শহীদ ও আহতদের জাতীয় সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করবে জামায়াত : ডা. শফিক

গত সোমবার ৩ মার্চ রাজধানীর লেডিস ক্লাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আহত, পঙ্গু ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে হাত দিয়ে আদর করে আহতদের সাথে কুশল বিনিময় করেন দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান

‘শহীদের রক্ত নিয়ে অন্যদের মতো জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করে না এবং করবেও না’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শহীদের রক্ত নিয়ে যারা রাজনীতি করে করুক, জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের নিয়ে রাজনীতি করবে না। জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের জাতীয় সম্পদ হিসেবেই মূল্যায়ন করে এবং করবে। জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও জীবন্ত শহীদ পরিবারের সদস্য। তিনি দেশবাসীকে অনুরোধ করেনÑ যাতে কেউ এমন কাজ না করে, যার মাধ্যমে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হয়। গত সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনস্থ লেডিস ক্লাবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গু ও শহীদ পরিবারের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বুয়েটের অধ্যাপক প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ তাহফিক প্রমুখ।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ কামাল হোসাইন ও মো. শামসুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোবারক হোসাইন, কামরুল আহসান হাসানসহ মহানগরীর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী ৩ হাজারের অধিক মানুষ ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান শহীদ পরিবারের বেদনা তুলে ধরে বলেন, যেই মা-বাবা সন্তান হারিয়েছে, যে বোন স্বামী হারিয়েছে, যেই সন্তান পিতা-মাতা হারিয়েছে, তারা গত বছর রমজানে একত্রে সাহরি ও ইফতার করেছে। এ বছর সেই স্মৃতি মনে করে সাহরি ও ইফতার তৃপ্তিতে করতে পারে না। এই বেদনা সহ্য করার নয়। এ সময় তিনি এবারের ঈদ শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের সাথে পালনের ঘোষণা দেন। আমীরে জামায়াত বলেন, শহীদদের নিয়ে প্রকাশিত শহীদ স্মরণিকা ঈদের পরপরই প্রত্যেক শহীদ পরিবারে পৌঁছানো হবে।
মোবারক হোসাইন বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে এখন পর্যন্ত কারো ভাবনা চোখে পড়েনি। একমাত্র জামায়াতে ইসলামীর আমীরের নির্দেশে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে এবং আহতদের খুঁজে খুঁজে চিকিৎসা ও পুনবার্সনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর সাক্ষী উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী ভাই-বোন। এছাড়া আমীরে জামায়াত বলেছেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ সহ আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ২০২৪-এর ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। এজন্য শহীদদের স্মরণে ১০ খণ্ডে ২৫০০ পৃষ্ঠার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এই বইতে শহীদদের পরিচয়, গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা ও শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস মুছে যেতে দেবে না জামায়াতে ইসলামী। তিনি উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের উদ্দেশে বলেন, নতুন বাংলাদেশ আপনাদের। আপনারাই গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গিয়ে আহত-পঙ্গুত্ববরণ করেছে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে গাজী এবং গণহত্যার শিকার সকলে শহীদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভা শেষে গণহত্যার শিকার পরিবারকে হত্যাকারীদের বিচার দেখার সুযোগ দান এবং বাংলাদেশের জন্য আগামীতে ন্যায়পরায়ণ শাসক কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন আমীরে জামায়াত। এ সময় উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীরা আমীন কণ্ঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অমর্ত্য সেনের মন্তব্যের প্রতিবাদে আমীরে জামায়াত
বাংলাদেশের জনগণ টানা সাড়ে ১৫ বছর সেক্যুলারিজমের নামে চরম ভণ্ডামি প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে খোলামেলা ওকালতি করছেন, যা বিস্ময়কর, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সম্প্রতি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনাকাক্সিক্ষত নাক গলানোর মতো কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
গত সোমবার (৩ মার্চ ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে অমর্ত্য সেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, জানি না তার বিবেক কোথায়? বাংলাদেশকে সহনশীলতার ছবক দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি যে দেশে এবং সমাজে বসবাস করেন, সেই সমাজের আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করুন। জামায়াত আমীর বলেন, বাংলাদেশের জনগণ টানা সাড়ে ১৫ বছর সেক্যুলারিজমের নামে চরম ভণ্ডামি প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে খোলামেলা ওকালতি করছেন, যা বিস্ময়কর, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।
ডা. শফিকুর বলেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যা বলেছেন, তার বদ্ধমূল ধারণা থেকে বলতে চেয়েছেন। বাস্তবতা পুরোটাই উল্টো। সংখ্যালঘু বলে তিনি যাদেরকে চিহ্নিত করেছেন, সেই সব ভাই-বোনদের ওপর নির্যাতনকারী দানবের নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সাহস থাকলে তা বলে দিন, পারবেন না। কারণ আপনারা সীমাবদ্ধ সুশীল। সর্বশেষ তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সময়-অসময়ে নাক গলানো দেশপ্রেমিক জনগণ একেবারেই পছন্দ করেন না।
মির্জা ফখরুলের সুস্থতা কামনা
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সুস্থতা কামনা করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। গত সোমবার (৩ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মির্জা ফখরুলের সুস্থতা কামনা করেন তিনি। পোস্টে জামায়াতের আমীর লেখেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আশু সুস্থতা কামনা করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে সুস্থতার নিয়ামত দান করুন, আমিন। এর আগে গত রোববার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।