১ মে ২০২৫ ১৭:৩২

॥ গাজী মুহাম্মদ শওকত আলী ॥
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এ ধরনের প্রস্তাব নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের নাস্তিকতা অথবা মূর্খতার পরিচয় বহন করে। ছোটবেলা থেকেই একটি কথার সাথে পরিচিত ছিলাম আর তা হলো, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি যত বড় ডিগ্রিধারী হও না কেন, কুরআন না জানলে তুমি মূর্খ।’ ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর কথার বাস্তবতা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে মিল পাওয়া গেছে। আসলে মহান আল্লাহ আল কুরআনের সূরা বাকারার ৭৮ নম্বর আয়াতে এ কথাই বলেছেন। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের মূর্খতারই পরিচয় দিয়েছে। মূর্খতার কারণে তারা নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী। নাস্তিকতাপূর্ণ ও মূর্খ কমিশনকে অবিলম্বে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আর নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে বাতিল করতে হবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এহেন প্রস্তাব উসকানিমূলক, যা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের সুপারিশ প্রস্তাব যৌক্তিক কারণেই প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ।
মহান আল্লাহ সূরা আ’রাফের ৫৪ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন, ‘সৃষ্টি যার, আইন চলবে তাঁর’। আমরা এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই ভালো জানেন কীসে তাঁর সৃষ্টির কল্যাণ আর কীসে অকল্যাণ। যেমনÑ কোনো ব্যক্তি কোনো বস্তু প্রস্তুত বা তৈরি করলে সে ব্যক্তি তার তৈরি বস্তুর ব্যবহার বিধি ব্যবহারকারীদের জন্য লিখে দেয়, যাতে সে বস্তুর সঠিক ব্যবহার করা যায়। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহও আল কুরআনে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ কী করবে আর কী করবে না, কী পড়বে আর কী পড়বে না। সূরা আল মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে ইসলামকে নিয়ামত ও আল্লাহর মনোনীত পরিপূর্ণ দীন বা জীবনবিধান বা জীবনব্যবস্থা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে মানুষ আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান মেনে চলবেÑ এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহর কোনো আইন, আদেশ বা বিধিবিধানকে যে অস্বীকার করবে, সে কখনো মুসলমান থাকতে পারে না। কুরআনের কোনো আইন বা বিধিবিধানকে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে কুফরি করা। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কুফরি, নাস্তিক্যবাদী, আর ইসলামবিদ্বেষী মূর্খদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নেয়া যায় না বা মেনে নেয়া হবে না।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী অধিকার রক্ষায় বিশদ সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গত ১৯ এপ্রিল শনিবার প্রতিবেদনে যে সকল সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে (১) নারীদের সম-অধিকার চাওয়া হয়েছে! (২) বিয়ে-তালাক ও উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের সুপারিশ করা হয়েছে। (৩) বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ফৌজদারি আইনে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। (৪) নারী বিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকার দাবি করা হয়েছে। (৫) শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের শ্রমঅধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে। (৬) সকল প্রতিষ্ঠানে মাতৃকালীন ৬ মাসের ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে। (৭) নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩০০ আসন চাওয়া হয়েছে!
নারী-পুরুষ সমঅধিকার অবান্তর
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে নারীদের সমঅধিকার চাওয়া হয়েছে। এটা কি করে সম্ভব হতে পারে? মহান আল্লাহ নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন ধাতু প্রকৃতি দিয়ে। নারী হচ্ছে মা-এর জাতি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটে। এতে স¦ামীর শুক্রাণু স্ত্রীর ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে স্ত্রীর গর্ভে সন্তানের জন্ম হয়। যে নারী দশ মাস দশ দিন তার স্বামীর শুক্রাণু তার গর্ভে ধারণ করার পর সন্তান জন্মদান করে তাকে জননী বলে। সমঅধিকারের প্রশ্নে স্ত্রী কি তার স্বামীকে বলবে তোমার শুক্রাণু আমি পাঁচ মাস পাঁচ দিন আমার গর্ভে ধারণ করেছি আর তুমি বাকি পাঁচ মাস পাঁচ দিন আমার ডিম্বাণু তোমার গর্ভে ধারণ করো! এটা কি সম্ভব হবে? তা না হলে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকার কীভাবে সম্ভব!
নারী-পুরুষের অধিকার সম্পর্কে সূরা আন নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ তাদের এক-কে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এজন্য যে, পুরুষ তাদের ধন সম্পদ (স্ত্রী-সন্তানের জন্য) ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ যাহা সংরক্ষিত করিয়াছেন, তাহা হিফাজত করে।’
পুরুষরা নারীর ওপর কর্তৃত্বশীল এ কারণে যে, বিয়ের সময় পুরুষ নারীকে দেনমোহর দেয় ও নারীকে সম্মানজনক ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় ও সংসার পরিচালনার জন্য অর্থের জোগান দেয় বা অর্থ উপার্জন ও ব্যয় করে। অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব পুরুষের, নারীর নয়। মহান আল্লাহ নারী-পুরুষ জোড়া জোড়া সৃষ্টি করে, সন্তান উৎপাদনের জন্য। নারীর দায়িত্ব হচ্ছে স¦ামীর সেবা-যতœ করা, ঘর-সংসার ঠিক রাখা আর সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করা। এ পর্যন্তই নারী-পুরুষের ন্যায্য অধিকার। এর বেশি কিছু চাওয়া ন্যায্যতার খেলাপ বা অনধিকার চর্চা। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা নারী-পুরুষ সকলের ওপর ফরজ। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত উত্তম মা হলে উত্তম সন্তান হবে, আর উত্তম সন্তান হলে, উত্তম একটি জাতি গঠিত হবে।
বিয়ে-তালাক ও উত্তরাধিকার প্রস্তাব কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, বিয়ে-তালাক ও উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের সুপারিশ করেছে! বিয়ে ও তালাকের ব্যাপারে ইসলামী শরিয়তে সুস্পষ্ট বিধান আছে। বিয়ে-তালাকের সমঅধিকারের সুপারিশ এটা সুস্পষ্ট কুরআন-সুন্নাহর খেলাপ, ইসলামবিদ্বেষী ও নাস্তিকতাপূর্ণ ধর্মীয় উত্তেজনাকর সুপারিশ। এ সুপারিশ আমলে নিলে বিয়ে প্রথা ভেঙে যাবে, সমকামিতার বিকাশ ঘটবে। বিয়েতে পুরুষ নারীকে দেনমোহর দিতে বাধ্য। বিয়েতে নারী আর্থিকভাবে লাভবান হয় আর পুষুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে সমতা কী হবে? আমাদের দেশে এমনিতেই পরকিয়ার বলি হাজার হাজার পরিবার। তালাকে সমঅধিকাররের অর্থ হচ্ছে পরকীয়াকে বেশি বেশি উৎসাহী করা। এতে করে আমাদের দেশে পরিবারের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে; বিশেষ করে আমাদের দেশের রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
উত্তরাধিকারে সমান অধিকারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সূরা আন নিসার ৭, ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। ৭ নম্বর আয়াতে উত্তরাধিকারের অংশ নির্ধারিত করা হয়েছে। আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন তা পরিবর্তন যোগ্য নয়। ১১ নম্বর আয়াতে উত্তরাধিকারীরা কে কত অংশ পাবে, তা বণ্টন করা হয়েছে। ১২ নম্বর আয়াতে পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজনের ও এতিমের অংশের কথাও বলা হয়েছে, যা অকাট্য। আল্লাহর এমন আইন বা বিধান যারা মানে না তারা নাস্তিক, মূর্খ, ইসলামবিদ্বেষী ও মানবতার শত্রু।
সমঅধিকারের প্রশ্ন অমূলক। নারীরা বিয়েতে দেনমোহর পায়। অন্ন, বস্ত্র, বাসন্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পায়। পিতা-মাতার সম্পত্তির অংশ পায়। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির অংশ পায়। মায়ের আগে সন্তান মারা গেলে তার সম্পত্তির অংশ পায়। বোনের আগে ভাই মারা গেলে তার সম্পত্তির অংশ পায়। এভাবে আল্লাহর বিধান মতে, একজন নারী যা পায়, তা একজন পুরুষের চাইতে বেশি হয়। তারপরও উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমঅধিকার চাওয়া এটা ইসলামবিদ্বেষী, নাস্তিকতা ও মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বৈবাহিক সম্পর্কে জোরপূর্বক যৌনতাকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য করা শরিয়াবিরোধী
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ফৌজদারি আইনে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। এহেন সুপারিশ বৈবাহিক সম্পর্ক বা বিয়ে প্রথাকে ধ্বংস করা আর যৌনতা ও সমকামিতাকে উৎসাহিত করার নামান্তর। ইসলামবিদ্বেষী, নাস্তিক ও মূর্খ নারীবাদীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বিভ্রান্ত করার জন্য দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন সব সুপারিশ করছে। তারা শয়তান ও ফ্যাসিস্টদের দোষর আর ভারতের খুনি মুদির দালাল। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এমন সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাখ্যাত।
নারীরা পর্দা লঙ্ঘনের কারণেই আলেম সমাজ যে বয়ান দেয় তা নারীবিদ্বেষী নয়
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকার দাবি করেছে! নারীবিদ্বেষী বয়ান বলতে তারা কী বুঝাতে চেয়েছে, জানি না। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে যারা আছেন, তারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দেয়া পর্দার বিধান মানছেন না। আলেমদের দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সকল আয়াত বা ওহি নাজিল করা হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ দায়িত্ব পালন না করলে আলেমদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন আর অন্য লানতকারীরাও লানত বর্ষণ করেন। যার উল্লেখ আছে সূরা আল বাকারার ১৫৯ নম্বর আয়াতে। অতএব আলেমগণ যারা কুরআন জানেন, তারা বাধ্য হয়েই পর্দার ব্যাপারে বয়ান করেন, যা বেপর্দা নারীদের বিপক্ষে যায়। সূরা আন নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নির্দেশ করছেন, “নারীরা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ পায় (মুখম-ল ও পায়ের পাতা) তা ব্যতীত তাদের আবরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ^শুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌনকামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট তাদের আবরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে, হে মোমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” সূরা আল আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতেও পর্দা তথা হিজাবের নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা আল আহযাবের ৩৩নং আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন, ‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলী যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না, তোমরা সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রধান করবে আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে।’ আল্লাহর এই নির্দেশ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার বয়ান ও বক্তব্য তো আলেম সমাজ করতে বাধ্য, অন্যথায় লানতপ্রাপ্ত হয়ে তাদের জাহান্নামে যেতে হবে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন দাবি করেছে, ছবি পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকতে। সম্ভবত এটা নারীর ছবি হবে। যদি তাই হয়, আমার প্রশ্ন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, বিলবোর্ডে, বিজ্ঞাপনে, নারীদের যে সকল অর্ধালঙ্গ বা অশ্লীল ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছেÑ এটা কে বা কারা করছে? কেন করছে? এর পেছনে কি অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে? খুঁজে দেখুন সমাধান পেয়ে যাবেন। এ দাবি কমিশন কার কাছে করছে। নারীদের ছবি প্রদর্শন করা ইসলামী শরিয়তে বৈধ নয়। নারীবাদীরা অজ্ঞতার কারণে যারা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন, নাস্তিকতা ও মূর্খতার প্রকাশ ঘটান তাদের আল কুরআন থেকে শিক্ষা নেয়ার বিনীত অনুরোধ করছি।
যৌন কর্মীদের স্বীকৃতি ও শ্রম অধিকার শরিয়ার বিধানকে অস্বীকার করার শামিল
৫. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের শ্রমঅধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে! এ ধরনের ধিকৃত কাজকে যারা পেশা হিসেবে শ্রমঅধিকার ও মর্যাদা দেয়ার দাবি করেছে, তারা মুসলিম সমাজের ধিকৃত, নিন্দিত মানুষ নামের কলঙ্ক ও সৃষ্টির অধম জন্তু-জানোয়ারের চাইতেও নিকৃষ্ট। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যারা গঠন করেছেন, তাদের ব্যাপারেও প্রশ্নের অবকাশ আছে। মানুষের কল্যাণে সংস্কারের উদ্দেশ্যে যারা কমিশন গঠন করেছেন, যাদের দিয়ে কমিশন গঠন করেছেন তারা কি মানুষ! তাদের মধ্যে কি মানবতা বা মনুষ্যত্ববোধ আছে? নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্কের ফলে যৌনকর্মকে জেনা বা ব্যভিচার বলে। সূরা আন নূরের ২ নম্বর আয়াতে জেনা বা ব্যভিচার সম্পর্কে আল্লাহ নির্দেশ করছেন, “ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর, আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ^াসী হয়ে থাক, মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন নির্দেশ থাকার পরও যারা জেনা-ব্যভিচারকে বা অবৈধ যৌনতাকে শ্রমঅধিকার ও মর্যাদা দেয়ার দাবি করেছে, তারা মুসলমানদের ঈমান আকিদা নিয়ে ধিকৃত নেশায় মেতে উঠেছে। তাদের এখনই প্রতিহত করতে হবে। সুদ, ঘুষ, যৌনতা ও অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ জাহান্নামের খোরাক হবে। অতএব এসকল পন্থায় অর্থ উপার্জনের পথ চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
৬. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সকল প্রতিষ্ঠানে মাতৃকালীন ৬ মাসের ছুটির প্রস্তাব করা হয়েছে! নারীদের অর্থ উপার্জনের জরুরি কোনো প্রয়োজন না থাকলে এ পথ পরিহার করা উত্তম। অগত্যা যদি করতেই হয়, মাতৃকালীন ৬ মাসের ছুটির ব্যাপারে নিয়োগকর্তা তা বিবেচনা করতেই পারে।
সংবিধান সংস্কারে ৬০০ আসন আর নারীদের জন্য ৩০০ আসন সংরক্ষিত দাবি করা অনৈতিক
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩০০ আসন চাওয়া হয়েছে! নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে নারী-পুরুষের সমান অধিকার চাওয়া হয়েছে! আবার সংবিধান সংস্কার করে ৩০০ আসনের জায়গায় ৬০০ আসন করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সাথে ৬০০ আসনের মধ্যে নারীদের জন্য ৩০০ আসন সংরক্ষিত করার দাবি করা হয়েছে। আবার আরপিওতে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন দেয়ার আইন করা হয়েছে। এটা কেমন সমঅধিকার? যারা এ দাবি বা সুপারিশ করছেন, তারা কি সুস্থ আছেন? আমার মনে হয় তাদেরকে মানসিক চিকিৎসক দেখানো দরকার। সূরা আন নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতের ভাষ্যানুযায়ী নারী নেতৃত্ব ইসলামী শরিয়তে বৈধ নয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে জাতি কোনো নারীর হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়, সে জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। বর্তমান পুরুষশাসিত সমাজে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের আমলের সাড়ে আট মাসে দেশের বৈদেশিক ঋণ কমেছে, রিজার্ভ বেড়েছে, বিদ্যুতের লোডশেডিং কমেছে, দ্রব্যমূল্য অনেক কমেছে, বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে, চাঁদাবাজি ছাড়া মানুষ যথেষ্ট স্বস্তিতে আছে।
মহান আল্লাহ সূরা আল মায়েদার ৬৬ আয়াতে ঘোষণা করছেন, “আর তারা যদি তাওরাত, ইঞ্জিল ও তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি যা (কুরআন) নাজিল করেছি তা প্রতিষ্ঠিত করত, তা হলে তারা তাদের ওপর (আসমান) থেকে ও নিচ থেকে রিজিক লাভ করতো, তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যপন্থী, কিন্তু তাদের অধিকাংশই যা করে তা নিকৃষ্ঠ।” সূরা আ’রাফের ৯৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, “আর যদি সে জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং আল্লাহকে ভয় করে চলত, তাহলে আমি (আল্লাহ) তাদের প্রতি আসমান ও জমিনের নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।”
আমাদের করণীয়
অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া বিধান মেনে দেশ পরিচালনা করলে আমরা আরো উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো, ইনশাআল্লাহ। ধর্মীয় বিধি-বিধান বা কুরআন-সুন্নাহর আইনকানুন মেনে চলাই হচ্ছে ঈমানের দাবি। যারা ধর্মীয় বিধিবিধান মানতে রাজি নন, তারা মুসলমান থাকতে পারে না। ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইন এটাও যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ¯্রষ্টাই ভালো জানেন, তাঁর সৃষ্টির প্রতি ন্যায়-ইনসাফ ও সমতার বিধান। ইসলামী উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে কেউ বৈষম্যমূলক বললে বা মনে করলে সঙ্গত করণেই ধরে নেয়া হবে সে নাস্তিক বা মূর্খ। সে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে মানে না বা আল্লাহর এসকল আইন বা বিধিবিধানকে সে চ্যালেঞ্জ করছে (নাউজুবিল্লাহ)। নারীবাদী নাস্তিক মূর্খরা মুসলিম সমাজকে অস্থিতিশীল করে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে চাচ্ছে। নারীবাদীরা ভারতের বা হিন্দুত্ববাদী খুনি মোদির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সম্পর্কের যৌন কর্মকে ফৌজদারি অপরাধ বলে সমকামিতাকে আহ্বান করছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সবিনয় নিবেদন করছি, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে নাস্তিক, মূর্খ, ভারতের দালাল নারীবাদীদের প্রশ্রয় দেবেন না। আপনি মুসলমানের সন্তান, আপনি আলেদের পছন্দ করেন। মহান আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি নারী-পুরুষের অধিকার সম্পর্কে আল কুরআনে বিস্তারিত বলেছেন। ন্যায়, ইনসাফ ও সাম্যের সমাজ গড়তে হলে আমাদের দেশে অনেক বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ আলেম-ওলামা আছেন তাদের পরামর্শ নিন। বিশে^র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক বা শাসক হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)কে এখনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় রেখেছে। আপনি দেশ পরিচালনায় এনজিওদের টানবে না। নাস্তিকদের বর্জন করুন আর আস্তিক আলেম-ওলামাদের পরামর্শ নিন।
জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার যুবসমাজের প্রাণের বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ জনপরিসরে প্রকাশিত না হলেও, গণমাধ্যমে বেশকিছু সুপারিশ উঠে এসেছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো এ সংস্কার প্রস্তাবে অধিকাংশ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের মোটেও তোয়াক্কা করা হয়নি। সংখাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধিতার নাম সংস্কার নয়। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের একাধিক ধারার পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে। সেখানে প্রায় সকল জায়গায় ‘নারী-পুরুষ’ শব্দের পরিবর্তে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ শব্দ ভুক্তির প্রস্তাব করেছে, যা সমকামী, উভয়কামী, ট্রান্সজেন্ডার তথা এলজিবিটিকিউ+ মতবাদকে অন্তর্ভুক্তির দুরভিসন্ধি বলে মনে হয়।
নীতি-আদর্শবিবর্জিত সমাজ বিধ্বংসি এসব প্রস্তাব নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে এ বিতর্কিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বিলুপ্ত ও এর সংস্কার প্রতিবেদন প্রত্যাহার করা হোক। পাশাপাশি সমাজের ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, নারী-পুরুষের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী দাবি করেন, রাষ্ট্র এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ।