বাংলার জমিনে ইনসাফ কায়েমের লড়াই চলবেই : ডা. শফিকুর রহমান
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৩০
গত ১৮ জানুয়ারি শনিবার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান
সোনার বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা দুর্নীতি এবং দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে বাংলার জমিনে ইনসাফ কায়েমের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যতক্ষণ না দেশ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত হবে, ততক্ষণ আমাদের লড়াই চলবে। গত ১৮ জানুয়ারি শনিবার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে রাজশাহী মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর ড. কেরামত আলী। মহানগর সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শাহাদত হোসাইন ও জেলা সেক্রেটারি গোলাম মুর্তুজার যৌথ পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি যারা চাঁদাবাজি, দখলদারি এবং মামলা বাণিজ্য করছেন; দয়া করে এ কাজটা করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। মানবতা অপমানিত হবে, লাঞ্ছিত হবে। বন্ধু এ কাজটা ছেড়ে দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এ কাজগুলো ছেড়ে দেন। অফিস-আদালতে যারা ঘুষ বাণিজ্য করেন, আবার মামলা বাণিজ্য অনেকে করেন, তাদের আন্তরিক অনুরোধ, ভাই এ কাজগুলো করিয়েন না। যদি আমাদের বিনয়ী অনুরোধ না মানেন, তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত, যুদ্ধ আমাদের শেষ হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সন্তানরা স্লোগান দিচ্ছে এখনোÑ “আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ”। তিনি আবার মাঠের উদ্দেশে বলেন, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ’, মাঠ থেকে সম্মিলিত জবাব আসে ‘শেষ হয়নি যুদ্ধ’। এ লড়াই চলবেই, ইনশাআল্লাহ। যতক্ষণ না ইনসাফ এই জমিনে কায়েম হয়। ইনসাফ কায়েমের জ্ঞান একমাত্র আল কুরআন দিতে পারে। আর কিছুই দিতে পারে না। এ কুরআনের শাসন সকল ধর্মের সকল দলের, সকল বর্ণের মানুষের জন্য একমাত্র ইজ্জতের গ্যারান্টি। কুরআনের শাসন কায়েমের মধ্য দিয়েই আমরা একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। দুর্নীতি এবং দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।
কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মণ্ডল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর আবু জার গিফারি, নাটোর জেলা আমীর ড. মীর নূরুল ইসলাম. নওগাঁ জেলা আমীর খন্দকার মো. আব্দুর রাকীব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস রাজশাহী মহানগর সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ আবুল বাশার, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রাজশাহীর আহ্বায়ক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী প্রমুখ।
স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, রাজশাহী জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল খালেক, ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, রাজশাহী মহানগর সভাপতি মো. শামীম উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নওসাজ জামান, জামায়াতের রাজশাহী মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর সভাপতি অধ্যাপক আবদুস সামাদ, রাজশাহী জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক, জেলার শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান, রাজশাহী মহানগরী সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, শিবিরের রাজশাহী জেলা পূর্ব সভাপতি মো. রুবেল আলী, রাজশাহী জেলা পশ্চিমের সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন, রাজশাহী বিভাগের ওলামা সেক্রেটারি মাওলানা মো. রুহুল আমিন, রাজশাহী জেলা মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাওলানা এফ.এম ইসমাইল আলম, জামায়াতের রাজশাহী মহানগর যুব বিভাগীয় সেক্রেটারি সালাহ উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল খালেক। উদ্বোধন করেন জুলাই বিপ্লবের রাজশাহীর শহীদ সাকিব আনজুমের গর্বিত পিতা মাইনুল হক। এর আগে মাওলানা আরিফুল ইসলামের অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রত্যয় শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে এসে জানতে পারলাম- কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা কোল্ড সংরক্ষণের খরচ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। হুঁশিয়ার করে বলতে চাই দেশের মানুষ আর কোনো জুলুমকারীকে সহ্য করবে না। এক জুলুমবাজ পালিয়েছে। নতুন কোনো জালেম সামনে এলে তাদেরও তাড়িয়ে দেবো। তিনি আরো বলেন, দেশ থেকে জালেম পালিয়েছে, জুলুম পালায়নি। জুলুম থেকে বাঁচতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা কারো কথা বলতে দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে কেউ বললেই খুন গুম করেছে, আস্তে করে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা বিচারব্যবস্থা-শিক্ষাব্যবস্থাসহ সবকিছু ধ্বংস করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতিশোধ নিয়ে পালিয়েছে। এখন আমরা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে চাই। এজন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ চাই। এ বাংলাদেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। তিনি আগামী দিনে ইসলামের দাওয়াত প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। এমনকি রাজশাহী থেকে ইসলামের বিজয় শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। এরপর আমীরে জামায়াত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. কায়সার আহমেদ অডিটরিয়ামে পেশাজীবী সমাবেশ এবং মহিলা রুকন সম্মেলন ও ব্যবসায়ীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।