দ্য ইকোনমিস্টের তালিকা

স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ‘চব্বিশের’ বর্ষসেরা বাংলাদেশ


২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০০

সোনার বাংলা ডেস্ক : এক যুগের বেশি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। নিহত ৬ লাখের মতো মানুষ। স্বৈরশাসনের পতনের দাবিতে শুরু হওয়া সেই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের শেষমেশ অবসান ঘটেছে। চলতি মাসেই সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে হটিয়ে দেশটির শাসনভার গ্রহণ করেছেন বিদ্রোহী ইসলামপন্থী যোদ্ধারা। আসাদের দুই যুগের নিষ্ঠুর শাসনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখো মানুষ। তবে সেই সিরিয়াকেই টপকে চব্বিশের (২০২৪ সাল) বর্ষসেরা দেশের মুকুট বাংলাদেশের।
এ বছরেরই ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আরেক স্বৈরশাসক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও নতুন দিকে দেশের যাত্রা শুরু করার বিষয়টিই বাংলাদেশকে তালিকার শীর্ষে নিয়ে এসেছে।
প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও বর্ষসেরা দেশ নির্বাচন করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। তারাই ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচিত করেছে। গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা।
বর্ষসেরা দেশের তালিকাসংবলিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরা ধনী, সবচেয়ে সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারীÑ এমন সব বিবেচনায় নয়; বরং গত ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, সেই বিচারে সেরা দেশ নির্বাচন করা হয়েছে।
সেরা দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে জোরালো বিতর্ক হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরে বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। রানারআপ সিরিয়া। এ বছর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ও সিরিয়া ছাড়াও অন্য দেশগুলো হলো পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা।
বাংলাদেশ সম্পর্কে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, তারাও এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। গত আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে ১৫ বছর ধরে শাসন করেন। দেশের স্বাধীনতার একজন নায়কের কন্যা হাসিনা। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরে দমন-পীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলকালে প্রতিহিংসামূলক সহিংসতার ইতিহাস আছে। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ‘দুর্নীতিপরায়ণ’। ‘ইসলামী চরমপন্থা’ একটি হুমকি। তবে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছে। এটি ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এ সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।
দ্য ইকোনমিস্ট আরও বলেছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করা দরকার। কবে নির্বাচন হবে তা-ও নির্ধারণ করতে হবে। আদালতগুলোর নিরপেক্ষভাবে কাজ করা ও বিরোধীদলগুলোর সংগঠিত হওয়ার সময় পাওয়ার বিষয় প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনোটি সহজ হবে না। তবে একজন অত্যাচারী শাসককে হটানো এবং আরও উদার সরকার গঠনের পথে এগোনোর জন্য বাংলাদেশ আমাদের এ বছরের সেরা দেশ।’
দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, দেশের স্বাধীনতার একজন নায়কের কন্যা শেখ হাসিনা। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু পরে দমন-পীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়া ক্ষমতাচ্যুত আসাদের সিরিয়াকে এ বছর সেরা দেশের তালিকায় রানারআপ করা প্রসঙ্গেও যুক্তি তুলে ধরেছে সাময়িকীটি। তারা বলেছে, ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আসাদ পরিবারের দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর স্বৈরশাসন (বাশার আল-আসাদ ও তাঁর বাবা হাফিজ আল-আসাদের শাসন) থেকে মুক্তি পেয়েছে সিরিয়াবাসী। গত ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় এ দেশে ছয় লাখের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
স্বৈরশাসক আসাদ তার বিরোধীদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন ও ব্যাপক জুলুম-নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছেন। পাশাপাশি অর্থ কামাতে মাদক ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। তার পতনে সিরীয়বাসী উৎফুল্ল এবং এটি আসাদের ‘স্বৈরাচার-সমর্থক’ রাশিয়ার জন্য উপহাসের। ইরানের জন্যও উপহাসের এ ঘটনা।