ঢাকায় বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান

অবিলম্বে এটিএম আজহারকে মুক্তি দিন


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:১১

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে ঢাকা মহানগরী আয়োজিত বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দিন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের পতন হলেও মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। তাই আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা, অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আমাদের বিক্ষোভ-সমাবেশ-আন্দোলন কোনোভাবেই বন্ধ হবে না, বরং জনগণ তাদের নেতাকে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করেই ছাড়বে।’ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ারও দাবি জানানো হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হলেও দুপুরের পর থেকেই পল্টন মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। ৪টার আগেই উপস্থিতি পল্টন মোড় ছাড়িয়ে বিজয়নগর-নাইটিঙ্গেল মোড় ও আশপাশের এলাকা ছাড়িয়ে যায়। পল্টন মোড়ে তিনটি খোলা ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সূত্রে জানা গেছে, একইভাবে জামায়াতের ৭৯টি মহানগরী ও জেলা শাখায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জামায়াত সারা দেশে এবং রাজধানীতে এই প্রথম বড় ধরনের সমাবেশ করল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, এটিএম আজহারের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এ সমাবেশ প্রথমও নয়, শেষও নয়। সমাবেশ, বিক্ষোভ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করব সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। এক এক করে বাকি মজলুমদের যেভাবে মুক্তি দিয়েছেন; সর্বশেষ মজলুমকেও দেশবাসীর কাছে মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে দিন। তার জীবন থেকে ১৩টি বছর হারিয়ে গেল। এগুলো কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। আর ১৩ মিনিট তিনি জেলে থাকুক, তা আমরা চাই না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ-মিছিলপূর্ব এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
বক্তব্যের শুরুতে জামায়াতের আমীর বলেন, আপনারা সাক্ষী ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। ফ্যাসিবাদ প্রতিপক্ষ সংগঠন হিসেবে তার হিংস্রতম থাবাটি বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। সকল শীর্ষনেতৃবৃন্দকে এক এক করে বন্দি করেছিল। প্রথম দফায় বন্দি হওয়ার পর সংগঠন এটিএম আজহারুল ইসলামের ওপর সেই সময়ের গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পথের কাঁটা সরানোর জন্য বাকিদের ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে তাকেও গ্রেফতার করা হলো। এক এক করে ১৩টি বছর অতিবাহিত হয়েছে। কারাগার প্রকোষ্ঠের অন্ধকারে তিনি আছেন। তারপরও তিনি মুক্ত হননি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হলো। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো- ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্ত হলেন না কেন? কোন জিনিস তাকে কারাগারে আটকে রাখতে বাধ্য করেছে? কেন এই বৈষম্য? আমরা তো নিজে থেকেই অন্য নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এ উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। উদারতা দেখিয়ে যাবো। কিন্তু এটিএম আজহারুল সাহেব কেন মুক্তি পেলেন না, তা সুস্পষ্টভাবে জানতে চাই বর্তমান সরকারের কাছে। আমরা তো চাইনি, কল্পনাও করিনি যে, আমাদের এভাবে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে প্রিয় আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ভদ্র, কিন্তু বোকা নই। আমাদের ভদ্রতা এবং উদারতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন। ভদ্র যখন শক্ত হয়, তখন কতটা শক্ত হতে পারে, তা সাড়ে ১৫ বছর আপনারা দেখেছেন। কোনো অপশক্তির কাছে জামায়াত ১৫ বছর মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে, কিন্তু আপস করেনি। বহু আপসের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছিল। বাংলাদেশের বীর সন্তানরা সেই প্রস্তাবগুলো পায়ের তলে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা তাদের উত্তরসূরি। সুতরাং দয়া করে আর ধৈর্যের পরিচয় নেবেন না। এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিন।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর প্রশ্ন রাখেন- কেন আমাদের নিবন্ধন আটকে রেখেছেন? নিবন্ধন তো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম আপনারাও কি আমাদের ওপর করবেন? এজন্য হাজার জনতা জীবন দিয়েছে? হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে? আবার সেই বৈষম্য দেখার জন্য? আমরা বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো বৈষম্যকে বরদাস্ত করবো না। সকল বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন- একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লড়াই করার জন্য কি রাজি আছেন? লাখো কণ্ঠে আওয়াজ আসে জ্বি…।
প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ছাত্র-যুবকের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বার বার বলতে চাই, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কেউ কথা বলবেন না। কথা বলবেন রাজনীতিবিদের ভাষায়। আমরা ওয়েলকাম করবো, অভিনন্দন জানাবো। সমালোচনা করলে চুমু দেবো। কিন্তু চোখ রাঙাবেন না মেহেরবানি করে। এ সংগঠন কারো চোখ রাঙানোকে পরোয়া করে না।
তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে জাতির বিরুদ্ধে অতীতেও ষড়যন্ত্র ছিল। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এক এক করে আল্লাহ তায়ালা সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আসুন, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে ফ্যাসিবাদকে রুখে দাঁড়াই। তিনি এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা করেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৫ আগস্টের পর দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টাকে মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অথচ মানবিক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হলো না। এর পেছনে কি কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে? দেখা যাচ্ছে বৈষম্যহীন দেশে এটিএম আজহারুল ইসলাম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তিনি এটিএম আজহারের মুক্তির পাশাপাশি দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯০ দিন পর জামায়াতে ইসলামী আবার রাজপথে নেমেছে। আমরা ন্যায়বিচারের আহ্বান জানাই। যদি এটিএম আজহারকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে রাজপথ অচল করে দেব।
নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, অনেক রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটিএম আজহারকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। সরকারকে বলবো, চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। নইলে যেভাবে মুক্ত করতে হয়, সেটাই করা হবে। সমাবেশ শেষে পল্টন মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।