মুর্শিদ-উল-আলম-এর কবিতা : ছত্রিশ জুলাই হয়


২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০০

তোমার তৃষ্ণায় সরবত দিয়েছি যদিও চেয়েছ পানি
তোমাকে দিয়েছি আত্মাভূমি বিনা শর্তে
স্বজল চাহনি তোমার করেছে ঘায়েল
মা-বাবাহারা কোনো মানুষকে প্রত্যাখ্যান করা কত কঠিন, সে শুধু আমিই জানি।
বিনিময়ে ঘুম কেড়ে নিলে কোটি কোটি মানুষের
জহির রায়হানের গুম তোমার উত্তরাধিকার
আমি বিস্মৃত হলেও, তুমি তো ফিরিয়ে এনেছ
গুমের সংস্কৃতি
ঘুম কেড়ে নিলে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপের মায়ের।
ঘুম কেড়ে নিলে শিশুদের রোদের, মাতার স্নেহের, ভ্রাতাদের সাহসের, বাবাদের ভরসার।

পড়শি শকুন তোমার বিশ্বস্ত সুহৃদ
আমার আস্থাকে ছিঁড়েফুঁড়ে মেতে ওঠো তার স্পর্শে
হয়ে ওঠো বীভৎস ফ্রাঙ্কোস্টাইন
হয়ে ওঠো জিন, ভূত, পেত্নী
হয়ে ওঠো অদম্য ড্রাকুলা।

তোমার লুকানো ড্রাকুলার রক্তচোষা জিভ বের হয়-
আয়নাঘর, বায়নাঘর, রান্নাঘর, ব্যাংক, মুদিপাড়া সর্বত্রই লুটেপুটে চেটে চেটে অমসৃণ করে দেয়।

নির্ঘুম ভীতির জামা পরে তিতুমীরের বাংলাদেশ!

নির্ঘুম ষোলোটি বছরে দেখেছি
তুমি তোমার চাটার দল
দাঁতাল আঁচড়ে বিবস্ত্র করেছ ক্ষত-বিক্ষত করেছ
মা মাটি মানুষ কোলাহল প্রাণস্পন্দন ও ঐতিহ্য।

সব সয়ে সয়ে নুয়ে পড়ি।
দুদণ্ড শান্তির জন্য পাইনি তো কোনো বনলতা সেন! কোথায় জীবনানন্দ!

অবচেতনে ডাকাতদের গ্রামের কথা ভেবে ভেবে বিড়বিড় করেছি, আল মাহমুদ!
জেগে উঠুক আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ছুটে আয় কালা পাহাড়, গজনীর সুলতান মাহমুদ, কাজী নজরুল ইসলাম!
বখতিয়ার খিলজির ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনার প্রত্যয়ে
আরো কত কত নির্ঘুম প্রলাপ!

একদিন জেগে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়
জেগে ওঠে ছাত্র-নাগরিক
স্লোগানে স্লোগানে কেঁপে ওঠে রাজপথ
গুলিতে গুলিতে অট্টহাসি করে ফ্যাসিস্ট প্রেতাত্মা রক্তের উত্তাপে ভীত মায়েরা সাহসী হয়ে ওঠে
শিশুরা সাহসী হয়ে ওঠে
মানুষ সাহসী হয়ে ওঠে।

আবু সাইদ, মুগ্ধ, হৃদয় চন্দ্র, নাইমা সুলতানারা
জেগে ওঠে আশা হয়ে
জেগে ওঠে স্বপ্ন হয়ে
জেগে ওঠে জীবন বিলায় ইতিহাস হয়ে।

যুদ্ধ হয়, রক্ত ঝরে
প্রতিরোধে প্রতিবোধে হয় প্রতিহত স্বৈরাচার!

স্বাধীনতা আসে, ঘুম আসে, শান্তি নামে
ছত্রিশ জুলাই হয়।