আমনের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০
মা. আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা (খুলনা) : খুলনার পাইকগাছায় চলতি আমন মৌসুমে সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক কারণে দুই হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ কম হলেও বিগত বছরগুলোর চেয়ে ফলন বেড়েছে বলে কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৫ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে আমন ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছু কিছু এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভালো ফলন হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষক লাভবান এবং খুশি রয়েছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে শতভাগ আমন ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলায় ১৭ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবেÑ এমন সম্ভাবনা থাকলে এবং মৌসুমের শুরতেই অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয় আমন বীজতলার। এছাড়া রাড়ুলী ও চাঁদখালীসহ কিছু কিছু এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর পাশাপাশি ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে দেলুটির ২২নং পোল্ডারের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও প্রাকৃতিক কারণে চলতি মৌসুমে দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা সম্ভব হয়নি। তবে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ১৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়। যার মধ্যে উফশী প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর এবং হাইব্রিড ৫০০ হেক্টর। উফশীর মধ্যে রয়েছে বিআর-১০ দুই হাজার হেক্টর, বিআর-১১ ১৩০ হেক্টর, বিআর-২৩ তিন হাজার ৯শ’ হেক্টর, ব্রি ধান-৩০ দুই হাজার ৪শ’ হেক্টর, ব্রি ধান-৪৯ আড়াই হাজার হেক্টর, ব্রি ধান-৫২ নব্বই হেক্টর, ব্রি ধান-৭৩ দেড়শ হেক্টর, ব্রি ধান-৭৫ এগারো’শ হেক্টর, ব্রি ধান-৭৬ পঞ্চাশ হেক্টর, ব্রি ধান-৮৭ দুই হাজার দুইশ’ হেক্টর, ব্রি ধান-৯৩ দুইশো হেক্টর, ব্রি ধান-৯৫ একশো সত্তর হেক্টর, ব্রি ধান-১০৩ পনেরো হেক্টর, বিনা ধান-১৭ ছয়শো হেক্টর, বিনা ধান-২২ পনেরো হেক্টর, বিনা ধান-২৩ নব্বই হেক্টর। এছাড়া হাইব্রিডের মধ্যে রয়েছে ব্রি হাইব্রিড-৬০৪ একশ’ হেক্টর, ব্রি হাইব্রিড-৬০৬ একশ’ হেক্টর, ধানী গোল্ড ২শ’ হেক্টর ও ৭০০৬ একশ’ হেক্টর। অন্যান্য মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা যায়নি। বীজতলা ও রোপণকৃত আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও কৃষক যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে, এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে নগদ অর্থ ও বীজ সহায়তা প্রদান করা হয়। আবাদ কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা অনেক খুশি রয়েছে। শিববাটী এলাকার কৃষক তপন কুমার মণ্ডল বলেন, এ বছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে বিআর-১০ এবং বিআর-২৩ জাতের আমন ধানের আবাদ করেছিলাম। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর আমন ধান আবাদ করে অনেক বেশি লাভবান হয়েছেন বলে জানান বান্দিকাটীর কৃষক মিজানুর রহমান। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে অত্র উপজেলায় ১৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছুটা কম আবাদ হলেও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকরা আমন ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ৬৫ ভাগ ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে শতভাগ ফসল কৃষকের ঘরে উঠে যাবে উল্লেখ করে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, চলতি মৌসুমে উফশী হেক্টর প্রতি ৪.৬ মেট্রিক টন এবং হাইব্রিড হেক্টর প্রতি ৫.৯ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।