গ্রাফিতি বাংলাদেশ
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০
যখন চারদিকে মৃত্যু আর মৃত্যু লাশ আর লাশ
যখন দিকে দিকে টগবগে বিক্ষোভ বিস্ময়
প্রতিরোধের উত্তাপে ফুটন্ত বিপ্লব
সেই জুলাই বিপ্লবের আগুনঝরা দিন!
হৃদয় নিংড়ানো রঙের আঁচড়ে
তখনই জন্মালো গ্রাফিতি!
এমন এঁকেছে কি পৃথিবীর কোনো বিপ্লবের তুলি!
ঢাকার প্রতিটি দেয়াল গ্রাফিতির
একেকটি বর্ণিল পৃষ্ঠা
প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিশাল ক্যানভাস
হৃদয়গ্রাহী স্লোগান, কবিতার বারুদ যেন
কোটি কণ্ঠের সমস্বর!
বৈষম্যহীন আন্দোলনের এ এক শিল্পীত রূপ!
শিল্পকর্মে জ্বলে উঠলো একেকটি বাক্য
একেকটি স্লোগান, তীব্র তীক্ষè বুলেট,
বিঁধে গেল ফ্যাসিস্ট স্বৈরিণীর বুকের শিরায় শিরায়
আগ্নেয়াস্ত্র পরাজিত এসব গ্রাফিতির
রেখার কাছে!
রাজপথের দেয়াল প্রাসাদের পাঁজর এবং
পিচপথের কালো দেহে
গ্রাফিতির সমগ্রতায় জড়ানো সাহসের প্রাণ!
চোখ উল্টিয়ে জগৎবাসী দেখলো-
দুনিয়ার গ্রাফিতির রাজধানী বাংলাদেশ!
আমাদের শিশুদের হাতেও মাখামাখি গ্রাফিতি-বুলেটের রঙ
কচিকণ্ঠে মুহুর্মুহু স্লোগান-
স্টেপ ডাউন হাসিনা
ক্ষীণহাতে গ্রাফিতির তুলি
যেন রাঙাবে পৃথিবীর মুখ!
এ এক নতুন গল্প, নতুন পাণ্ডুলিপি
প্রথম দেখা পিচঢালা রাস্তায়, রাজপথে
তারপর দেয়ালে দেয়ালে সর্বত্র!
এমনকি ছাত্র যুবাদের বুকে পিঠে মুখেও
গ্রাফিতি উৎসব
হৃদয়রঙ বুঝি উৎকীর্ণ দেয়ালের বুকে।
প্রাণের সবটুকু ঢেলে পিষে দিতে চাইলো স্বৈরাচারীর
নৃশংস পদভার!
মানুষের বুক থেকে ক্ষোভ লাফিয়ে উঠলো
দেয়ালে, প্রাসাদের পাঁজরে, পথপ্রান্তের শরীরে, বিপণিবিতানের শাটারে
একেকটি মুখ যেন একেকটি তিতুমীর
একেকটি বালক যেন একেকজন বখতিয়ার
একেকটি যুবক একেকজন খানজাহান
শাহজালালের পাগড়ির ভেতর থেকে যেন
বেরিয়ে এলো বীরত্বের নিশান!
কোনো কোনো দিন শহর শূন্য হলেও দেয়ালে জাগ্রত এই বিস্ময় গ্রাফিতি
দিনভর সারারাত এবং সারাটিক্ষণ জুড়ে ছড়িয়ে দেয় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ-আগুন
জগতে প্রতিবাদের ইতিহাসে এ এক নতুন হাতিয়ার!
পৃথিবীর চোখ থেকে উড়ে এলো বিস্ময়!
তরুণ বিপ্লবীর অবিশ্বাস্য সাহসী উচ্চারণ- পেছনে পুলিশ সামনে স্বাধীনতা!
সহসা কেঁপে উঠলো বাংলাদেশের বুক
এবং একটি মাস তার শরীর ছাড়িয়ে দীর্ঘ হলো ৩৬ জুলাই
হেসে উঠলো গ্রাফিতির আনন্দে!
এমন বিস্ময় জাগানিয়া বিপ্লবের সচিত্র উত্তাপ
একবারই দেখলো পৃথিবী!
কবিতা গানে গ্রাফিতি হলেন নজরুল-
কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙে ফেল কররে লোপাট
রক্ত জমাট
শিকল পুজার পাষাণ বেদী
আরও আরও নজরুলীয় বুলেট-
দুর্গমগিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার
কিংবা বল বীর বল চির উন্নত মম শির
এভাবেই কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে ছিন্নভিন্ন হলো পাষাণীর বুক
কবিতা হয়ে উঠলো জগতের ফ্যাসিস্ট পতনের নান্দনিক হাতিয়ার!
প্রতিবাদ প্রতিরোধ এবং হৃদয়চেরা ধ্বনি আঁকা
গ্রাফিতির দেয়াল ফ্যাসিস্ট স্বৈরিণীর মরণচিহ্ন
তার সমস্ত বাণী বচন এবং ষড়যন্ত্রের জাল
মুহূর্তে মুছে দেবার অনন্য রঙ
প্রতিটি গ্রাফিতি তার পালিয়ে যাওয়ার ভয়ংকর নোটিশ!
গ্রাফিতির মতো এমন অস্ত্র আমি আর দেখিনি!