লিপইয়ার নিয়ে অবাক করা তথ্য


৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৬

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত, যা বছরের একটা অতিরিক্ত দিন বোঝায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের কারণে ২৯ ফেব্রুয়ারি ‘লিপ ডে’ হলেও, এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ বেশ কমই দেখা যায়। এখন প্রশ্ন আসে- কীভাবে হয় লিপইয়ার? আজ খুঁজব এমন সব মাজার তথ্য।
মূলত সৌরজগতের বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্যই লিপইয়ারের অতিরিক্ত দিনটা জরুরি হয়েছে। ৩৬৬ দিনে বছর পূর্ণ হয় মনে করা হলেও পুরোপুরি দিন লাগে না। সব মিলেয়ে সময় লাগে ৩৬৫.২৪২২ দিনের মতো। যে কারণে বছরের এক দিনের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ সময় যোগ হয়, যা প্রতি চার বছরে একটা বাড়তি দিন যোগ করে।
রোমের ক্ষমতাধর শাসক জুলিয়াস সিজারের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। তার শাসনামল শুরুর পূর্বে ৩৫৫ দিনে বছর গণনা করা হতো। ফলে প্রতি দুই বছর পরপর ২২ দিনের মাস যুক্ত হতো, যা ছিল একটা জটিল প্রক্রিয়া। এর সমাধানে এ শাসকের নির্দেশেই ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু হয়। যে অতিরিক্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা থেকে যায়, তা মিলিয়ে নিতে চার বছর পরপর একটা অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে যুক্ত হয়।
আপনি যদি হিসাব করে দেখেন, আঙুলের হিসাবে প্রতি চার বছর পরপর আসে লিপইয়ার। সে বছরটাকে ১০০ দিয়ে ভাগ করা গেলেও ৪০০ দিয়ে করা যায় না। তবে তা লিপইয়ার নয়। ফলে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী আমরা ২০০০ সালে লিপইয়ার পেয়েছি, ১৬০০ সালে লিপইয়ার ছিল, কিন্তু আবার ১৭০০, ১৮০০ ও ১৯০০ লিপইয়ার নয়।
পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির নেতৃত্বে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়। যেখানে প্রতি চারশ’ বছরে ৩টা লিপ ডে বাদ পড়ে। যে হিসাব আজ অবদি চালু আছ। যদিও বর্তমান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন মানুষ হয়তো আবারও এ নিয়ে নতুন করে ভাববে।
অনেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ধারণা সম্রাট সিজার অগাস্টাসের ব্যক্তিগত ইচ্ছাতেই ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। একসময় ফেব্রুয়ারি মাস ৩০ দিনের ছিল। লিপইয়ারের এ দিনে একসময় মেয়েরা ছেলেদের মনের কথা জানাতেন। যার অন্যতম উদাহরণ ৫ম শতকে সেন্ট ব্রিজেটের ঘটনা, যা নিয়ে অবশ্য বেশ বিতর্ক আছে। প্রচলিত আরেকটি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছেন স্কটল্যান্ডের রানি মার্গারেট আইন জারি। সে সময় কোনো পুরুষ লিপইয়ারে মেয়েদের দিক থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে জরিমানা দিতে হতো। এই রীতি বেশি প্রচলিত ছিল ১৯ শতকে।
বলে রাখা ভালো, লিপইয়ারে মেয়েদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ভিন্নতা দেখা যায়। ডেনমার্কে জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ছেলেদের মনের কথা জানাতেন মেয়েরা। এ দিনে কোনো পুরুষ নারীর দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব না মানলে ওই নারীকে ১২ জোড়া দস্তানা দিতে হয়। ফিনল্যান্ডে দিতে হতো স্কার্ট বানানোর কাপড়। অন্যদিকে গ্রিসে লিপইয়ারের দিন বিয়ে করা অশুভ।
লিপইয়ার বা অধিবর্ষের রাজধানী বলে স্বীকৃত টেক্সাসের অ্যান্থনি শহর। ১৯৮৮ সালে এ শহরের বাসিন্দা ও লিপইয়ারে জন্ম নেওয়া ম্যারি অ্যান ব্রাউন চেম্বার অব কমার্সের কাছে যান শহরে একটা লিপ ইয়ার উৎসবের আবেদন নিয়ে। সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়। সে সময় অ্যান্থনিকে ঘোষণা দেওয়া হয় বিশ্বের লিপ ইয়ার রাজধানী হিসেবে।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছাড়া অন্যান্য ক্যালেন্ডারেও লিপইয়ারের প্রয়োজন পড়ে। আধুনিক ইরানের ক্যালেন্ডারে প্রতি ৩৩ বছরে ৮টা লিপ ডে আছে। এছাড়া ভারতের জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশের যে বাংলা পঞ্জিকাবর্ষ তাতেও লিপইয়ার এমনভাবে রাখা হয়, যাতে লিপ ডে সবসময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি থাকে।
ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযাত্রা নিয়েও রয়েছে এ ফেব্রুয়ারির ২৯ দিন নিয়ে মাজার তথ্য। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে চূড়ান্ত অভিযানের সময় ১৫০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির চন্দ্রগ্রহণকে নিজের সুবিধার্থে কাজে লাগান। ইন্টারনেট।