করার সূচনা, যা পরবর্তীকালের নির্বাচনসমূহেও নানাভাবে ও নানামাত্রায় প্রভাব সৃষ্টি করে। যার পরিণতি জাতি আজো বহন করে চলেছে বলে মনে করা হয়।
১৯৭৩-এর পর ১৯৭৫-এ পটপরিবর্তন ঘটে। সামরিক বাহিনীর একটি অংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। ফলে ক্ষমতার স্বাভাবিক পালাবদলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। পরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। শুরু হয় ভালো-মন্দ মিশিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ অভিযাত্রা ব্যাহত হলেও তার গতি সচল থাকে। কিন্তু আবারও ঘটে ছন্দপতন। ১৯৮২ সালের মার্চে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এইচএম এরশাদ।
এরশাদীয় স্টাইল
জেনারেল এরশাদ তাঁর সামরিক ক্ষমতাকে বেসরকারীকরণ করতে গিয়ে তার ৯ বছরের শাসনকালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। এর মধ্যে বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনগুলো ছিল ‘পোকায় খাওয়া’। এরশাদের বিখ্যাত উক্তি ‘১০টা হোন্ডা ২০টা গু-া ইলেকশন ঠা-া’Ñ এ পদ্ধতিতে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক গতি অর্জন ছিল সুদূর পরাহত। তবে দেশের প্রথম সারির অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে অবশেষে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা পুনরায় গতি লাভ করে। এসময়ের মধ্যে একাধিক উপনির্বাচনে ‘কারচুপি’র অভিযোগ তুলে বিরোধীদল দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে ১৯৯৬ সালে একটি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনে গঠিত ষষ্ঠ সংসদে এ দাবি পূরণ করা হয় এবং তা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন মোটামুটি নিরপেক্ষতার লক্ষ্য অর্জন করে। কিন্তু নবম নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন বিএনপির কথিত পছন্দের ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনে নিয়োগদানের অভিযোগ তুলে বিরোধী আওয়ামী লীগ জোট ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এর প্রেক্ষিতে দেশে বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ ও সেনাপ্রধান জেনারেল মইনউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা ‘জরুরি সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সরকার তিন মাসের জায়গায় দুই বছর ক্ষমতায় আসীন থাকে। অতঃপর ‘বিদেশি’ সরকারের প্রদত্ত ফরমূলায় ‘জরুরি সরকার’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতা ত্যাগে রাজি হয়। এক সুগভীর পরিকল্পনাধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগের জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়।
হাসিনা স্টাইল
আওয়ামী লীগ শাসনক্ষমতায় বসে তাদের পরিকল্পনামাফিক সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। এজন্য উচ্চ আদালতের একটি রায় এবং সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করা হয়। এজন্য জনমত যাচাইয়েরও কোনো প্রয়োজন মনে করা হয়নি। সংবিধানে এমন ব্যবস্থা যুক্ত করা হয় যাতে দলীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ এবং বিদ্যমান জাতীয় সংসদের সদস্যদের পদ বহাল রেখে তাদের অধীনস্থ প্রশাসনযন্ত্রের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়। এ ব্যবস্থার অধীনেই ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করলে এর প্রতিবাদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করে এবং ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু সরকার যথারীতি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমর্থ হয়। এতে ১৫৩ জন সদস্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে এক নয়া রেকর্ড তৈরি করে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিজেই সরকারি দল এবং তাদের জোটের শরিক জাতীয় পার্টি বিরোধীদলের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এ অভূতপূর্ব ব্যবস্থায় জাতীয় পার্টি আবার মন্ত্রিত্বও গ্রহণ করে। এনিয়ে রাজনীতিতে হাস্যরসের সৃষ্টি হলেও তাকে পাত্তা না দিয়ে এ সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করে। অতঃপর তারা ২০১৮ সালে একই কায়দায় নির্বাচনের আয়োজন করলে একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এক বহুল বিতর্কিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট পুনরায় নিজেদের বিজয় দেখায়। দেশে-বিদেশে অভিযোগ ওঠে যে, নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগের রাতেই বিশেষ ব্যবস্থায় বিশেষ প্রতীকের পাশে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয় এবং দিনের বেলায় নির্বাচনের মহড়া দেয়া হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে। এ নির্বাচনের পর সংসদের ভেতরে-বাইরে সর্বক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রায় একক ‘আধিপত্য’ কায়েম হয়েছে। এর ফলে রাজনীতিতে বিরোধীদল ও মতের স্থান কমে গেছে এবং গণতান্ত্রিক পরিসর আরও সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই বিশেষ অভিধায় পরিচিত হয়েছে। তেমনি ২০২৪-এর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘ডামি প্রার্থী’র নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়, “বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় কেউ নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নির্বাচনে দলীয় বিকল্প (ডামি) প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।
এভাবে দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনসমূহ অনেকটাই বিতর্কমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারলেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বিতর্ক শুধু নয়Ñ একেবারে নিন্দনীয় পর্যায়ে চলে যায়। আন্তর্জাতিকভাবেও সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্য নির্বাচনগুলোও ব্যাপকভাবে কলুষিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে যেকোনো নির্বাচন বা ভোটের অর্থ দাঁড়ায় একতরফাভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিজয় নিশ্চিত হওয়া। নির্বাচনগুলোয় ভোটারদের উপস্থিতি হতাশাজনক হয়ে পড়ে। ‘ভোট দিতে গিয়ে কী লাভ, দিলেও পাস না দিলেও পাস’Ñ এমন প্রবাদ-প্রবচন জনসাধারণের মধ্যে স্থায়ী হতে থাকে। এভাবে সর্বজনীন ভোটব্যবস্থা বলতে গেলে ধ্বংসের মুখে পড়ে যায়। আর এতে গণতন্ত্রের সমাধিসৌধ রচিত হতে থাকে।
এ নির্বাচনের ফলাফল, বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট প্রদানের হার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের ব্যবধান নিয়ে নানারকম প্রশ্ন তৈরি হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের পরিস্থিতি ও ফলাফল যে স্বাভাবিক ছিল না, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচননামা বইয়ে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, জনগণের কাছে এ নির্বাচন ‘রাতের নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছে। এ নির্বাচন নিয়ে ভোটিং ইন অ্যা হাইব্রিড রেজিম: এক্সপ্লেইনিং দ্য ২০১৮ বাংলাদেশি ইলেকশন বইয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ, বেসামরিক প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে এবং তারা একে অপরের সহযোগী ছিল। বিরোধীদলের কর্মী ও প্রার্থীদের গ্রেফতার, পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধীদের ওপর সরকারি দলের কর্মীদের হামলা এবং প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতিÑ এরকম কৌশলগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।
বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধীদল অংশ নেওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ বলা যেতে পারে। কিন্তু এতে বিরোধীদের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ও ভোটের হার ছিল আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা প্রায় ‘একচেটিয়াভাবে’ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে। ফলাফল বিবেচনা করলে এটিও একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও একতরফা নির্বাচন।
এইচটি ইমামের ফর্মুলা
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বহুল আলোচিত এ ফর্মুলায় ‘রিক্রুটেডদের দিয়ে মোবাইলকোর্ট করিয়ে নির্বাচন’ করার কথা বলেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংক্রান্ত কূটকৌশল নির্ধারক এইচ টি ইমাম। গত ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের ‘ভেতরের কথা’ প্রকাশ করে দেন তিনি। তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ওপর নিজেদের দলীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করার কথাও প্রকাশ করেন। বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন সম্পর্কে বিরোধীদলীয় অভিযোগকে সরকারি মহল উড়িয়ে দিয়ে এলেও উপদেষ্টা ইমামের বক্তব্যে তা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশের, প্রশাসনের যে ভূমিকা; নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি। সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইলকোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারা বুক পেতে দিয়েছে। আমাদের যে ১৯ জন পুলিশ ভাই প্রাণ দিয়েছে, তোমাদের মনে আছে এরা কারা? সব আমাদের মানুষ।”
এভাবে দেখা যায়, দেশের সার্বিক নির্বাচন ও ভোটব্যবস্থাকে বলতে গেলে ধ্বংস করে ফেলা হয়। একনজরে ধ্বংস-প্রক্রিয়ার পেছনে যেসব প্রক্রিয়া-অপকৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ১. বিরোধীদের প্রচার-প্রচারণায় অব্যাহত বাধা প্রদান, ২. হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক বজায় রাখা, ৩. পাড়া-মহল্লায় গিয়ে বিরোধী ভোটারদের হুমকি দেয়া, ৪. আগের রাতেই দলীয় প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, ৫. কেন্দ্র দখল করে প্রতিপক্ষকে ভিড়তে না দেয়া, ৬. আইনপ্রয়োগকারীদের নগ্নভাবে দলের পক্ষে ব্যবহার, ৭. নির্বাচন কমিশনকে কেবল হুকুমের দাস করে রাখা, ৮. বিরোধী নির্বাচনী এজেন্টদের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করা, ৯. সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া, ১০. অনিয়ম-অভিযোগ আদৌ আমলে না নেয়া, ১১. নির্বাচনী কর্মকর্তা ও কর্মীদের সর্বদা ভীতি ও চাপে রাখা, ১২. ব্যালট ছিনতাই করে গণহারে সিল মারা, ১৩. সাধারণ ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেয়া, ১৪. ভোটের অংকে ইচ্ছেমতো হেরফের ঘটানো প্রভৃতি।