গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন সমাচার


২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:১৬

॥ আলী আহমাদ মাবরুর॥ 
প্যালেস্টাইন অথরিটি বা পিএ গঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৩-১৯৯৫ সালের অসলো চুক্তির পর এর কাঠামো দৃশ্যমান হয়। বর্তমানে প্যালেস্টাইন অথরিটি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এ সংস্থাটি মূলত পাঁচ বছরের জন্য সাময়িক প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে আনুষ্ঠানিক একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত পশ্চিমতীর, জেরুসালেম ও গাজার ফিলিস্তিনিদের শাসন করা যায়। অসলো চুক্তিতে পশ্চিমতীরকে তিনটি এলাকায় ভাগ করা হয়, যার কিছু অংশ প্যালেস্টাইন অথরিটির নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়। এগুলো হলো।
এরিয়া এ : মোট ভূমির ২১ শতাংশ, যা সম্পূর্ণভাবে প্যালেস্টাইন অথরিটির প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণাধীন। এর মধ্যে রামাল্লাহ, নাবলুস ও জেনিন শহর অন্তর্ভুক্ত। এ এলাকা ও এরিয়া বি মিলিয়ে ৩.১ মিলিয়ন ফিলিস্তিনির বসবাস রয়েছে।
এরিয়া বি: ভূমির ১৮ শতাংশ, যেখানে প্রশাসনিকভাবে প্যালেস্টাইন অথরিটি নিয়ন্ত্রণ করে, তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ইসরাইল। এটি মূলত গ্রামীণ অঞ্চল ও গ্রামসমূহ। আর তৃতীয়টি হলোÑ
এরিয়া সি: বাকি ৬১ শতাংশ ভূমি সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে সীমান্ত, বাইরের নিরাপত্তা, জেরুসালেম ও বসতি অন্তর্ভুক্ত।
এ অঞ্চলসমূহ ফিলিস্তিনিদের কাছে হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল ২০০০ সালে। এ পরিকল্পিত আলোচনায় আরও যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল তা হলো সীমান্ত নির্ধারণ, বসতি নির্মাণ, জেরুসালেমের মর্যাদা, ইসরাইলি সামরিক উপস্থিতি এবং ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার।
তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সংক্রান্ত আলোচনা ২০০০ সালে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর পিএ কেবলই একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যার কেবল একটি নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়া সেই অর্থে আর কিছুই নেই। ২০০০ সালের আলোচনা ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যে বেশকিছু কারণও ছিল। আলোচনাটি চলছিল ক্যাম্প ডেভিডে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় এতে অংশ নিয়েছিলেন সে সময়ের ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক এবং পিএ প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত।
এ আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। মূল কারণ ছিল বেশকিছু প্রধান ইস্যুতে মতপার্থক্য। প্রথম মতপার্থক্যটি হয় জেরুসালেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। ইসরাইল পুরো জেরুসালেমকে তার রাজধানী হিসেবে দাবি করে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুসালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চেয়েছিল। মতপার্থক্যের দ্বিতীয় কারণটি ছিল ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার। প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে যারা তাদের পূর্বপুরুষের জমিতে ফিরে যেতে চায়। ইসরাইল এ দাবিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। তৃতীয়ত, প্যালেস্টাইন অথরিটি ১৯৬৭ সালের সীমান্তরেখার আলোকে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল এ সীমানা ও বসতিগুলোর ইস্যুতে নমনীয় হয়নি। এ আলোচনার ব্যর্থতা এবং এরপরে ইসরাইলি নেতা অ্যারিয়েল শ্যারনের আল-আকসা মসজিদ পরিদর্শনের ফলে ২০০০ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয়।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদা এবং এ কেন্দ্রিক সংঘাত পাঁচ বছর স্থায়ী হয়, যাতে প্রায় ৪,৩০০ ফিলিস্তিনি ও ১,০০০ ইসরাইলি নিহত হয়। সেই সময় ইসরাইল ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনি শহরগুলোয় আক্রমণ চালায়। পশ্চিমতীরজুড়ে রোডব্লক বসানো হয়। কোনোরকম বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে আটক রাখা হয়। পশ্চিমতীরজুড়ে দেয়াল নির্মাণও শুরু করা হয়। এসব কিছুর ফলে প্যালেস্টাইন অথরিটির জনপ্রিয়তা জনপ্রিয়তা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়, কারণ তারা এ দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়। একইসঙ্গে দুনীতির অভিযোগ, দুর্বল পরিষেবা, ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। ২০০৪ সালে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর মাহমুদ আব্বাস পিএ’র প্রেসিডেন্ট হন এবং ২০০৫ সালে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন।
২০০৬ সালে প্যালেস্টাইন লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হামাস বিস্ময়করভাবে জয়ী হয়। ১৩২টি আসনের মধ্যে ৭৪টি আসনে হামাস জয়লাভ করে। হামাস ছিল ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে বিশ্বাসী এবং তারা অসলো চুক্তিকে স্বীকৃতি দেয় না। গাজায় হামাসের জয়ের পশ্চিমারা প্রচ- ক্ষিপ্ত হয়। এরই জেরে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্যালেস্টাইন অথরিটিকে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফিলিস্তিনের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট করতে না পেরে ফাতাহ হামাসের সাথে বিরূপ আচরণ করতে শুরু করে। এ দ্বন্দ্ব ২০০৭ সালে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যার প্রতিক্রিয়ায় হামাস গাজা দখল করে নেয় আর অন্যদিকে ফাতাহ্ পশ্চিমতীরে শাসন ধরে রাখে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখ- কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। গাজায় হামাস এবং পশ্চিমতীরে ফাতাহ্-নিয়ন্ত্রিত প্যালেস্টাইন অথরিটি।
প্রতিষ্ঠার পর তিন দশক পেরিয়ে গেলেও প্যালেস্টাইন অথরিটি এর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রত্যাশার কিছুই পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে প্যালেস্টাইন অথরিটি শুধুমাত্র পশ্চিমতীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এ কাঠামোটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তাও হারিয়েছে। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন যে, প্যালেস্টাইন অথরিটি ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করে। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে এবং ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়েও অভিযুক্ত হয়েছে।
প্রথমদিকে প্যালেস্টাইন অথরিটি শক্তিশালীভাবে গঠিত হয়েছিল। এতে ছিল ১৩২ সদস্যবিশিষ্ট আইনসভা এবং বিচার বিভাগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এর অধীনে আরো ‘প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সেস’ নামে এক নিরাপত্তা বাহিনী। প্যালেস্টাইন অথরিটির নিজস্ব একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও ছিল, যা ১৯৯৪ সালের ‘প্যারিস প্রোটোকল’-এর অধীনে চালু হয়। এটি ছিল অসলো চুক্তির একটি অর্থনৈতিক সংযোজন। প্যালেস্টাইন অথরিটির দুটি প্রধান আয় উৎস ছিল। একটি হলো ক্লিয়ারেন্স রেভিনিউ-যার আওতায় ইসরাইল প্যালেস্টাইন অথরিটির পক্ষে কর সংগ্রহ করে দেয় আর দ্বিতীয় উৎসটি ছিল বিদেশি সহায়তা। এখনো পর্যন্ত প্যালেস্টাইন অথরিটি এ দুটি আর্থিক উৎসের ওপরই নির্ভরশীল। এ কারণে যখনই ইসরাইল বা আন্তর্জাতিক মহল চাপ প্রয়োগ করে, তখনই তারা এসব অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
প্যালেস্টাইন অথরিটি এখনো পশ্চিমতীরের অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু তার কর্তৃত্ব অনেকটাই সীমিত এবং দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ মুহূর্তে ইসরাইল পশ্চিমতীরের ৬০% এরও বেশি এলাকা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রায় প্রতিদিনই তারা সেখানে সেনা অভিযান চালায়। পুরো পশ্চিমতীর জুড়ে ইসরাইলিরা অসংখ্য চেকপয়েন্ট ও একাধিক সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। প্যালেস্টাইন অথরিটির অনুমতি ছাড়াই তারা সেখানে ফিলিস্তিনিদের আটক করে বা হত্যা করে। একসময় শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে প্যালেস্টাইন অথরিটির এ দুর্বল অবস্থানে পৌঁছে যাওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, পশ্চিমতীরের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অবস্থা ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল। ইসরাইল প্রায়শই কর রাজস্ব আটকে দেয়, যা প্যালেস্টাইন অথরিটির বাজেটে বড় সংকট তৈরি করে। দ্বিতীয় জনগণের আস্থার অভাব। দুর্নীতি, কর্তৃত্ববাদিতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অভাবের কারণে জনগণ প্যালেস্টাইন অথরিটিকে আর বিশ্বাস করে না। মাহমুদ আব্বাস ২০০৫ সালে নির্বাচিত হলেও এরপর আর কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই হয়নি। তৃতীয় কারণটি হলো অভ্যন্তরীণ বিভাজন। হামাস ও ফাতাহর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখনো নিরসন হয়নি। ফলে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন বা ঐক্যবদ্ধ কূটনীতি কোনোটাই সম্ভব হয়নি। আর সর্বশেষ কারণ হলো আন্তর্জাতিক চাপ। প্যালেস্টাইন অথরিটির ওপর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর চাপ থাকে যেন তারা সহিংস প্রতিরোধ বা ইসরাইলবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত না হয়। এর ফলে তারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এবং দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়তেও ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অপারেশন আল আকসা ফ্লাডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন মাহমুদ আব্বাস। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছিলেন, “আমরা উভয় পক্ষের বেসামরিক মানুষ হত্যা বা নির্যাতনের মতো কাজ প্রত্যাখ্যান করি, কারণ এগুলো নৈতিকতা, ধর্ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। সে সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিংকেনের সাথে জর্ডানে বৈঠক করার সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন। ইসরাইলিরা গাজায় সামরিক অভিযান শুরুর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, প্যালেস্টাইন অথরিটি পশ্চিম তীরে ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা জনগণের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। প্যালেস্টাইন অথরিটির অধীনস্থ নিরাপত্তা বাহিনী ইসরাইলের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে এরকম একটি অবস্থান স্পষ্ট হলে হাজার হাজার মানুষ পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমে রাস্তায় নেমে আসে। তারা স্থানীয় প্যালেস্টাইন অথরিটি অফিস এবং ইসরাইলি সামরিক চেকপয়েন্টের সামনে বিক্ষোভ করে। প্যালেস্টাইন অথরিটি সেই বিক্ষোভ কঠোরহস্তে দমন করে। অসংখ্য ফিলিস্তিনি তাদের দমন অভিযানে নিহত হয়।
গাজার হামাস যোদ্ধাদের মুক্তিকামী তৎপরতা সমর্থন করা তো দূরের কথা, বরং গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্যালেস্টাইন অথরিটি প্রতিরোধ আন্দোলন দমন করার জন্য সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অনেকেই বিশ^াসও করেন যে, প্যালেস্টাইন অথরিটি মূলত ইসরাইলের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে। গাজায় গত বছর যখন ইসরাইলীরা যুদ্ধ পরিচালনা করছিল ঠিক এরকম কঠিন সময়েও প্যালেস্টাইন অথরিটি পশ্চিমতীরের জেনিনে বড় ধরনের নিরাপত্তা অভিযান করে।
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তারা বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলবিরোধী কার্যক্রমকে দমন করার চেষ্টা করে। মুক্তিকামী যোদ্ধাদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিহিত করে প্যালেস্টাইন অথরিটি। স্বাধীনতাকামীদের দমনের জন্য তারা হাসপাতাল তল্লাশি করে এবং বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালায়। প্যালেস্টাইন অথরিটি এরকম অভিযান চালানোর কারণে ইসরাইলও সাহস পেয়ে যায় এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারাও অপারেশন আয়রন ওয়াল নামে পশ্চিমতীরে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ফলে ৪০,০০০ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। প্যালেস্টাইন অথরিটি এ পরিস্থিতিতেও জেনিনসহ অন্যান্য শহরে অভিযান অব্যাহত রাখে। ফলে প্রথমবারের মতো এমনও একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় যে, প্যালেস্টাইন অথরিটি এবং ইসরাইলি বাহিনীকে একযোগে দখলদারত্ববিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। এ ঘটনা প্যালেস্টাইন অথরিটির জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নামিয়ে নিয়ে যায়।
প্যালেস্টাইন অথরিটি কখনোই হামাসকে সমর্থন করে না, কারণ তারা একটি কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যদিও এর কোনো লক্ষণ গত ৪ দশকেও তারা হাজির করতে পারেনি। প্রকারান্তরে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় প্যালেস্টাইন অথরিটি দিনে দিনে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। কেননা অধিকাংশ ফিলিস্তিনিই এখন আর দুই-রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাস করে না।
কারণ ইসরাইল দখলদারত্ব কখনোই প্রত্যাহার করেনি। উল্টো অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ তারা অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইল ‘ফ্যাক্টস অন দ্য গ্রাউন্ড’ তৈরি করে রেখেছে যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পথ রুদ্ধ করেছে।
বর্তমানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে গাজা উপত্যকা। ফিলিস্তিনের এ অংশের মজলুম মানুষগুলো এখন বিশ^ মানচিত্র থেকে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। অথচ গাজা ফিলিস্তিনের একটি অংশ আর ফিলিস্তিনের শাসক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে প্যালেস্টাইন অথরিটি বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গেল ১৫ মাসের যুদ্ধে কিংবা ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের পর থেকে গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা পরিচালনা করছে তা বন্ধে প্যালেস্টাইন অথরিটির কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। প্যালেস্টাইন অথরিটি হলো এমন একটি নেতৃত্ব, যা কাগজে আছে কিন্তু বাস্তবে যার কোনো ভূমিকা নেই।