আমরাই বিজয়ী হব, ইনশাআল্লাহ


৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:০০

আমরাই বিজয়ী হব, ইনশাআল্লাহ

॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান ছোট দেশ। জনসংখ্যা ১৮ কোটি। সবাই ইসলাম ভালোভাবে না বুঝলেও তারা আল্লাহকে মানে, রাসূলকে মানার চেষ্টা করে। ভুল-ভ্রান্তি হলে আল্লাহর কাছে মাফ চায়। আল্লাহ গাফুরুর রাহিম। তিনি হয়তো মাফ করে দেবেন।
বাংলাদেশ জন্মের ৫৩ বছর কেটে গেল। এত দীর্ঘসময়েও আমরা দেশে ভালো শাসক পেলাম না। নির্বাচনের নামে প্রকৃতপক্ষে অনির্বাচিত লোকরাই দেশ শাসন করেছে। বিগত সরকার কার্যত একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। বিনাভোটে, দিনের ভোট রাতে করে আমরাই দেশে-বিদেশে আমাদের ভাবমর্যাদা নষ্ট করেছি। গত কয়েকদিনে উত্তরবঙ্গের ৫ জেলা সফর করলাম ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করার কাজে। তারা জানতে চায়, উত্তরবঙ্গের লোকেরা বৈষম্যের শিকার। ১৬ জেলায় কোনো উপদেষ্টা নেই। আমরা এর প্রতিকার চাই।
খুন, গুম, হত্যা, নির্যাতন করে, আয়নাঘরে রেখে, মানুষকে কষ্ট দিয়ে দুনিয়ার সামনে হাসিনা ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। নিজে পরিবারের লোকদের দিয়ে দেশের টাকা লুট করে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। হাসিনার বোন রেহানার মেয়ে টিউলিপ ব্রিটেনে দুর্নীতির কারণে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছে, যা দেশের জন্য অপমানজনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। হাসিনার ছেলে জয়ের কুকীর্তি জনসম্মুখে আসছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলেও তাদের কার্যকলাপ দেশের মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। দেশের টাকা বিদেশে পাচারের ঘটনা দুনিয়ায় আর একটি দেশেও পাওয়া যাবে না। হাসিনার দোসররা ছোট-বড় তার কাছের লোকদের এমন অবাধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের টাকা লুটপাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এখন দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে এ দুর্নীতিবাজ লোকদের খবর আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে কামাই করে আবার সেই টাকা খরচ করে হঠাৎ হঠাৎ অন্ধকারে মিছিল করে দেশে ফেরার জানান দিচ্ছে। দেশের মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। আওয়ামী নামধারী কোনো দল এসে আর ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবে না। দেশের বড় বড় কোম্পানি বেক্সিমকো, এস আলম গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, নাসা গ্রুপসহ ব্যবসার নামে টাকা কামাইয়ের অবৈধ কারবার করে দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করে দিয়েছে।
আমরা এর বিচার দ্রুত চাই। সাথে সাথে এদের শিল্প-কারখানাগুলো প্রশাসক নিয়োগ করে চালানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এখানে হাজার হাজার লোক চাকরি করে। উৎপাদিত পণ্য দেশে ব্যবহার করে বিদেশেও রফতানি করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা আসে। তাই মিল-কারখানা চালু রাখতে পারলেই দেশের লাভ।
আগস্ট বিপ্লবের পর ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ে স্বৈরাচার হাসিনা তল্পি-তল্পাসহ তার প্রিয় দেশে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে। দেশে যে বিপর্যয় হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। দুনিয়ার কোনো নজির নেই যে, দেশের সব সংসদ সদস্য দুর্নীতির কারণে দেশ থেকে পালায়। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিপ্লবের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার না হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার হয়ে ২৪ জন উপদেষ্টা নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। ভুল-ভ্রান্তি থাকলেও লুটপাট, চুরিচামারি, ব্যাংক ডাকাতি তারা না করে দেশকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। জনগণ তাদের সহযোগিতা করছে। গত পাঁচ মাসে উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠন, দুদক পুনর্গঠন, প্রশাসন কমিশন গঠন, পুলিশ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপর স্বীকার করতেই হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটেনি। সব বিভাগে পতিত সরকারের দোসররা এখনো তাদের কাজ আগের মতোই করার চেষ্টা করছে। আমি আগেই বলেছিলাম, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহ করার সাথে জড়িত সামরিক-বেসামরিক লোকদের তাৎক্ষণিক ছাঁটাই করে সাহসের সাথে আল্লাহর ওপর ভরসা করে দেশ ভালোভাবে চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মুসলিম দেশগুলোর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কয়েকদিন পূর্বে সিরিয়াকে স্বৈরাচারমুক্ত করার জন্য বড় ভূমিকা রেখেছে। সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার প্রভাব-বলয় থেকে মুসলিম দেশগুলোকে স্বাধীন করার চেষ্টা করছে। ইরান, সৌদি আরবের সম্পর্ক ভালোর দিকে। আমরা মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য চাই। সম্পদের দিক থেকে মুসলিম দেশগুলো ভালো অবস্থায় আছে। ভৌগোলিক অবস্থায়ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা আশাব্যঞ্জক। তাই আমরা আশাবাদী, মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেয়ার পদক্ষেপ নিতে পারে। নিজেকে আল্লাহর রঙে রঙিন করতে পারলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহর রহমতে আমরাই বিজয়ী হব, ইনশাআল্লাহ।
এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশিরা দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এলে পতিত স্বৈরাচারের মোকাবিলা করেই দেশটাকে সোনার বাংলা করতে সক্ষম হব। জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইতোমধ্যেই তার বিভিন্ন জেলায় বিশাল বিশাল সমাবেশে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের একপেশে না হয়ে স্বাধীনভাবে জনগণের ভাষায় মতামত পেশ করার আহ্বান করেছেন। গত ২০ জানুয়ারি সোমবার জাতীয় দৈনিক সংগ্রামের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জমকালো অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের সামনে বলিষ্ঠ বক্তব্য প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির মতো বড় দলের নেতাদের আহ্বান জানাবো- তাদের গুটিকয়েক লোকের ভূমিকায় যেন দলের ক্ষতি না হয়, তার দিকে নজর রাখা। গত কয়েকদিন পূর্বে ঢাকার নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা চাইলে তারা ছাত্রদলের ছেলেদের ধরে পুলিশে দেয়। ছাত্ররা আবার পুলিশের কাছ থেকে তাদের জোর করে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। খুশির খবর তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুঝতে হবে জনগণ আর বোকা নেই। তাই ভালো লোকেরাই দেশ চালাবে, কোনো সন্দেহ নেই। সজাগ থাকতে হবে।
আমরা চাঁদাবাজি, দখলবাজির বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ করে দেশের শাসন কাজ পরিচালনা করতে চাই। সৎ, যোগ্য জবাবদিহির মানসিকতাসম্পন্ন লোক তৈরি করে সব বিভাগে স্বৈরতন্ত্রের উৎখাত করে ভালো মানুষের দেশ গড়তে চাই।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।