জনমত জরিপ

বিএনপিকে ৪২ শতাংশ, জামায়াতকে ৩২ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে


১৩ মার্চ ২০২৫ ১৫:২৬

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে এ মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পাবে। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, তাদের ভোট দেবে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক জনমত জরিপে এমন তথ্য জানা গেছে।
গত শনিবার (৮ মার্চ) প্রকাশিত উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে সহযোগিতায় ছিল ব্রেন এবং মুক্তচিন্তার প্ল্যাটফর্ম ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক জরিপটি চালানো হয়। এতে সারা দেশের ১০ হাজার ৬৯৬ জন অংশগ্রহণ করেন।
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে কোন দলকে ভোট দেবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ৬৫ শতাংশ ভোটার তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ বিএনপিকে সমর্থন করেছেন, ৩২ শতাংশ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে মত দিয়েছেন, আর আওয়ামী লীগ পেয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন।
জরিপের ফল আরও বলছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২ দশমিক ৬ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ১ শতাংশ, গণ অধিকার পরিষদ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, গণসংগতি আন্দোলন শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এবং অন্যান্য ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পাবে।
জরিপে উঠে এসেছে, পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা এখনো টিকে থাকলেও, তরুণ ভোটারদের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সামান্য ব্যবধানে তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দলকে পেছনে ফেলেছে। জেন-জি ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১১ শতাংশ সমর্থন, যেখানে তরুণদের রাজনৈতিক দল পেয়েছে ১০ শতাংশ। তবে সামগ্রিকভাবে এ তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে।
জরিপের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে বিএনপি তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। জেনারেশন এক্স ও বুমার প্রজন্মের ৪৭ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে সমর্থন করছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ৩৫ শতাংশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দলটি জেনারেশন জি-এর ৩৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে রক্ষণশীল দল হিসেবে পরিচিত হলেও জামায়াত তরুণদের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে বলে জরিপ থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে গ্রাম ও শহরের ভোটারদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের জনপ্রিয়তায় কিছু পার্থক্য লক্ষ করা গেছে। বিএনপি গ্রামাঞ্চলে ৪২ শতাংশ এবং শহরে ৪০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। অন্যদিকে জামায়াত গ্রামে ৩২ শতাংশ ও শহরে ৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে।
লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিএনপির সমর্থন পুরুষ ও নারীদের মধ্যে প্রায় সমান। দলটি পুরুষ ভোটারদের মধ্যে ৪২ শতাংশ এবং নারী ভোটারদের মধ্যে ৪১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী পুরুষদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি জনপ্রিয়, যেখানে দলটি ৩৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী ভোটারের সমর্থন পেয়েছে।
জরিপের ফলাফল থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এখনো উল্লেখযোগ্য সমর্থন রয়েছে। বিএনপি বয়স্ক ও গ্রামীণ ভোটারদের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী তরুণ ও প্রবীণÑ উভয় ভোটারদের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য সমর্থন বজায় রেখেছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রবণতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ এখনো কিছুসংখ্যক প্রবীণ ভোটারের সমর্থন ধরে রেখেছে। তবে ছাত্র নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল ক্রমশ তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করা ও কার্যকর রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা, যা ভোটারদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।