বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন : ১৫ জানুয়ারির মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে ঘোষণাপত্রের দাবি
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২১
স্টাফ রিপোর্টার: ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশন (ঘোষণাপত্র) এবং ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার খুনি হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয়- এ দাবিতে গত ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিলেন এ সময়ের সাহসী ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার এলাকা। এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের ফাঁসির দাবি তোলেন উপস্থিত ছাত্র, শহীদ পরিবারের স্বজন ও জনতা। ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, হাসিনার ফাসি দে’ স্লোগানে মুখরিত হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখপাত্র সামান্থা শারমিন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, রিফাত রশিদসহ জুলাই অভ্যুত্থানে কয়েকজন শহীদের স্বজনরা।
উমামা ফাতেমা বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা পালানোর পাঁচ মাস পর কেন আমাদের আবার শহীদ মিনারে একত্র হতে হলো। গত ৫ মাসে সরকারের কী প্রোক্লেমেশন ঘোষণার সুযোগ হয়নি?
উমামা ফাতেমা আরো বলেন, তারা কী এতই ব্যস্ত ছিল, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র করার সময় পাননি? এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ উদ্যোগটি গ্রহণ করি। জুলাইয়ে যে যোদ্ধারা জীবন দিয়ে রাস্তায় যুদ্ধ করেছিল, তাদের সেফটি আমাদের দিতে হবে। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়। জুলাই এখনো যায় নাই। আমরা জুলাই শেষ হতে দেব না। ’৭১ এ, ’৯০ এ বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু আমরা ’২৪ কে ব্যর্থ হতে দেব না।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ঢাকায় আজকের মার্চ ফর ইউনিটিতে আসার সময় সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনো হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করেন? বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা কেন? শাপলা চত্বরের বিচার কেন আজো হচ্ছে না? সবকিছুতেই আমরা সরকারের তরফ থেকে টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার পতনের পাঁচ মাসেও কেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এই ব্যর্থতার দায় কার? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ইউনূস সরকার যেন সাবধান হয়ে যান।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট স্বাধীনতার পর অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ছিল না। আমরা ঘোষণাপত্র পাঠের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু সরকার নিজ দায়িত্বে সেটি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাই আমরা চাই, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এ সময় পর্যন্ত আপনারা জেলায় জেলায়, পাড়া-মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন, তাদের কথা শুনবেন। ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী ও ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আপনাদের লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। আপনাদের সামনে আগামী ১৫ জানুয়ারিতে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে পুনরায় সমাবেশ হবে, ইনশাআল্লাহ।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যারা আমাদের ভাইকে মেরেছে, সেই খুনিদের বিচার হতে হবে। আমরা যদি এ শহীদ ভাইদের খুনিদের বিচার করতে না পারি, তাহলে আমরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারব না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোয় এখনো খুনির দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। সচিবালয় হোক বা যেকোনো জায়গা থেকে ষড়যন্ত্র করলে আমরা তাদের উৎখাত করে ছাড়বো।
সিদ্ধান্ত বদলের কারণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বদলের কারণ কী? এ প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমে বলেছেন, মূলত এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সংবিধান স্থগিত করার কথা বললে সরকারের অবস্থান কিছুটা দুর্বল হতো। অন্যদিকে ঘোষণাপত্র বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেয়নি বিএনপি। যে কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র কর্মসূচি দেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের। সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি বাদ দেয়ার জন্য সরকারকে এক ধরনের বার্তাও দেয়া হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। ওই সূত্রটির দাবি, গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার রাতে বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের শীর্ষনেতৃত্বের সাথে লন্ডন থেকে টেলিফোনে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরই দফায় দফায় বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা এ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি স্থগিত করলেও ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। সরকারের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের বিষয়টি প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।