রুখতে হবে ভারতীয় ষড়যন্ত্র
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:২০
॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের নীতি হলো, ‘নতজানু হয়ে থাকো, নয়তো শান্তিতে থাকতে দেবো না।’ তাই তো তাদের এ নীতিতে অনুগত হাসিনার পতনে দিশেহারা ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। অবশ্য জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় থাকায় ভারত বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু তারপরও ভারত হাল ছাড়ছে না। যেকোনো উপায়ে তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে চায়। এ প্রসঙ্গে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ভারত এমন একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা করছে যে, বাংলাদেশ ‘আফগানিস্তানের মতো অস্থিতিশীল’ হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রচারণা বাংলাদেশের নতুন যাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়, তার প্রভাব ভারতেও ছড়িয়ে পড়বে। এ অস্থিতিশীলতা সীমান্ত পেরিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের পর ভারত বন্ধু সাজার ভান করছে। তারা এখন ডাবল গেম খেলার ষড়যন্ত্র করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বেছে নিয়েÑ ১. নব্য বিভীষণ, ২. ডাবল গেম বা দ্বৈত খেলা। তাদের এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায়, ‘লেভি এন মাস’ কৌশল সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। অবশ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফেনী ও সিলেটসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তে এ কৌশল প্রয়োগ করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বাহিনী সফলও হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকরা বিনা প্রশিক্ষণে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অংশ নিয়েছেন। তারপরও সাফল্যের কারণে বিষয়টি নিয়ে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ব্যাপক উৎসাহ দেখাচ্ছেন। ওপরে উল্লেখিত ভারতের ষড়যন্ত্র কৌশল ও ‘লেভি এন মাস’ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে তারা বন্ধু হাসিনার প্রশ্নের কতটা অন্ধ, সেদিকে নজর দেয়া যাক।
বন্ধু হাসিনার প্রশ্নে কতটা অন্ধ ভারত
‘হাল ছেড় না বন্ধু, আমরা তোমার পাশে আছি।’ ভারতের এমন আশ্বাসবাণী পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে হাসিনা গণতন্ত্র ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন পরিণাম না ভেবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জান বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর তার পক্ষে হাল ধরেছে ভারত। অভ্যুত্থানের পর থেকেই তারা বন্ধুর পক্ষে মাঠে নেমেছে। অভ্যুত্থান ঠেকাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ভারতীয় বিভিন্ন বাহিনী মাঠে ছিলÑ এমন প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এমনকি গুমকাণ্ডের সাথে জড়িত ভারত। ‘বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন হাসিনা’! গুমকাণ্ডে দিল্লির যোগও ‘খুঁজে পেল’ মুহাম্মদ ইউনূসের তদন্ত কমিশন (ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক, শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০১)। হাসিনার হয়ে প্রতিটি সেক্টরেই যুদ্ধ করছে ভারত। তবে আশার কথা হলো, প্রতিটি সেক্টরেই বাংলাদেশের সাথে পাঞ্জা লড়ে ভারত পরাজিত হচ্ছে। হাসিনা দেশত্যাগের পরপরই মাঠে নেমেছিল তাদের মিডিয়া যোদ্ধারা। হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করতে তারা কোমর বেঁধে ‘জামায়াত, জঙ্গি, জিহাদি; এমনকি আইএস আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে এমন ভিত্তিহীন বয়ান তৈরি করে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়েছে। এ কাজে তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে প্রথমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার, বাংলাদেশ মিশনে আক্রমণ ও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে ব্যর্থ হয়ে শুরু করেছে সীমান্ত সংঘাত। এ সময়ও একশ্রেণির মিডিয়া; বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অন্ধভাবে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ভারতীয় কিছু মিডিয়া আওয়ামী লীগের চেয়েও হাসিনাপ্রেমী। শেখ হাসিনার অপকর্ম ও তার দুঃশাসনের সত্য ইতিহাস মানতে নারাজ ঐসব মিডিয়া। জ¦লজ্যান্ত সত্যকেও তারা স্বীকার করছে না। গোটা দেশকে দুর্নীতির সাগরে ডুবিয়ে একটা চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার অপকর্ম যা দিবালোকের মতো সত্য, কোটি কোটি মানুষ সাক্ষী। কিন্তু সেগুলো স্বীকার করে না ভারতীয় মিডিয়া।’
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের মিডিয়া বলতে শফিকুল আলম মূলত ‘গদি-মিডিয়া বা মোদি মিডিয়া’কে বুঝিয়েছেন। তারা কেন হাসিনাপ্রেমে অন্ধ, তা প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের এমন বৈরী আচরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারতের পক্ষ থেকে সুরক্ষা দেয়ার অংশ হিসেবেই তারা এমন ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখানে থেকে মন্তব্য করে চলেছেন, যা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করছে।’ তিনি ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত একজন ব্যক্তিকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া এবং তাকে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাদের জন্য ঠিক হচ্ছে না।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ বক্তব্য এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার নির্দেশদাতা উল্লেখ করার পরও ভারত তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে সহযোগিতা করছে না। বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না। বরং ভারতের এ ডাবল গেম এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীন যেমন মিয়ানমারে দ্বৈত খেলা বা ডবল গেম খেলছে, ভারতও বাংলাদেশে সেই খেলা খেলতে চাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। তবে ভারতের এ খেলার মোকাবিলায় ড. ইউনূস ‘লেভি এন মাস’ চালে সফল হলে এবং জাতীয় ঐক্য অটুট থাকলে এ অঞ্চলের নতুন পরাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের যুক্তি হলো, আমেরিকার সাথে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিবেশীরাও ভারতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। চীনের সাথে আমেরিকা ও ভারতের চলমান সংকট বাংলাদেশের প্রভাব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে উঠবেÑ এটা শুধু গালগল্প নয়।
শুধু গালগল্প নয়, সুপার পাওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা
বাংলাদেশের সুপার পাওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা শুধু গালগল্প নয়। উনিশ শতকের শেষ দিকে মার্কিন নৌ-কৌশলবিদ আলফ্রেড থায়ার মাহান ‘দি ইন্টারেস্ট অব আমেরিকা ইন সি পাওয়ার’ (১৮৯৭) শিরোনামে একটি গ্রন্থ লেখেন। এতে তিনি লিখেছেন, সমুদ্র-বাণিজ্য বা নৌশক্তি যেভাবেই হোকÑ সমুদ্র যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার পক্ষে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হয় সমুদ্রপথে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের মতে, বঙ্গোপসাগরে খনিজসম্পদের সঠিক আহরণ ও ব্যবহার বাংলাদেশকে আগামী দিনের এনার্জি সুপার পাওয়ারে পরিণত করবে। আবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য স্ট্র্যাটেজিস্টের মতে, বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনসংখ্যা রয়েছে এ অঞ্চলে। ভারতের প্রভাব থেকে বের হয়ে শির উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো সাহসী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে সুপার পাওয়ারের মর্যাদায় উন্নীত করবে, এতে সন্দেহ নেই। এজন্যই সত্য ও সাহসী নেতৃত্বকে ভারতের এত ভয়। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নব্য বিভীষণ তালাশ করছে এবং ডাবল গেম খেলার ছক আঁকছে।
ডাবল গেম খেলার ছক ও নব্য বিভীষণ
ডাবল গেমের ছক বাস্তবায়নে ভারত নব্য বিভীষণ তালাশ করছে। নব্য বিভীষণ কারা, তাদের কাজ কী? এ সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন। বিভীষণ শব্দের সাথে পাঠকরা নিশ্চয় পরিচিত। বিভীষণ হিন্দু পুরাণ রামায়ণের একটি চরিত্র। তিনি ছিলেন লংকার রাজা রাবণের ছোট ভাই। তার বিশ্বাসঘাতকতা রাম-ভক্তদের ভাষায়, সহযোগিতার কারণেই রামচন্দ্র লংকা জয় করতে পেরেছিলেন। রাম-ভক্তরা মনে করেন, বিভীষণ রাক্ষসপুত্র হলেও তিনি ছিলেন ধর্মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ। থাক সে কথা। বাংলাদেশ জয় করার জন্য এমন কিছু বাংলাদেশি ভারতের প্রয়োজন, যারা বিভীষণের ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে নব্যরা বেশি কার্যকর হবেন। কারণ পুরনোদের এদেশের মানুষ ২০২৪-এর গণভ্যুত্থানের পর প্রত্যাখ্যানই শুধু করেনি, বিচারের মুখোমুখি করার জন্য খোঁজাখুজি করছে। ভারতের এ নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে প্রধান বাধা ইসলামপন্থী ও খাঁটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী, ইনকিলাব মঞ্চ, বিএনপি ও ছাত্রদলের জিয়ার একনিষ্ঠ ভক্তসহ ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এদেশের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে লোভের গুড় ছিটাতে শুরু করেছে, সাথে সাথে কৈ মাছের তেলে কৈ ভাজার অপকৌশল নিয়েছে। কৈ মাছের তেলে কৈ ভাজার কৌশল গুড়ের চেয়ে বেশি কাজে লাগছে। এর সাথে সাথে সমানতালে সীমান্তে ডাবল গেমের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ‘ইসলামী জঙ্গি’ নাটক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে। সীমান্ত নিয়ে অপকৌশলের আগে কৈ মাছের তেলতত্ত্ব তুলে ধরা হলো।
কৈ মাছের তেলে কৈ ভাজাতত্ত্ব
দুর্নীতিবাজ, বাংলাদেশের লোভীদের ভারতের গোয়েন্দারা বশে এনে তাদের কাজে লাগানো এ কুকৌশলের লক্ষণ হাসিনার পতনের পরপরই দেখা যাচ্ছে। দেশের সৎ লোকদের বিরুদ্ধে লোভী দুর্নীতিবাজদের লাগানোর এ কুকৌশল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনেক পুরনো, কিন্তু বিষয়টি তেমন আলোচনায় নেই। কারণ আলোচনা করা একটু জটিল। তবে সময়ের প্রয়োজনে এখন আলোচনা করতেই হচ্ছে। এ কুকৌশলের মাধ্যমে ভারত সরকার তাদের বাজেটের অর্থ খরচ ছাড়া, চুরি ডাকাতি, সিন্ডিকেট ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে সুযোগ সৃষ্টি করে সেই টাকায় এজেন্ট পোষে। এজেন্টদের টাকার পাহাড় গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। জাতীয় ঐক্য নষ্ট করে, সৎ-যোগ্য লোকদের দেশসেবা থেকে বঞ্চিত করে।
সকল সৎ, যোগ্য রাজনীতিবিদ, আমলা, সাংবাদিক, সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখেই বলতে হচ্ছেÑ ‘প্রশাসনের সব জায়গা জামায়াতে ইসলামী দখল করছে’, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবির’, ‘এদের ঠেকাতে না পারলে দেশ বাঁচবে না।’ এমন মাতম যারা তুলেছেন। তারা আসলে কৈ মাছের তেলে কৈ ভাজা প্রকল্পের ফাঁদে পড়েছেন। তাদের মাথায় এ কুচিন্তা কুকৌশলে সেটআপ করে দেয়া হচ্ছে যে, ‘তোমার অফিসে অথবা এলাকায় যদি জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী কেউ থাকে, তুমি ভাতে মারা যাবে। কারণ ঘুষ, দুর্নীতি করতে পারবে না। এর চেয়ে একজন আওয়ামী লীগ বসাও দুজন মিলেমিশে খাবে, কেউ বাধা দেবে না, ধরা পড়ার ভয় নেই। সমাজের প্রতিটি সেক্টরেই এ কুকৌশলে জামায়াতবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, সৎ-যোগ্য নেতাদের বিরুদ্ধে যত খারাপ বিশেষণ ব্যবহার তারা করে। যেমনÑ ‘রাজাকার’ স্বাধীনতাবিরোধী এমন সব অভিযোগ যে সবই মিথ্যা এ কথা তারাও জানে। কিন্তু মূল কথা ‘আওয়ামী লীগ ১৭ বছর খেয়েছে এখন আমরা খাবো’, কিন্তু ঐ সৎ লোকগুলো থাকলে তা হবে না। ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মূলেও একই তত্ত্ব। টেন্ডারবাজি, ফাও খাওয়া, সিট-বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা বন্ধ হবেÑ রাজনীতি করে কোটিপতি হওয়ার পথ বন্ধ হবে ছাত্রশিবিরের প্রভাব বাড়লে। এসব লোভী অসৎ প্রতারক নব্য বিভীষণদের বিরুদ্ধেও ‘লেভি এন মাস’ কৌশল প্রয়োগ করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাহলেই ভেতরের এ বিভীষণদের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। দেশের ভেতরে ও সীমান্তে বন্ধ হবে ভারতীয় গোয়েন্দাদের এ নোংরা গেম।
সীমান্তে ভারতীয় গেম
মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীতে ভারতের লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) অভয় কৃষ্ণের একটি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘মিয়ানমারে ভারতের বিকল্পগুলো পরীক্ষা করা’ শিরোনামে প্রকাশিত তার নিবন্ধে বাংলাদেশকে অশান্ত রাখার ভারতীয় কৌশল এ অঞ্চলের রাজনৈতিক পরির্বতনে তার দেশের উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। তিনি বলপ্রয়োগের চেয়ে বুদ্ধি বেশি কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি ভারতকে বাংলাদেশের সাথে চীন মিয়ানমারে সাথে যে খেলা খেলছে, তা অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, চিন মিয়ানমারে উভয় পক্ষের সাথেই খেলছে। তিনি মনে করেন, ভারত ভুল করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কাছে টেনে নিয়ে তাদের সেভেন সিস্টারের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতীয় এ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ভারতকে সতর্ক করেছেন। এক্ষেত্রে কৌশলে ভুল হলে বিপদ বাড়বে। বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডারস কনফারেন্সে সভাপতি হিসেবে এক ভাষণ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-হামাস সংঘাত এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রাজনাথ তার দেশের সামরিক কমান্ডারদের এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেয়ার পর ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা তাকে সামরিক নয়, বুদ্ধির খেলা খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে ভারত যেসব সমস্যার মুখে পড়তে পারে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করে বলপ্রয়োগ নয়, কৌশলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছেন। ডাবল গেমের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা সহজ ও নিরাপদ বলে তারা মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ অবশ্য আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘মনে রাখা প্রয়োজন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য এমন সময় এসেছে, যখন বাংলাদেশে পিলখানা, সেনা হত্যার বিচার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে পিলখানা সেনা হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্য এবং সেখানে থাকা সেনাসদস্যরা এবং এ ঘটনার তদন্তে জড়িত থাকা সেনাসদস্যরা এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে যেসব বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তাতে তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, পিলখানা সেনা হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত সরাসরি জড়িত।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সামরিক প্রস্তুতির সাথে সাথে ভারতের অপকৌশলের মোকাবিলায় ‘লেভি এন মাস’ কৌশলের ওপর জোর দিচ্ছেন। এটি ফরাসি ধারণা। বহিঃশত্রুর আগ্রাসনের মুখে জাতীয় পর্যায়ে বেসামরিক নাগরিকদের যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে (ম্যাস কনস্ক্রিপশন) ব্যবহার করা হয়। ফরাসি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের যুদ্ধ বেধে গেলে এ ধারণার উদ্ভব হয়। সে সময় ওই ধারণার আওতায় সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের রিক্রুট করা হয়। দেশের বর্তমান বিপ্লবোত্তর সংকট উত্তরণ; বিশেষ করে ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলায় এ কৌশলের কথা ভাবা জরুরি বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।